কিডনিতে পাথর-সমস্যা ও প্রতিকার।

3
কিডনি বা বৃক্ক মানুষের দেহের গুরত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। মানুষের দুটি কিডনি থাকে যেগুলোর প্রতিটি পিঠের দুই পাশে কিছুটা নিচের দিকে অবস্থিত। কিডনি দেহের রক্তকে পরিশোধিত করে ও দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাসনে সাহায্য করে। আর এই কিডনিরই বিভিন্ন সমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে কিডনিতে পাথর জমে যাওয়া। কিডনির পাথর মূলত মানুষের মূত্রে সৃষ্ট বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ থেকে সৃষ্ট। যখন মানুষের দেহে মূত্র কম উৎপন্ন হয় আর অনেক বেশি পরিমাণে বর্জ্য তৈরি হয়ে থাকে, তখন এই রাসায়নিক পদার্থগুলো জমে ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের আকার ধারণ করে।

কিডনি পাথরের প্রকারভেদ

কিডনির পাথর বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকা ও তাদের রাসায়নিক গঠনও ভিন্ন। আর এটির উপর ভিত্তি করেই নির্ধারণ করা হয় যে রোগীর কি ধরণের চিকিৎসা প্রয়োজন। পৃথিবীর অন্তত ১০ ভাগ মানুষের জীবনে কিডনিতে পাথর জমার ঘটনা ঘটতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক কি কি ধরণের পাথর কিডনিতে তৈরি হতে পারে-kidney-transplant-india
(১) ক্যালসিয়াম দিয়ে গঠিত কিডনি পাথর সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আর এগুলো মূলত গঠিত হয় ক্যালসিয়ামের বিভিন্ন যৌগ ক্যালসিয়াম অক্সালেট কিংবা ক্যালসিয়াম ফসফেট দ্বারা।
(২) মূত্রে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে তৈরি হয় ইউরিক এসিডে তৈরি পাথর। পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ বা মাংসতে প্রচুর পরিমাণে পিউরিন থাকে। এই পিউরিনের কারণে মূত্রে ইউরিক এসিডের মারা বেড়ে যায়।
(৩) জিনগত সমস্যার কারণে সিস্টিন পাথর তৈরি হয় কিডনিতে।
(৪) সংক্রমিত কিডনি ও মূত্রথলি থেকে সৃষ্ট Struvite পাথর।

আা

লক্ষণ

কিডনিতে জমে যাওয়া পাথর আকারে খুব ছোট হলে বেশিরভাগে সময়ই সেটি মূত্রের সাথে বের হয়ে যায়। মাঝারি থেকে বড় আকারের কিডনি পাথরগুলো কিডনি থেকে মূত্রনালির দিকে অগ্রসর হতে থাকে ও আটকে যায়। এর ফলে পিঠের দু’দিকেই প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। ধীরে ধীরে ব্যথা সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে থাকে। ব্যথা ২০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মাঝে আছে বমি, ডায়রিয়া, জ্বর, প্রস্রাবের সাথে রক্তপাত ও মূত্রত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া করা।

3

কিডনিতে পাথর তৈরি হয় কেন?

পরিবারের একজন সদস্যের কিডনিতে পাথর হলে সেই পরিবারের অন্য সদস্য বা তার বংশধরদের কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। প্রচুন পরিমাণ লবণ, চিনি কিংবা চর্বিসমৃদ্ধ খাবার কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, মূত্রথলিতে সংক্রমণ, স্থূলতা, অন্ত্রের বিভিন্ন রোগের কারণেও কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে।

চিকিৎসা

কিডনির পাথর দূর করার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপ হচ্ছে, কিডনি, মূত্রথলি বা মূত্রনালিতে জমে থাকা পাথর অপসারণ করা। দ্বিতীয় ধাপ, ব্যথার উপশম ঘটানো। তৃতীয়, ভবিষ্যতে যাতে আবারো পাথর না জমতে পারে সেই বিষয় পদক্ষেপ নেয়া। পাথর খুব ছোট হলে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে বলা হয় যাতে পাথরটি মূত্রের সাথে বেরিয়ে যেতে পারে। হোমিওপ্যাথি ওষুধ সেবন করতে বলা হয়। আর পাথর যদি বেশ বড় আকারের হয় সেক্ষেত্রে অনেক সময় অস্ত্রোপচার করতে হয়।

করুন প্রতিরোধ

দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে কিছু ব্যপার মেনে চললে খুব সহজেই কিডনিতে পাথরের সমস্যা এড়ানো যেতে পারে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা হচ্ছে অন্যতম প্রধান উপায়। এছাড়া কিডনিতে যদি ক্যালসিয়াম গঠিত পাথর তৈরি হয় সেক্ষেত্রে প্রতিদিনের খাবার থেকে লবণের পরিমাণ কমাতে হবে ২০০ মিলিগ্রাম করে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। ভিটামিন সি কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে, তাই এই ভিটামিনটির ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়া শরীরের ওজন বেড়ে গেলে তা কমানোর ব্যপারে সচেতন হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *