আপনার প্রসব শুরু হলে আপনি তা বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারবেন, তবে যদি কোন প্রশ্ন থাকে অবশ্যই আপনি ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
প্রসব শুরুর প্রধান চিহ্ন হচ্ছে জরায়ুতে নিয়মিত এবং তীব্র সঙ্কোচন। সাথে সাথেই জরায়ুমুখে “শো” (যখন জরায়ুমুখ থেকে পিচ্ছিল পদার্থ বেরিয়ে আসে) দেখা যায়। অন্যান্য চিহ্নের মধ্যে আছে – পানি ভাঙ্গা, কোমর ব্যাথা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া এবং প্রস্রাব-পায়খানার বেগ আসা (বাচ্চার মাথা এসময় অন্ত্রনালীতে চাপ দেয়)।
প্রসবের সময় জরায়ু কিছু সময় পরপর শক্ত হয় আবার কিছু সময় শিথিল থাকে। প্রসবের আগে গর্ভাবস্থা, বিশেষত গর্ভাবস্থার শেষভাগেও এরকম হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হলে এতে ব্যাথা হয় না এবং তখন একে ‘ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন’ বলে।
যখন সঙ্কোচন নিয়মিত, তীব্র এবং ব্যাথাযুক্ত হবে এবং ৩০ সেকেন্ড এর বেশী স্থায়ী হবে তখন বুঝতে হবে প্রসব শুরু হয়েছে। আপনার সঙ্কোচনগুলি এসময় আরও ঘনঘন আসতে থাকবে।
সঙ্কোচনের সময় জরায়ুর মাংসপেশীগুলি ছোট হয়ে আসে এবং ব্যাথা বাড়তে থাকে। এসময় পেটে হাত দিলে জরায়ুর সঙ্কোচন অনুভব করা যায়। সঙ্কোচন শেষে মাংসপেশি শিথিল হয়, ব্যাথা কমে যায় আর পেটে হাত দিলে জরায়ু নরম হয়ে আসা বোঝা যায়। সঙ্কোচনের মাধ্যমে জরায়ুর মধ্যে বাচ্চা নিচের দিকে নামতে থাকে এবং বের হবার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।
যখন প্রতিটি সঙ্কোচন ৩০-৬০ সেকেন্ড ধরে থাকবে আর প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর আসতে থাকবে, তখন আপনার ডাক্তারকে যোগাযোগ করুন এবং উপদেশমত ব্যবস্থা নিন।
এছাড়াও আপনার নিচের চিহ্নগুলির কোনটি থাকতে পারেঃ
কোমরে ব্যাথা
কোমর বা পিঠে ব্যাথা হতে পারে, যেমনটি অনেকের মাসিকের সময় হয়ে থাকে।
“শো’
গর্ভাবস্থায় জরায়ুমুখে একটি শ্লেষ্মার ছিপি থাকে। প্রসবের ঠিক আগমুহুর্তে এটি যোনি দিয়ে বের হয়ে আসে। একেই “শো” বলে। এটী নির্দেশ করে যে জরায়ুমুখ প্রসবের জন্য প্রস্তুত।
এটি একসঙ্গে বা খন্ড খন্ড অবস্থায় বেরিয়ে আসতে পারে। এর রঙ গোলাপি কেননা এতে সামান্য রক্ত থাকতে পারে। যদি শো এর সঙ্গে তুলনামুলক বেশি রক্ত বেরিয়ে আসে তবে এটি চিন্তার কারন হতে পারে। অনেকের ‘শো’ এর পরপরই প্রসব আরম্ভ হয়, অনেকের কদিন পড়ে হয়। অনেক নারী শো হওয়া বুঝতেও পারেন না।
পানি ভাঙ্গা
অনেক নারীর প্রসবের সময় পানি ভাঙ্গে, তবে প্রসবের পূর্বেও অনেকের পানি ভাঙতে পারে। মায়ের জরায়ুর ভেতর ‘এ্যামনিওটিক স্যাক’ নামে একটি থলেতে বাচ্চা বড় হতে থাকে। বাচ্চা প্রসবের পূর্ব মুহুর্তে এই থলেটি ভেঙ্গে যায় আর এর মধ্যের এ্যমনিওটিক পানি বের হয়ে আসে। একেই সোজা বাংলায় ‘পানিভাঙ্গা’ বলে।
পানি ভাঙলে তা চুইয়েও পড়তে পারে বা হঠাৎ অনেক পানি বের হতে পারে। এজন্য হাতের কাছে একটি স্যানিটারি টাওয়েল রাখতে পারেন অথবা বিছানায় প্লাস্টিকের শিট বিছিয়ে নিতে পারেন।
এ্যমনিওটিক পানির রঙ স্বচ্ছ বা খড়ের মতন হাল্কা রঙ হতে পারে। শুরুতে এর কিছুটায় রক্ত মিশ্রিত হতে পারে। যদি এতে দূর্গন্ধ থাকে বা যোনি থেকে রক্তপাত হয় তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
প্রসবের আগেই পানি ভাঙলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এসময় বাচ্চার ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।