গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এসবের মধ্যে ঘুম না হওয়া একটি বড় সমস্যা। ভালো ঘুম না হলে শরীর এবং মন কোনটাই ভালো থাকে না। আবার ঘুমের যেসব ওষুধ আছে গর্ভাবস্থায় সেসবের ব্যবহার একেবারেই নিরাপদ নয়। তাই গর্ভাবস্থায় ঘুম না হওয়া একটি বড় ধরনের সমস্যা। গর্ভাবস্থায় ঘুম না হওয়ার বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন-
** গর্ভাবস্থায় বারবার প্রস্রাব হয়। এতে একটানা ঘুম ব্যাহত হয়।
** গর্ভকালে বুক জ্বালা দেখা দেয়। বুক জ্বললে কারও পক্ষে ঘুমান সম্ভব নয়। এ সময়ই খাদ্যনালীর নিচের স্ফিংটার ঢিলা হয়ে যায় ফলে এসিডই খাদ্যনালীর মধ্যে চলে এসে বুক জ্বালা ঘটায়।
** গর্ভকালীন সময়ে হাত-পা ব্যথা করে। অনেক সময় পায়ের মাংসপেশিতে খিল ধরে। ফলে ঠিকমতো ঘুম আসতে চায় না।
** গর্ভাবস্থায় মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এসময় মনের ভেতরে অজানা আশংকা বা ভয় তৈরি হয়। এ কারণেও ঠিকমতো ঘুম হয় না।
** গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনও ঘটে। এসব কারণেও ঘুমের ব্যাঘাত হয়।
** অনেক সময় বিয়ের পরপরই বাচ্চা চলে আসে। শ্বশুরবাড়িতে ভালোভাবে আত্মীয়তা গড়ে ওঠার আগেই যদি সন্তান পেটে আসে তখন এক ধরনের মানসিক চাপ পড়ে। এছাড়া অনেক সময় শ্বশুরবাড়ির পরিবেশও বিরূপ থাকে। এসব কারণে ঘুম ঠিকমতো আসতে চায় না।
গর্ভাবস্থায় ঘুমের ব্যাঘাত বড় একটি সমস্যা। ভালো ঘুম না হলে খুব খারাপ লাগে। তখন কোনো কিছুই আর ভালো লাগে না। তাই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। নিন্মলিখিত নিয়মগুলো মেনে চললে কষ্ট অনেক কমে যাবে। নিয়মগুলো হছে-
** ভয় পাওয়া যাবে না। এ সময় ঘুম না হলে বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয় না। এটা পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে।
** হালকা ব্যায়াম করলে রাতে ভালো ঘুম হয়। তবে সব ধরনের ব্যায়াম করা যাবে না। তাতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
** চকলেট, চা, কফি বর্জন করতে হবে। এগুলো কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে। ফলে ভালো ঘুম হয় না। খেলেও সকালের দিকে খাওয়া যেতে পারে। সন্ধ্যার পর খাওয়া একবারেই অনুচিত।
** সারাদিন বেশি করে পানি খেতে হবে। সন্ধ্যার পর পানি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। ফলে বার বার প্রস্রাব হবে না এবং গর্ভবতী স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুমাতে পারবেন।
** সঠিক সময়ে রাতের খাবার খেতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে।
** শ্বশুরবাড়ির লোকজনের এ ব্যাপারে ভূমিকা আছে। তাদের সহানুভূতি গর্ভবতীকে অনেক সাহস যোগায়। এছাড়া স্বামীরও বড় ভূমিকা আছে। মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যে থাকলে সহজেই ঘুম আসে।
** অনেক সময় নিজের বাড়িতে গেলে অবস্থার উন্নতির হয়। নিজের বাড়ির চেনা পরিবেশ মনকে শান্ত করে। মন শান্ত হলে ঘুমও ভালো হয়।
** নিয়মিত গোসল করা উচিত। এতে শরীরে পরিচ্ছন্ন অনুভূতি সৃষ্টি হয়। ভালো ঘুমও হয়।
** ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত গর্ভাবস্থায়। ফলে হাত-পায়ের ব্যথা কমে আসে এবং খিল ধরা বন্ধ হয়। প্রথম তিনমাসে আয়রণ ও ক্যালসিয়াম দেয়া উচিত নয়।
** ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করা যেতে পারে। তারপর হালকা গরম দুধ খেলে সহজেই ঘুম চলে আসে।
** অনেকে ঘুমানোর জন্য স্লিপিং পিল এবং এলকোহাল খান। এটি কখনই করা যাবে না। এর ফলে বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
** এর পরেও কাজ না হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। গর্ভাবস্থায় ঘুমের ব্যাঘাত একটি বড় সমস্যা। তবে উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে সমস্যা অনেক কমে যাওয়ার কথা। সুস্থ মা-ই সুস্থ শিশুর জন্ম দেয়। সুতরাং সচেতনতা প্রয়োজন।