ধূমপান: প্রতি ১০ জনে একজনের মৃত্যু

1173670_405000012935345_877489802_nডাঃ এস.জামান পলাশ

এক সময় ধূমপানকে ফ্যাশনেবল আর গ্লামারাস মনে করা হলেও ধূমপানের কুফলের কারণে সৃষ্ট রোগে পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর হার এখন সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)এর মতে বিশ্বব্যাপী প্রতি ৬.৫ সেকেন্ডে একজন ধূমপায়ী মারা যাছে।
ধূমপানের কারণে প্রতি ১০জন পূর্ণ বয়স্কের মধ্যে ১জন মৃত্যুবরণ করে। ধূমপানের মৃত্যুর হার এইডস-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর চাইতেও বেশি।
মৃত্যুর হার প্রতিরোধে ধূমপানের বিরুদ্ধে সবাই সচেতন।
তবুও উন্নত দেশগুলো বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা এবং খোদ আমেরিকাতে ধূমপায়ীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

গোটা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১/৩ শতাংশ মানুষ ধূমপানে আসক্ত। আর ধূমপান জনিত রোগের কারণে এদের মধ্যে প্রতিবছর আনুমানিক ৬০ লাখ লোক মারা যাচ্ছে।
শুধু মাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ লোক ধূমপান জনিত রোগে মারা যায়। ধূমপানে পুরুষের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় ২কোটি ৫০ লাখেরও অধিক নারীও আসক্ত হয়েছে।index55432

বাংলাদেশে গত ১০-১৫ বছরে ধূমপায়ীর সংখ্যা প্রায় দিগুণ হয়েছে। কিশোর-কিশোরী এবং গ্রামীণ জনপদে নারীদের ধূমপানের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।
পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে নারী তামাক সেবী বেড়েছে ২৪.৪% থেকে ৩২.০% এবং নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়েছে ১.৩ %।
মোট জনসংখ্যার ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ তামাক এবং ধূমপানে আসক্ত! সংবাদটি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ।
বাংলাদেশে আনুমানিক এক লক্ষ একর জায়গায় তামাক চাষ হচ্ছে। তামাক উৎপাদন, বিড়ি বা সিগারেট তৈরি কারখানায় কর্মরতদের মধ্যে ধূমপানে আসক্তি ছাড়াও প্রতিবছর প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ ক্যান্সার, যক্ষ্মা সহ নানা কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বছরে প্রায় ৫৭ হাজার জন নর-নারী মারা যাচ্ছে এবং আনুমানিক ৪ লক্ষ মানুষ ধূমপান জনিত রোগর জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছে।

সিগারেটের ক্ষতিকারক উপাদান: ৪০০০-এর অধিক ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান একটি সিগারেটকে প্রজ্বলিত করে। এর মধ্যে ৪৩টি রাসায়নিক উপাদানকে ক্যান্সার সৃষ্টিতে দায়ী
৪০০টি কে বিষাক্ত এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম:- কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, এমোনিয়া ইত্যাদি।
এই উপাদানগুলো ধূমপায়ীকে প্রত্যক্ষভাবে এবং তার আশেপাশের লোকজনকেও পরোক্ষভাবে সমান ক্ষতি করে থাকে।15800241yx1

সিগারেটের আসক্তির কারণ: ধূমপানের ফলে ক্ষতিকারক রাসায়নিক নিকোটিন (মানবদেহের রক্তে ছড়িয়ে পড়ে) এবং এলকালয়েড জাতীয় উপাদান শরীরে এক ধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি করে। এই নিকোটিন মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক উপাদান তৈরি করে মানবদেহের মস্তিষ্কের প্রশান্তি-দায়ক কোষে ছড়িয়ে দেয় ফলে ধূমপায়ী সাময়িক ভাবে মানসিক প্রশান্তি লাভ করে, উদ্দীপ্ত হয়।
এছাড়াও ধূমপানে নির্ভরশীলতা অনেকটাই মানসিক সমস্যা বলেও মনে করা হয়।

ধূমপানের ফলে দাঁত হলদেটে, জামা কাপড়ে, মুখে দুর্গন্ধ ছাড়াও সরাসরি যে রোগগুলোর জন্ম দেয় তা হলো:

ফুসফুস: শতকরা ৯০ জন ধূমপায়ী ফুসফুসের ক্যান্সার, যক্ষ্মা, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি সহ ফুসফুসের নানা রোগে আক্রান্ত হয়।

হৃদপিণ্ড এবং রক্ত সঞ্চালনকারী: রক্ত সঞ্চালনকারী শিরা-উপশিরা ক্ষীণকায় হয়ে যাওয়া, ধমনী এবং ধমনী-তন্ত্র দুর্বল করে দেয়ার ফলে করোনারি হৃদরোগ, স্ট্রোক, পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ, হাত-পায়ে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপে সহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়।

ক্যান্সার: ধূমপানের ফলে ব্লাডার, সারভিক্স, এসোফেগাস, ফুসফুস, ওরাল ক্যাভিটি(মুখ), গলা, পাকস্থলী, প্যানক্রিয়াস, কিডনি, একিউট মাইলেওয়েড লিউকেমিয়ার মত ভয়াবহ ক্যান্সার হতে পারে।1200911

পাকস্থলী: ধূমপানের ফলে পাকস্থলীতে এসিড সরবরাহ বেড়ে যায় যা পেপটিক আলসার ছাড়াও গ্যাস্ট্রো-এসেফাগাল রিফ্লাক্স নামক রোগের জন্ম দেয়।

এছাড়াও অবসাদ গ্রস্ততা, কাজে-খেলাধুলায় উদ্যম কমিয়ে দেয়া, অল্প বয়সে ত্বকে বলিরেখা, হাড় বিশেষ করে উরু, কব্জি, মেরুদণ্ডের ক্ষতি ছাড়াও যৌন-ক্ষমতা হ্রাস, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস
নিদ্রাহীনতা, মহিলাদের মৃত শিশু বা অকাল প্রসব, অপুষ্ট সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটে থাকে। ধূমপানে মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ধূমপানের সবচেয়ে বড় ক্ষতি: অর্থের অপচয়। একটি নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য এটা অতিরিক্ত বোঝা বৈ কিছু নয়।
ধূমপানের কারণে মানুষ এবং সমাজের ক্ষতি। ধূমপান মানেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন। ধূমপান মানেই দারিদ্রটা বৃদ্ধি। তামাক উৎপাদনে কৃষি জমিন ব্যবহারে খাদ্য উৎপাদন ঝুঁকির সম্মুখীন।
এক কথায় বলা যায় ধূমপান তথা তামাক উৎপাদন, বিপণন অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায়।

২০০৫ সালে বাংলাদেশে তামাক এবং ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়। এই আইনে প্রকাশ্য বা উন্মুক্ত স্থানে ধূমপানের জন্য ৫০ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়!
এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। ধূমপান প্রতিরোধে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ অত্যাবশ্যকীয় করা হলেও ধূমপায়ীদের আকৃষ্ট করতে
সিগারেট এবং বিড়ি উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্ণিল পোষ্টার, বান্টিং, ডেঙ্গলার, স্টীকার এবং মনোহর ডিসপ্লেতে ফুটপাত থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো সেজে থাকে সারা বছর জুড়েই।
বিড়ি উৎপাদনকারীরা আরো একধাপ এগিয়ে। তারা ক্রেতা আকৃষ্ট করতে গ্রামে-গঞ্জে “জোকার”সাজিয়ে কখনো কখনো বিনামূল্যে বিড়ি বিতরণ করে থাকে।

ধূমপানের কুফল সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। ধূমপানকে না বলুন।

আপনি কি একজন ধূমপায়ী?
আপনি জানেন কি ধূমপানের মত বদ-অভ্যাস ত্যাগে আপনার কঠিন মনোবল এবং সদিচ্ছা-ই দায়ী?

=========================================

ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog
ফেসবুক–https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *