ডাঃ বশীর মাহমুদ ইলিয়াস
একজন হোমিওপ্যাথিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহর এক বিরাট রহমত স্বরূপ। কেননা তিনি ইচ্ছে করলে মাত্র পঞ্চাশ পয়সার ঔষধে এমন অনেক জটিল রোগ সারিয়ে দিতে পারেন, যা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার ঔষধেও সারানো যায় না। হোমিও ঔষধে আজ থেকে দুইশত পুর্বেও এমন অনেক রোগ-ব্যাধি সারানো যেতো যা এখনও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে নিরাময় করা যায় না। এমন অনেক জটিল রোগ আছে যা এক ফোটা হোমিও ঔষধে সারিয়ে দেওয়া যায় অথচ অন্যান্য
চিকিৎসা পদ্ধতিতে এসব রোগের জন্য যুগের পর যুগ ঔষধ খেয়ে যেতে হয়। সে যাক, প্রথমকথা হলো হোমিওপ্যাথি পৃথিবীর একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যা শতকরা একশ ভাগ বিজ্ঞান সম্মত। পক্ষানতরে অন্যান্য বহুল প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিসমুহের কোনটিই শতকরা একশভাগ বিজ্ঞানসম্মত নয়। এদের কোনটিতে বিজ্ঞান আছে দশ ভাগ আর বিজ্ঞানের নামে গোজামিল আছে নব্বই ভাগ আবার কোনটিতে বিজ্ঞান আছে বিশ ভাগ আর বিজ্ঞানের নামে ভাওতাবাজি আছে আশি ভাগ। একমাত্র শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত হওয়ার কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সকল রোগই সমপুর্ণ নির্মুল হয়ে যায়।
পক্ষানতরে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোন রোগই নির্মুল হয় না বরং কিছু সময়ের জন্য চাপা পড়ে যায়। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ছোট-খাটো রোগ চাপা পড়ে কিছু দিন পর বড় বড় রোগে রূপানতরিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। সে-সব চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডায়েরিয়ার চিকিৎসা করলে কোষ্টকাঠিন্য/পাইলস দেখা দেয়, চর্মরোগের চিকিৎসা করলে হৃদরোগ, বাতের চিকিৎসা করলে ক্যান্সার, মানসিক রোগের চিকিৎসা করলে ব্রেন ড্যামেজ, আলসারের চিকিৎসা করলে ধ্বজভঙ্গ ইত্যাদি ইত্যাদি। আরেকটি অসুবিধা হলো প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির ঔষধে মারাত্মক ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যেখানে সমর্পুণ শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত হওয়ার কারণে হোমিও ঔষধের ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম ; একেবারে নাই বললেই চলে। যেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, এই যুগের অধিকাংশ ভয়ঙ্কর রোগই এলোপ্যাথিক ঔষধের রিয়েকশানের কারণে সৃষ্ট হয়ে থাকে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো আমাদের মতো হোমিও ডাক্তারদের নিকট লোকেরা যত রোগের চিকিৎসার জন্য আসে, দেখা যায় তাদের শতকরা নব্বইভাগ রোগেরই মুল কারণ পাওয়া যায় বেশী বেশী এলোপ্যাথিক টিকা নেওয়া এবং বেশী বেশী এলোপ্যাথিক ঔষধ খাওয়ার মধ্যে।
উচ্চপ্রযুক্তির কমপিউটারাইজড যনত্রপাতি বেশী ব্যবহার করে বলে সাধারণ মানুষ মনে করে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা বুঝি খুবই বিজ্ঞানসম্মত। কিন’ ইহা একটি ভুল ধারণা বরং রোগ-ব্যাধির সাথে যনত্রপাতির কোন সমপর্কই নাই। এগুলো হলো অজ্ঞ মানুষকে বোকা বানিয়ে পকেট ভারী করার অত্যাধুনিক ফন্দি মাত্র। যদিও সাধারণ মানুষ মনে করে যে, এলোপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিরাট উন্নতি হয়েছে কিন’ বাস-বে আপনার শক্ত পায়খানাকে নরম করার ক্ষমতাও এলোপ্যাথিক ঔষধের নাই। কোষ্টকাঠিন্যের যদি আপনি এলোপ্যাথিক চিকিৎসা করেন, তবে আপনাকে মৃত্যু পর্যন- রোজ ঔষধ খেয়ে যেতে হবে। অথচ আজ থেকে দুইশ বছর পূর্বেও দুয়েক ফোটা হোমিও ঔষধেই কোষ্টকাঠিন্য চিরতরে বিদায় করা যেতো এবং এখনো যায়। হাঁপানি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আঁচিল, ডিপথেরিয়া, পোলিও, ধনুষ্টংকার, পিত্তপাথর, কিডনী পাথর, চোখের ছানি, হৃদরোগ, ক্যান্সার, টিউমার, নিউরালজিয়া, মানসিক রোগ প্রভৃতির এখনো এলোপ্যাথিতে কোন কার্যকর চিকিৎসাই নাই। এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা চিকিৎসার নামে যা করে তা হলো বস-ার বস-া ভয়ঙ্কর ঔষধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মানুষের লিভার/ কিডনী নষ্ট করা ; ছুড়ি, চাকু, রেডিয়েশন, আগাড়া-বাগাড়ার মাধ্যমে রোগীদেরকে ফটাফট আজরাইলের হাতে তুলে দেওয়া। হোমিওপ্যাথির সাথে তুলনায় প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনও শৈশবেই রয়ে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান যদি আজ থেকে দুইশত বছর পূর্বে আবিষকৃত না হয়ে বরং আজ থেকে আরো দুইশত বছর পরেও আবিষকৃত হতো, তথাপি তা অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের তুলনায় অনেক উন্নতরূপে গণ্য হতো। যেহেতু হোমিও ঔষধের মুল্য অত্যনত কম সেহেতু হোমিও চিকিৎসা পৃথিবীর সবার নিকট গ্রহনযোগ্য হয়ে গেলে বহুজাতিক ঔষধ কোমপানীগুলির বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের লাভজনক ব্যবসা মাঠে মারা যাবে বলে, প্রতি বছর তারা লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে শুরু হোমিওপ্যাথির বদনাম ছড়ানোর জন্য। সমপুর্ণ বিজ্ঞানসম্মত হওয়ার কারণে এপেন্ডিসাইটিস থেকে হার্টের বাইপাস সার্জারীসহ যে-কোন ছোট-বড় অপারেশনের রোগই হোমিও চিকিৎসায় বিনা অপারেশনে, কোন যনত্রপাতির সাহায্য ছাড়া কেবলমাত্র ঔষধেই সারানো যায়।
বিশেষত মানসিক রোগের জন্য হোমিওপ্যাথি ছাড়া অন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোন ঔষধই নাই; তারা কেবল বছরের পর বছর ঘুমের ঔষধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মানসিক রোগীদের বারোটা বাজিয়ে থাকে। এজন্য নতুন প্রজন্মের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আমি হোমিওপ্যাথিকে পেশা হিসেবে গ্রহন করার আহ্বান জানাই। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো শতভাগ বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি হওয়ার কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান খুবই জটিল যা একজন গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়া ছাত্র-ছাত্রী ব্যতীত অন্যদের পক্ষে ভালোভাবে আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। অথচ বেশীর ভাগক্ষেত্রে কম মেধাসমপন্নরা হোমিওপ্যাথিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কারণে উল্টো হোমিওপ্যাথির আরো বদনাম বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথিতে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নাই, সরকারী চাকুরিতে ঢুকার সুযোগও খুব কম ইত্যাদি কারণে সাধারণত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা হোমিওপ্যাথিতে পড়তে আসে কম। কিন’ আপনি যদি একজন হোমিওপ্যাথিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হতে পারেন ; তবে দৈনিক পঞ্চাশ হাজার থেকে একলক্ষ টাকা উপার্জন করা কোন কঠিন কাজ হবে না। আর সরকারী চাকরির চাইতে মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, দোয়ার মুল্য অনেক বেশী। যদিও এখনকার দিনে হোমিওপ্যাথিক গ্রাজুয়েট ডাক্তাররা বি.সি.এস. (স্বাস’্য) ক্যাডারেও ঢুকতে পারছে, যে সুযোগ অতীতে ছিল না। এলোপ্যাথিসহ অন্যান্য অবৈজ্ঞানিক অপচিকিৎসা-কুচিকিৎসার কারণে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর রোগ-ব্যাধির সংখ্যা এমন কল্পনাতীতভাবে বেড়ে গেছে যে, মানবজাতির অসিতত্ব নিয়েই আজ টানাটানি শুরু হয়েছে। মানবসভ্যতার এই মহাদুর্যোগের সময় একমাত্র সুদক্ষ আদর্শ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরাই পারে ত্রাণকর্তার ভূমিকা পালন করতে।