রোজা রাখার পর ভাজা–পোড়া থেকে যন্ত্রণা!

fc754fde6de66d27603fe88b1709ab9a-Untitled-5

সারা দিন রোজা রাখার পর পাকস্থলী খুব ক্ষুধার্ত ও দুর্বল থাকে। তারপর যদি এত রকম গুরুপাক খাবার একসঙ্গে খাওয়া হয়, তাহলে কী অবস্থা হবে? পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি, হজমের সমস্যা ইত্যাদি হবে রোজার নিত্যসঙ্গী। অনেকের ওজনও বেড়ে যায়।
এ বিষয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের প্রধান আখতারুন নাহার বলেন, রোজায় দামি খাবার খেতে হবে এমন নয় বরং সুষম, সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। গুরুপাক খাবার, পোড়া তেল, বাইরে ভাজা চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, কাবাব, হালিম, মাংস-জাতীয় খাবার না খাওয়া ভালো। এতে হজমে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অ্যাসিডিটি হলে কী করবেন?
প্রথম ও প্রধান করণীয় হলো যেসব খাবারে অ্যাসিডিটি হয় বা হচ্ছে যেমন ভাজা-পোড়া, চর্বি-জাতীয় খাবার ইত্যাদি বেশি গ্রহণ করা যাবে না বা খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করা উচিত। একেবারে পেটভর্তি খাবার গ্রহণ করা যাবে না। খাবার গ্রহণের পর হাঁটাহাঁটি করা উচিত। পেট পুরে খেয়ে নিচু হয়ে বা পেটে চাপ পড়ে এমন কিছু করা ঠিক নয়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে এ ধরনের কাজ করতে পারেন। শোয়ার সময় মাথা উঁচু করে শুতে হবে। অ্যাসিডিটির কারণে পেটে ব্যথা হলে অ্যাসিডিটি কমানোর ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় ইফতারের পর হঠাৎ পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, যা মারাত্মক হতে পারে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কীভাবে খাবেন?

* নিজেকে ইফতারের সামনে সংযত করুন। আস্তে আস্তে খাওয়া শুরু করুন।

* প্রথমে পানি বা শরবত পান করুন। তারপর খোরমা বা খেজুর খান। তারপর আস্তে আস্তে বাকি খাবার খান। পেটভরে না খেয়ে একটু ক্ষুধা রেখে খেতে হবে। তারপর আধা ঘণ্টা পর পানি পান করতে হবে।

কী খাবেন, কী খাবেন না?

* খেজুর বা খোরমা অবশ্যই খাবেন। এতে আছে শর্করা, চিনি, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আইরন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন, ক্লোরিন ফাইবার; যা সারা দিন রোজা রাখার পর খুবই দরকারি।

* চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিলে ভালো হয়। এটা খুব তাড়াতাড়ি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ওজন বাড়ায়। তাই যথাসম্ভব চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার কম খান।

* সব মাসের মতো সবজি ও ফল খেতে হবে নিয়মমতো। তা না হলে এই সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে নিত্যসঙ্গী।

* এই গরমে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি না খেলে হজমের সমস্যা হবে। ইফতারের পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটু পরপর পানি খেতে হবে।

* খাদ্যতালিকায় সব গ্রুপের খাবার থাকতে হবে অর্থাৎ সুষম খাবার খেতে হবে। আমিষ, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন, দুধ, দই, মিনারেলস, আঁশ ইত্যাদি খেতে হবে নিয়মমতো।

* ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন¦লাল আটা, বাদাম, বিনস, শস্য, ছোলা, ডাল ইত্যাদি খেতে হবে। এগুলো হজম হয় আস্তে আস্তে, তাই অনেক সময় পর ক্ষুধা লাগে। রক্তে চিনির পরিমাণ তাড়াতাড়ি বাড়ে না।

* কাঁচা ছোলা খাওয়া ভালো। তবে তেল দিয়ে ভুনা করে খাওয়া ঠিক না।

* চা-কফির মাত্রা কমাতে হবে। তা না হলে পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

* সেহ্‌রিতেও খুব বেশি খাওয়া বা সেহ্‌রি না খাওয়া ঠিক না। সেহ্‌রি না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে।

* বাদ দিতে হবে ভাজা-পোড়া ও গুরুপাক খাবার যেমন ছোলা ভুনা, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, হালিম, বিরিয়ানি ইত্যাদি বাদ দিতে হবে।

* সহজপাচ্য খাবার, ঠান্ডা খাবার যেমন¦দই, চিড়া খাবেন। তাহলে সারা দিন রোজা রাখা নাজুক পাকস্থলী ঠিকমতো খাবার হজম করতে পারবে।

* কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ইসবগুল খেতে পারেন।

* বেশি দুর্বল লাগলে ডাবের পানি বা স্যালাইন খেতে পারেন ইফতারের পর।

* কোমল পানীয় ঘুমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি, আলসার ইত্যাদির কারণ। তাই এ কোমল পানীয়কে সারা জীবনের জন্য পারলে বাদ দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *