হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকেরা কেন রোগীকে এত প্রশ্ন করেন?

imagesহোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকেরা কেন রোগীকে এত প্রশ্ন করেন?

যেসব রোগী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা নেন তাদের অনেকের মধ্যে একটাই প্রশ্ন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকেরা রোগীকে এত প্রশ্ন করেন কেন? কারনতো নিশ্চয় রয়েছে, সেটি জানাতেই আজকের এই লেখা।

অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় একটি মূলনীতি রয়েছে “Treat the patient not the disease” অর্থাৎ “রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা কর”। রোগের চিকিৎসা করতে গেলে হোমিওপ্যাথিতে ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশী কারন হোমিওপ্যাথিতে রোগের নামে কোন সুনির্দিষ্ট ঔষধ নেই। একই ঔষধ অনেক রোগের অনেক লক্ষনের উপর কাজ করে। আরেকটি মুলনীতি রয়েছে, Let like be cured by like বা সদৃশ সদৃশে আরোগ্য অর্থাৎ যেটি যে রোগ তৈরি করতে পারে সেটি দ্বারাই সেই রোগ অারোগ্য হবে৷ ঔষধের লক্ষনের সাথে কোন রোগীর লক্ষণের মিল পাওয়া গেলে তার উপর ঐ ঔষধ প্রয়োগ করা যাবে ও রোগী আরোগ্য হবে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে ঔষধ রোগী চিকিৎসায় ব্যাবহারের পূর্বে তা পরীক্ষা করা (Drug Proving) হয় সুস্থ মানবদেহে যাদেরকে প্রুভার (Prover) বলা হয়। প্রুভারের শরীরে প্রকাশিত সকল লক্ষণ সমষ্টি সংগ্রহ করে স্ব-স্ব মেডিসিনের কার্যকারিতা (Charecteristic Symptoms of a medicine) হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এ চিকিৎসার নীতি অনুযায়ী জীবনীশক্তি (Vital Force) আক্রান্ত হলে একজন মানুষ অসুস্থ হয়। আক্রান্ত জীবনীশক্তির লক্ষনসমূহ রোগীর শরীরে পাওয়া যায় যা কেসহিষ্ট্রি (Case Record) নেয়ার মাধ্যমে চিকিৎসক সংগ্রহ করেন।

একই রোগের উপর কাজ করে (মুলত ঐ রোগের বিভিন্ন লক্ষনের উপর কাজ করে) এমন শতাধিক ঔষধ থাকলেও তার মধ্যে থেকে একটি ঔষধ রোগীর জন্য নির্বাচন করতে হয়। অর্থাৎ ঔষধের লক্ষণের (যা ঔষধ পরীক্ষনকালে প্রুভারের শরীরে প্রকাশিত হয়েছিল) সাথে রোগীর লক্ষনের (যা জীবনীশক্তি আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে পাওয়া যাবে) সাদৃশ্য করে রোগীর জন্য সঠিক ঔষধ নির্বাচন করার উপর এ চিকিৎসার সফলতা নির্ভরশীল। এটি করতে গিয়ে রোগীর রোগ লক্ষনের পাশাপাশি আণুসাঙ্গিক অনেক লক্ষণ সংগ্রহ করতে হয় যা ঔষধ পরীক্ষনকালে ঐ ঔষধের লক্ষণ আকারে প্রুভারের শরীরে প্রকাশিত হয়েছিল।

আর এ জন্যই একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে কেসহিষ্ট্রি নেয়ার সময় রোগীর সকল লক্ষণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক প্রশ্ন করতে হয় যা রোগীর কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও ভালো ঔষধ নির্বাচন তথা ভালো চিকিৎসা দেয়ার জন্য অত্যাবশ্যক। কেসহিস্ট্রি গ্রহনের সময় তাই চিকিৎসককে লক্ষ রাখতে হবে ঔষধের লক্ষনের সাথে রোগীর লক্ষনের সর্বোচ্চ সাদৃশ্য করতে (Indivisualization of the patient) প্রয়োজনীয় কোন তথ্য যেন বাদ না পড়ে যায়, এটি অাপনার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করতে পারে৷ অার রোগীদের দায়িত্ব কেসহিষ্ট্রি নেয়ার সময় সকল সমস্যার কথা চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করা ও কেসহিষ্ট্রি গ্রহনে সহযোগিতা করা, যা সঠিক ঔষধ নির্বাচন তথা রোগ আরোগ্যের সহায়ক৷

 

ডাঃ শামীম হোসেন
BHMS (Eqv- MBBS), ১ম স্থান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এক্স হাউজ ফিজিশিয়ান,
সরকারী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা৷
পিজিটি (হোমিও মেডিসিন), পিজিটি (আকুপ্রেশার)
কনসালটেন্ট, হলিস্টিক হোমিওপ্যাথি সেন্টার, দনিয়া, ঢাকা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *