ভাইরাল ওয়ার্টস: আঁচিল

pocatello-warts
ডাঃ এস.জামান পলাশ

আঁচিল এক ধরনের টিউমারের মত গ্রোথ। ত্বকের অংশ বিশেষ শক্ত, মোটা, খসখসে দানার মত বৃদ্ধি পায়। ভাইরাল ওয়ার্টস এইচপিভি বা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দ্বারা শরীরে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শেও এই ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট আঁচিল অন্যের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আঁচিল বা ভাইরাল ওয়ার্টস-এ চুলকায়। তখন আক্রান্ত স্থান চুলকালে বা ঘসলে এই ভাইরাস ত্বকের স্বাভাবিক স্থানেও ছড়াতে পারে। শুরুতে আঁচিলগুলো ছোট, দানারমত থাকে এবং প্রাথমিক অবস্থায় তুলে ফেলা হলে আঁচিলের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
আজকের বিষয় জেনিটাল ওয়ার্টস। জেনিটাল ওয়ার্টস পুরুষ ও মহিলাদের এক ধরণের ভাইরাস রোগ। এ নিয়ে ভুগছেন দেশের হাজার হাজার পুরুষ ও মহিলা। বিশেষ করে মহিলারা এ ধরণের সমস্যা কারও কাছে বলতে চাননা। যেতে চাননা ডাক্তারের কাছে। মাঝে মধ্যে আক্রান্ত মহিলারা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেও সবেেত্র ভালো পরামর্শ পাননা। বাংলাদেশে কত মহিলা এই ভাইরাস জনিত যৌন রোগে আক্রান্ত তার কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মহিলা এই ভাইরাসে আক্রান্ত। ২২-৩০ বছরের মহিলারা বেশী আক্রান্ত হয়। সাধারণত জেনিটাল ওয়ার্টস চিকিৎসা করে থাকেন চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞগণ। অনেক আক্রান্ত রোগীও এটা জানেননা। সব চেয়ে বড় কথা পুরুষ হোক আর মহিলা হোক প্রাথমিক অবস্থায় জেনিটাল ওয়ার্টস বা গোপন অঙ্গে আঁচিল ও আঁচিলের মতো গ্রোথ-এর ভালো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এইচপিভি বা হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস থেকেই জেনিটাল ওয়ার্টস সংক্রমিত হয়। বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত একশত এর বেশী ধরণের জেনিটাল ওয়ার্টস-এর সন্ধান পেয়েছেন। এসবের বেশীরভাগ সেক্সচুয়াল কন্ট্যাকটির-এর মাধ্যমে ছড়ায়। অর্থাৎ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষ অথবা মহিলার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে এ ভাইরাস অন্যের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। স্বামী আক্রান্ত হলে স্ত্রীর বা স্ত্রী আক্রান্ত হলে স্বামীর এধরণের সংক্রমণ ঘটে। তবে অনেক েেত্র এইচপিভি ভাইরাস নিষ্ক্রিয় থাকে, তির কারণ হয়না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে জেনিটাল ওয়ার্টস নামক মারাত্মক এই ভাইরাস রোগের সংক্রমনের অন্যতম দায়ী জীবানু হচ্ছে এইচপিভি ভাইরাস এর ৬ ও ১১ সাবটাইপ।commonWart_29485_lg
একথা ঠিক অন্যান্য হাই রিস্ক এইচপিভি ভাইরাস থেকে মহিলাদের সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। সাধারণত পুরুষ ও মহিলাদের নিম্নাঙ্গে এই ভাইরাস বিভিন্ন ধরণের আঁচিল ও আঁচিলের মতো গ্রোথ তৈরী করে। এক সঙ্গে অনেকগুলো লেশন তৈরী হতে পারে। সাধারণত এক্সটারনাল জেনিটাল এরিয়া, ভালবা, পেরিনিয়াম, পেরিনিয়াল স্কিন, পুরুষের নিু অঙ্গ ও টেস্টিকুলার এরিয়াতে আক্রান্ত হয় বেশী। অনেক েেত্র অনেকগুলো লেশন বা পিন্ড তৈরী না করে বরং একটা পিন্ড, বা গ্রোথ দেখা দেয়। এই ভাইরাস মহিলাদের েেত্র নিুাঙ্গের মসৃন মিউক্যাস মেমব্রেন বা আবরনে, পায়ুপথের চারিপাশে ও ভেতরে, মূত্রনালীতে, সার্ভিক্স ও মুখের মিউক্যাস আবরণে এধরণের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। সাধারণত জেনিটাল ওয়ার্টস-এর ক্ষেত্রে মাংসের রং-এর সাদৃশ গ্রোথ দেখা দেয়। আক্রান্ত আঁচিলগুলো লাল অথবা বাদামী ডোম শেপড অথবা মসৃন থাকে।picture-of-wart-on-finger

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জেনিটাল ওয়ার্টস আক্রান্ত স্থানসমূহে সাধারণতঃ কোন ধরণের উপসর্গ থাকেনা। তবে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের েেত্র এক্সটারনাল জেনিটাল এরিয়াতে সংক্রমণ ঘটলে মাঝে মধ্যে চুলকানি থাকতে পারে। তবে ইন্টারনাল ওয়ার্টস হলে সাধারণত কোন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়না। তবে আক্রান্ত স্থানের গ্রোথ বড় হলে বিভিন্ন ধরনের লণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন- মহিলাদের েেত্র ব্যথা, রক্ত রণ এবং স্বামী-স্ত্রীর মিলনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন চিকিৎসা না করলে অনেক েেত্র বিশেষ করে মহিলাদের আক্রান্ত স্থানগুলো ইনফেকশন হয়ে ফুলে যায়। তীব্র ব্যথা হয় এবং নানা জটিলতা তৈরী হতে পারে। তাই কোন ভাবেই এধরণের সমস্যা গোপন না রেখে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
আঁচিল গুলো সাধারনত: শক্ত ও খসখসে (ওয়ার্টি) থাকে। শরীরে নানা ধরণের ভাইরাল ওয়ার্ট হতে পারে। সাধারনত: আঙ্গুলের পিছনের দিক, বুড়ো আঙ্গুলের সামনেরর দিক, হাঁটু, পায়ের পাতায় আঁচিল দেখা দেয়। মুখে সাধারণত পেস্নন ওয়ার্টস বেশী থাকে। যা শেভ করার সময় কেটে গিয়ে রক্ত রণ হতে পারে। এছাড়া নখের পাশে পেরিঅঙ্গুরাল, আঁচিল, ঠোটের ওপরে ও মুখেও আঁচিল হতে পারে। আর জেনিটাল ওয়ার্টস বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড হয়। ওয়ার্টস বা আঁচিল অনেক ক্ষেত্রে ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং বিব্রতকর হতে হয়। বিশেষ করে কালো খসখসে বড় আকৃতির শক্ত আঁচিলের ক্ষেত্রে।
সাধারণতঃ যে কোন অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞগণ সংক্রমণ দেখেই বলে দিতে পারেন জেনিটাল ওয়ার্টস কিনা। তবে যেসব ক্ষেত্রে নিশ্চিত রোগ সনাক্ত করা যায় না তখন বায়োপসি করার প্রয়োজন হতে পারে।commonWartVerrucaVulgaris_3094_lg

জেনিটাল ওয়ার্টস এর বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা আছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ কি ধরণের পদ্ধতি অনুসরণ করেন তার ওপর। পুরুষের জেনিটাল ওয়ার্টস চিকিৎসা যতটা সহজ মহিলাদের জেনিটাল ওয়ার্টস হলে এর চিকিৎসা বা সার্জারী অতটা সহজ নয়। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকলে বড় ধরণের তির সম্ভাবনা থেকে যায়। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে যখন ইন্টারনাল জেনিটাল এরিয়া আক্রান্ত হয়। তবে শতকরা ৮০-৯০ ভাগ জেনিটাল ওয়ার্টস সস্পূর্ন অপসারণ করা বা চিকিৎসা সম্ভব। শতকরা ৫-১০ ভাগ েেত্র জটিলতা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কি ধরণের ব্যবস্থা নেন মূলত তার ওপরই নির্ভর করে নিরাময়ের সাফল্য। সাধারণত তিন ভাবে আমরা জেনিটাল ওয়ার্টস-এর চিকিৎসা করতে পারি।

আঁচিলের চিকিৎসা: প্রথম- মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা। দ্বিতীয়- সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট বা অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা। তৃতীয়- ইলেকট্রো ও আরএফ কটারি ও লেজার থেরাপি। তবে আক্রান্ত পুরুষ বা মহিলার আক্রান্ত স্থানের লণ বা উপসর্গ জেনিটাল ওয়ার্টস-এর আকার-আকৃতি ও আবস্থার ওপর নির্ভর করে কি ধরণের চিকিৎসা দিতে হবে। বেশীরভাগ েেত্র ক্রায়ো থেরাপি, ইলেকট্রোথেরাপি, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) থেরাপি এবং কার্বোন-ডাই অক্সাইড বা সিওটু লেজার ব্যবহার করা হয়। তবে আমি নিজে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে লেজার ব্যবহার না করার প।ে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। তাই বিশেষজ্ঞগণ সাধারণত আঁচিল বা আঁচিল সাদৃশ গ্রোথ অপসারণে বেশী গুরুত্ব দেন। তবে মেডিক্যাল চিকিৎসার মধ্যে ইমিকুইমড টপিক্যাল থেরাপি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। তবে অনেক েেত্র ট্রাইকোরো এসিটিক এসিড, পডোফাইলিন, ইন্টারফেরন ইত্যাদি ব্যবহারের প্রচলনও রয়েছে।
আমি আগেই বলেছি জেনিটাল ওয়ার্টস এক ধরণের সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেড ভাইরাল ইনফেকশন। তাই এধরনের মারাÍক সংক্রমণ রোগ সহজে প্রতি রোধ করা যায়। সাধারণত অনৈতিক সংস্রব পরিহার, আক্রান্ত পুরুষ ও মহিলাদের সাথে প্রটেকশন ছাড়া মিলন পরিহার এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা উচিত এবং পাশাপাশি পুরুষ বা মহিলাদের যে কেউ আক্রান্ত হলে প্রাথমিক অবস্থায় যথাযথ চিকিৎসা করতে পারলে অবশ্যই এই যন্ত্রনাদায়ক বিব্রতকর প্যাপিলোমা ভাইরাস ইনফেকশনের হাত থেকে রা পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি শুধু অনুশাসন মেনে চললেই হবেনা, যথাযথ হাইজিনও মেনে চলতে হবে।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে আঁচিলের চিকিৎসা করতে চায়না কেউ। ফলে আঁচিল একদিকে যেমন বড় হয় অন্যদিকে তেমনি বড় আঁচিলের চিকিৎসায় ত্বকে ত তৈরী হতে পারে। সাধারণত: কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট, ক্রায়োথেরাপি, ইলেকট্রথেরাপি, আরএফ সার্জারী অথবা সিওটু লেজার দিয়ে আঁচিলের কার্যকর চিকিৎসা করা যায়। অনেক সময় কম্বিনেশন চিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে। বেশীর ভাগ েেত্র চিকিৎসায় আঁচিল সম্পূর্ণ ভালো হয় এবং ভবিষ্যতে আর দেখা দেয়না। তবে অসম্পূর্ণ চিকিৎসার েেত্র আঁচিল আবার দেখা দেয়। তাই আঁচিলের যথাযথ চিকিৎসা নিতে পারলে বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আঁচিলের চিকিৎসা একমাত্র হোমিওপ্যাথিতেই নির্মূল করা সম্ভব অন্য কোনো চিকিৎসা ব্যাবস্থায় আঁচিলের কোনো চিকিৎসা নেই।

==========================

 

ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog
ফেসবুক–https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *