মাথা ব্যথার কারণ ও লক্ষন

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ

migraine
মাথাব্যথা এমন একটি ব্যাপার যার সঙ্গে আমরা কম-বেশী সবাই পরিচিত। সাধারণত মানসিক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, জ্বর, উচ্চরক্তচাপ বা চোখের দৃষ্টিশক্তি ত্রুটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেই মাথাব্যথার অভিযোগ বেশী ল্য করা যায়। কোনও কোনও অধিক সচেতন ব্যক্তি মাথাব্যথা উপশমের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ক্রমান্বয়ে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধও খেয়ে থাকেন। এমনটি কখনোই যুক্তিযুক্ত নয় বরং তা স্বাস্থ্যে তিকর ক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। মাথাব্যথা যেমন সাধারণ কোনও কারণে হতে পারে, তেমনি কোনও জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবেও মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
মাথাব্যথার কারণ ও লক্ষন-

-মাথাব্যথা কেন হয় এর প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। তবে মস্তিষ্কের আবরণ ডুরা ম্যাটার, পায়াম্যাটার এবং ডুরাল সাইনাস ও ফক্স সেরিব্রেরির রক্তনালিগুলো ব্যথা সৃষ্টির জন্য খুব সংবেদনশীল। যে কোনও কারণ যেমন মানসিক উত্তেজনা, মাথার মধ্যে টিউমার, রক্তচাপ, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ ইত্যাদি কারণে এগুলো বড় হলে বা স্ফীত হলে, টান পড়লে বা স্ট্রেচড হলে অথবা বেঁকে গেলে বা বেন্ড হলে এবং উত্তেজিত হলেই মাথাব্যথা হয় বলে ধারণা করা হয়। তবে মস্তিষ্কের অন্যান্য টিস্যু, সেরিব্রাল ভেন্ট্রিকেলস ও করয়েড প্লেক্সাস ব্যথার জন্য সংবেদনশীল নয়।
চিন্তাজনিত মাথাব্যথা বা টেনশন হেডেকঃ-শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মাথাব্যথাই এ ধরনের হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকমের মানসিক অশান্তি, অত্যধিক চিন্তা, হতাশা, অবসাদ, বিষণ্ণতা, কোনও কিছু প্রাপ্তিতে বা সাফল্য অর্জনে ব্যর্থতা ইত্যাদি নানা কারণ এ জাতীয় ব্যথার উদ্রেক করে। এর লক্ষণগুলো হল-
১। সম্পুর্ণ মাথায় বা ঘাড়ে, কপালের দুপাশে, মাথার তালুতে চাপ দিলে ব্যথা হয় অথবা মাথাটা ভারি ভারি লাগে।
২। ব্যথা কয়েক মাস হতে কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
৩। এ ব্যথার ওপর বংশগতির কোনও প্রভাব নেই।
৪। ব্যথার সময় বমি হয় না।
৫। কোনও ওষুধে এ ব্যথার উপশম হয় না। এমন অবস্থায় রোগীকে অবশ্যই অধিক চিন্তা বা মানসিক অশান্তির কারণ খুঁজে বের করে সেটি হতে মুক্ত করতে হবে।
জ্বরে মাথাব্যথাঃ-চিন্তাজনিত মাথাব্যথার পর ভাইরাস জ্বরে মাথাব্যথাই বেশি ল্য করা যায়। আজকাল ভাইরাস জ্বরে মাথাব্যথা একটি সাধারণ উপসর্গ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস ইত্যাদি অসুখে অনেকের জ্বরের সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।
রক্তনালী সংক্রান্ত মাথাব্যথাঃ-মাইগ্রেন, টেম্পোরাল বা কাস্টার হেডেক, রক্তনালী প্রদাহজনিত মাথাব্যথাই এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। তবে এদের মধ্যে মাইগ্রেনই বেশী ল্য করা যায়। মাথাব্যথা হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পরিলতি হয়।
১। তীব্র মাথাব্যথা যা কি-না খোঁচা দিচ্ছে বা আঘাত করছে এমন মনে হয়।
২। সাধারণত মাথার যে কোনও একদিকে, অল্প সময়ের জন্য এবং কিছুদিন পরপর অনুভূত হয়।
৩। মাথাব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব ও বমি হয়।
৪। এ ব্যথা সাধারণত বংশগত হয়।
৫। অনেকণ ধরে টিভি দেখা, বেশি ভ্রমণ করা, ঠাণ্ডা বা গরম কিছু খাওয়া, অত্যধিক সূর্র্যরশ্মি বা অত্যধিক ঠাণ্ডা ইত্যাদির মাধ্যমে মাথাব্যথার সূত্রপাত হতে পারে।
৬। আবার নীরব অন্ধকার ঘরে বিশ্রাম নিলে, বমি করলে, ব্যথাজাতীয় ওষুধ খেলে এ ব্যথার উপশম হতে পারে।
৭। রক্তনালি প্রসারণের আগে তা সংকোচিত হয় বলে কোনও কোনও েেত্র রোগীরা চোখে আলোর ঝলকানি দেখছে বা অন্ধকার দেখছে বা কানে কোনও অনুচ্চারিত শব্দ শুনছে ইত্যাদি বলে এবং বুঝতে পারে কিছুণের মধ্যেই মাথাব্যথা শুরু হতে যাচ্ছে।
এ ধরনের মাথাব্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নির্দেশনা ও চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত নতুবা এর পরিণতি হিসেবে চোখ অন্ধ বা দেহের কোনও অংশ অবশ হয়ে যাওয়ার মতো অঘটনও ঘটে যেতে পারে।
মস্তিষ্ক সংলগ্ন অংশগুলোর কারণে মাথাব্যথাঃ-
চোখ ১। চোখের দৃষ্টিশক্তি ত্রুটির কারণে।২। গ্লুকোমা বা চোখের অভ্যন্তরীণ প্রকোস্টের চাপ বেড়ে গেলে।৩। চোখে আইরাইটিস, স্কেরাইটিসজাতীয় কোনও ইনফেকশন থাকলে।

migraine
নাক সাইনুসাইটিসজাতীয় অসুখ থাকলে।
কান অন্তঃকর্ণ বা মধ্যকর্ণে কোনো ইনফেকশন থাকলে।
দাঁত ১। দাঁতে ইনফেকশন হলে।২। আক্কেল দাঁত উঠার সময়।৩। ঘাড়ের হাড় বা কশেরুকা বেড়ে গেলে এবং ঘাড়ে সারভাইকাল স্পনডাইলসিস নামক অসুখ থাকলে।
অন্যান্য কারণে মাথাব্যথা ঃ-মস্তিষ্কে টিউমার।মাথার নির্দিষ্ট স্থানে মাঝে মাঝে ব্যথা হয় এবং সাধারণত বমি বমি ভাব ছাড়াই হঠাৎ করে বমি হয়ে যায়। এর সঙ্গে সঙ্গে রোগী চোখে ঝাপসা দেখতে পারে বা দেহের কোনও অংশ অবশ বা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
মাথায় আঘাত পাওয়া : মাথায় আঘাত পেলে সঙ্গে সঙ্গে বা বেশ কিছুণ পর মাথাব্যথা অনুভূত হতে পারে।
স্ট্রোক হলেঃ-স্ট্রোকের পরে যদি মস্তিষ্কে রক্তপাত বিশেষ করে মস্তিষ্ক আবরণীয় অ্যারাকনয়েডমেটারের নিচে যদি রক্তরণ হয় তবে তীব্র মাথাব্যথা অনুভূত হয়।
উচ্চ রক্তচাপঃ-মাথাব্যথা অধিক উচ্চরক্তচাপের একটি প্রধান উপসর্গ। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এ ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। ধীরে ধীরে ব্যথা কমে যায়। উচ্চ রক্তচাপ অনেক বেশি হলে এর সঙ্গে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, ঘাড়ে ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, বুক ধড়পড় করা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। আর এমনটি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়াঃ-সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে অভুক্ত থাকলে বা ইনসুলিন গ্রহণকারী ডায়াবেটিস রোগীদের (বিশেষ করে রাতের বেলায়) মস্তিষ্কে গ্লুকোজ কমে গিয়ে মাথাব্যথা অনুভূত হতে পারে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ-ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয় লক্ষণীয়।

যেমন-
১। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করলে।
২। মহিলারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে।
বেনাইন পারোক্সিজমাল মাথাব্যথাঃ-মাঝে মধ্যে হঠাৎ করে মাথাব্যথা হওয়াকে এ শ্রেণীতে ফেলা যায়।ট্রাইজেমিনাল নার্ভের অসুখের কারণে মাথাব্যথা বা ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে এ রোগ হয়। এর ফলে মুখের পাশে দাঁতে, কপালে, গালে ও মাথায় তীব্র ব্যথা হয়। কার্বামাজেপাইন, ফেনাইটিয়েন দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। মুখের যে কোনও অস্বাভাবিক ব্যথার কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। হারেপিস ভাইরাস ইনফেকশনের পর অনেকের মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
মিলনের সময় বা শারীরিক ব্যয়ামের পর মাথাব্যথাঃ-মধ্যবয়সী নারী-পুরুষ হঠাৎ করে চরম তৃপ্তির সময় ১০-১৫ মিনিট স্থায়ী খুব মারাÍক মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। এ ধরনের মাথাব্যথা ব্যায়ামের পরও হতে পারে। ব্যথানাশক ওষুধ প্রপানোলল ও ইনডোমেথাসিন ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। এর কারণ এখনও জানা যায়নি।
রোগ নির্ণয়ঃ-রোগীর কাছ থেকে সঠিক কিনিক্যাল পরীা, ইতিহাস; মাথাব্যথার ধরন, মাথাব্যথা কি সংপ্তি, দীর্ঘস্থায়ী না মাঝে-মধ্যে হয়; দিন বা রাতের কোন সময় শুরু হয়, সবচেয়ে বেশি কখন হয়; দেহের অবস্থান, কফ ও ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কিনা; ব্যথার সঠিক জায়গা এর সঙ্গে অন্য কোনও লণ আছে কিনা, যেমন- বমিভাব বা বমি, চোখে ঝাপসা, দেখা, রক্তচাপ, খিঁচুনি ইত্যাদি তথ্য জেনে কিছু পরীা-নিরীা করার প্রয়োজন।
যেসব পরীা-নিরীা প্রয়োজনঃ-রক্তে টিসি, ডিসি, ইএসআর, সিএসএফ এক্সরে মাথার, ঘাড়ের, বুকের; সিটিস্ক্যান, এমআরআই; ইইজি, ইসিজি, স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য পরীা; চোখ পরীা, চোখের দৃষ্টিশক্তি নির্ণয়, প্রেসার ইত্যাদিসহ ইএনটি পরীা যেমন সাইনাস এক্সরে ইত্যাদি।
প্রতিকার ও প্রতিরোধঃ– চিকিৎসকের পরামর্শমতো মাথাব্যথার কারণ নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে হবে।- কোনও জন্মগত ত্র“টি থাকলে সার্জারির মাধ্যমে তার চিকিৎসা নিতে হবে।- সিগারেট, মদ বা অন্য কোনও নেশা করার অভ্যাস থাকলে বাদ দিতে হবে।
– দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন। প্রয়োজনে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার জন্য ওষুধ সেবন করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত হাঁটাচলা ও ব্যয়াম করা উচিত।
– প্রতিদিন পরিমিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।- সঠিক সময়ে ঘুমানো ও ঘুম থেকে ওঠা।
– যেসব ওষুধ মাথাব্যথা বাড়াতে পারে (মাইগ্রেনের েেত্র জন্মনিরোধক বড়ি) তা বাদ দিতে হবে।যদিও মাথাব্যথা একটি সাধারণ অসুখ, তবু সঠিক রোগ নির্ণয় ও নিয়ম-কানুন মেনে চললে তা থেকে সম্পুর্ণ মুক্ত থাকা না গেলেও রোগের প্রভাব কমানো সম্ভব। এজন্য সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435 // 01670908547
ইমু 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন
Face Book page : ( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *