মৈশাদীতে হাড় ভাঙ্গা চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা ॥ মৃত্যুর ঘটনা অহরহ

images44444ফাহিম শাহরিন কৌশিক
চাঁদপুর সদর উপজেলার ৬নং মৈশাদী ইউনিয়নের দক্ষিণ হামানকর্দ্দী গ্রামে হাড় ভাঙ্গা চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতর হয়ে অনেক শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ অনেকে মারা যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি হাড় ভাঙ্গা চিকিৎসা নিতে আসা সাহেব বাজার সংলগ্ন চাঁদপুর গ্রামে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র শান্ত মোল্লা (৯) অপচিকিৎসার কারণে মৃত্যু ঘটেছে। গতকাল ২০ এপ্রিল রোববার বিকেলে ৬নং মৈশাদী ইউনিয়ন সংলগ্ন সাবেক মেম্বার মরহুম আক্কাস খানের ছেলে বাবলু খান তার বাড়ির সামনের নিজের দোকানের সামনে মাটিতে ফেলে হাড় ভাঙ্গাজণিত শিশু রোগীদের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার দৃশ্য চোখে পড়ে। বিকেলে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সিএনজি স্কুটার ও মোটর গাড়িযোগে শিশু, বৃদ্ধ ও বিভিন্ন বয়সী হাড়ভাঙ্গা রোগীদের দালালদের মাধ্যমে এনে চিকিৎসা দেয়ার দৃশ্য ধারন করা হয়।
এসময় দেখা যায়, চিকিৎসক বাবলু তার দোকানের সামনের পাকা স্লাবে বসে শিশু রোগীদের লতা-পাতা দিয়ে কাঠি দ্বারা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে অপচিকিৎসা দিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চিকিৎসা নিতে কচুয়া থেকে আসা এক শিশু হাত জোর করে ধরে লতা-পাতা দিয়ে কাপড় পেঁচানোর সময় শিশুটি চিৎকার করতে থাকে। এসময় শিশুটির চিৎকারে আশপাশে থাকা মানুষজন হতবাক হয়ে যায়। তারা বলেন, বাবলু চিকিৎসার নামে কোনো অচেতন করা ছাড়াই এভাবে অপচিকিৎসা দেয়ায় হাড় ভাঙ্গা রোগীরা ব্যথার যন্ত্রণায় আত্মনাৎ করতে থাকে। বাবলুর নেই কোনো চিকিৎসার সনদ, নেই কোনো অভিজ্ঞতা। অভিযোগ রয়েছে প্রতিদিন বাবলু বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দালালদের মাধ্যমে হাড়ভাঙ্গা রোগীদের এসব অপচিকিৎসা দিয়ে থাকে।
প্রতি রোগীর কাছ থেকে ৪-৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মাসে লাখ লাখ টাকা। সরকারের কোনো রাজস্ব আয় (ইনকাম ট্যাক্স) না দিয়ে অবৈধভাবে টাকা ইনকাম করে যাচ্ছে। এছাড়া মৈশাদী এলাকায় আরো কয়েকজন কবিরাজ রয়েছে। কিন্তু বাবলু কবিরাজ অন্যদের তুলনায় দালালদের দিয়ে কৌশলে সবচে’ বেশি রোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সে এলাকায় প্রভাব খাঁটিয়ে ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে দিনের পর দিন এভাবে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিয়ে আসছে। স্থানীয় এলাকার মানুষ তার এ অপচিকিৎসার কথা জানা সত্বেও ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।
চাঁদপুর জেলার বাইরে থেকে আসা লোকদের সেখানে থাকার জন্য বাসা ভাড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। ভাড়ার ব্যাপারেও হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। বিগত ২০ বছর যাবৎ তার বাবা মৃত আক্কাস মেম্বারও এ চিকিৎসা করে গেছেন। কিন্তু সে যে হিসেবে মানুষের কাছ থেকে টাকা রাখছে তার বাবার তুলনায় অনেক অনেক বেশি। তার মৃত পিতার চিকিৎসা সেবার একটা সুনামও ছিলো। রোগীরা খুশি মনে তাকে যা দিতেন, এতেই তিনি সন্তুষ্ট থাকতেন। অথচ তার ছেলের কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়া অনেক রোগী ব্যথার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুও ঘটেছে। সচেতন মহল মনে করেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এসব অপচিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করলে অনেকাংশে কমে যাবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *