যে কারণে বাড়ছে বাঙালির বিবাহবিচ্ছেদ

1দেশের গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে বিবাহবিচ্ছেদের হার ক্রমশ বাড়ছে। এক্ষেত্রে নারীরাই এখন এগিয়ে আছেন। এই বিচ্ছেদের একাধিক কারণ আছে এবং সেটার অনুসঙ্গও ভিন্ন ভিন্ন। অনেকে এটাকে কথিত আধুনিকতার প্রভাবের কুফল বলেও মনে করছেন।

ঢাকায় সদ্য বিচ্ছেদ হওয়া এক নারী। বিচ্ছেদটা তিনি নিজেও চাননি। কারণ বিয়ের আগের স্বামীর রূপ পরিবর্তন হওয়ায় বিয়েটি এক বছরের বেশি টেকানো যায়নি। তার মতে, ‘সংসার নামের টর্চার সেলে থাকার চেয়ে বিচ্ছেদ অনেক ভালো।’

আবার এর বিপরীত ঘটনাও দেখা যায় পুরুষের দিক থেকেও। আর এসবে পরস্পরকে দোষারোপ অবধারিত। তবে কথা বললেই বোঝা যায় কোনোপক্ষই এখন আর মুখ বুজে সবকিছু সহ্য করতে চায় না।

এই যে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ছে তার সুনির্দ্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবুও আপাত দৃষ্টিতে সামাজিক অস্থিরতার প্রভাব, বেশি ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী হওয়া, ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের প্রভাবকেই এর কয়েকটি মূল কারণ মনে করা হচ্ছে। কিন্তু পরিসংখ্যান কী বলে দেখা যাক।

পুরুষ ৩০ শতাংশ, নারী ৭০ শতাংশimag
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দু’টি এলাকায় ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় ২৩০৯টি, যার মধ্যে ১৬৯২টি স্ত্রী ও স্বামী করেছে ৯২৫টি। ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত তালাকের সংখ্যা ৩৫৮৯টি। এর মধ্যে ২৩৮১টি স্ত্রী ও ১২০৮টি স্বামী। এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, তালাক দেয়া পুরুষ ৩০ শতাংশ, আর নারী ৭০ শতাংশ।

একাধিক পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে মাত্র তিন বছরে ঢাকা শহরে তালাকের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নারীদের আইনি সহায়তা কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যত অভিযোগ নারীরা তাদের কাছে নিয়ে আসেন তার মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি সন্তানকে নিজের কাছে রাখার দাবি।

তালাক হওয়ার কারণimages (3)

জাতীয় মহিলা পরিষদ নারীদের তালাকের ক্ষেত্রে প্রধানত চারটি কারণকে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো- যৌতুক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং স্বামীর পরকিয়া। পুরুষের ক্ষেত্রে স্ত্রীর পরকিয়া ও যৌতুকের কারণটাই প্রধান বলে জানা যায়।

সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, নারীদের মধ্যে শিক্ষার হার যেমন বাড়ছে, তেমনি তাদের সচেতনতাও বাড়ছে। বাড়ছে স্বনির্ভরতাও। তাই তারা এখন আর সব অত্যাচার এবং অনাচার মুখ বুজে সহ্য করতে চাইছেন না। নির্যাতন সহ্যের চেয়ে বিবাহবিচ্ছেদকেই শ্রেয় মনে করেন।imagesটটটটট

এছাড়া নানা কারণে কিছু নারী-পুরুষ উভয়ই বিয়ের পর অনৈতিক সম্পর্কে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। আর তাও বিচ্ছেদ ডেকে আনছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হল বিশ্বাসহীনতা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাসহীনতা বাড়ছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সবাই নিজের একটা জগৎ তৈরি করে। সেখানেও স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের অজান্তে নতুন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন। আর যখন শেষ পরিণতির মুখোমুখি হন তখন আর বিচ্ছেদ ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

ক্ষতি যা সবই নারীর
নারীদের কাছ থেকে এখন বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন বেশি এলেও বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকের জন্য বাংলাদেশে আবার নারীদেরই ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বেশি। বিবাহবিচ্ছেদের কারণে নারীকে সমাজের কাছে হেনস্তা হতে হয় নানাভাবে। বলা হয় ‘চরিত্রদোষের’ কথা। আর দ্বিতীয় বিয়ে করতে গিয়েও পড়তে হয় নানা প্রশ্নের মুখে।

বিবাহবিচ্ছেদের প্রভাব images (1)
বিচ্ছেদের প্রধান শিকার হন সন্তানরা। তারা বেড়ে ওঠে ‘ব্রোকেন ফ্যামিলির’ সন্তান হিসেবে। যা তাদের স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। তারা এক ধরনের ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে’ ভোগে।

মনোরোগ চিকিৎসকরা মনে করেন, সন্তানরা যদি বাবা-মায়ের স্বাভাবিক সঙ্গ এবং ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তাদের জীবন হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক। তারা সমাজকে, পরিবারকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখে। তাদের মধ্যে জীবনবিমুখতা তৈরি হয়। যা ভয়াবহ।

এর কারণ খুঁজেতে গেলে উত্তরটা যতো সহজে পাওয়া যায় সমাধান কিন্তু সত্যিই কঠিন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবে কখনো কখনো অনিবার্য হয়ে উঠতেই পারে। তবে স্বামী বা স্ত্রীর মনে রাখা উচিৎ তাদের বিচ্ছেদ যেন পারিপার্শ্বিক কিছুকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। তাদের সন্তান বাবা-মা, সামাজিক পরিস্থিতি সবকিছু মাথায় রেখে চলা উচিৎ। আর নিজেদের মধ্যে শুরু থেকেই বিশ্বাসের ভীত গড়ে তুলতে হবে। থাকতে হবে স্বচ্ছতা। থাকতে হবে সহনশীলতা এবং সমঝোতার মানসিকতা।

ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog

( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *