ওরাল সেক্স নারীর দেহে ‘বিভি’ রোগ ছড়ায়‍: গবেষণা

সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা যাচ্ছে, ওরাল সেক্সের মাধ্যমে নারী যৌনাঙ্গে সংক্রমণ ঘটে ‘ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস’ বা ‘বিভি’ নামের রোগ।

প্লস বায়োলজি নামের এক জার্নালে এ বিষয়ে গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে বলা হচ্ছে, ওরাল সেক্সের মাধ্যমে নারীর দেহে ‘বিভি’ রোগ বাসা বাঁধে। তবে ‘বিভি’ কোনো সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ বা যৌনরোগ নয়। সাধারণত নারীর ভ্যাজাইনা বা যোনিতে সচরাচর যেসব ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেখানে কোনো ভারসাম্যের অভাব দেখা গেলে বিভি রোগ হতে পারে।

যে সব নারী এই রোগের শিকার হন, তাদের দেহে বিভি’র কোনো উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে। তবে তাদের যোনি থেকে যে রস নিঃসৃত হয় তাতে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

সাধারণত মানুষের মুখে যেসব ব্যাকটেরিয়া থাকে তা নারীর যৌনাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে কী প্রভাব পড়ে, এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সেটাই দেখার চেষ্টা করেছেন।

বিভি বা ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস কী? বিভি এমনিতে কোনো সিরিয়াস রোগ নয়। তবে যেসব নারী এ রােগে আক্রান্ত হন, তারা অন্য সব যৌনরোগের শিকার হতে পারেন এবং তাদের মূত্রনালীতে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।

আবার সন্তানসম্ভবা নারী বিভি রোগে আক্রান্ত হলে সন্তান স্বাভাবিক সময়ের আগেই জন্ম নেয়ার ঝুঁকি থাকে।

কীভাবে জানবেন আপনি বিভি আক্রান্ত বিভি নারী স্বাস্থ্যের একটা সাধারণ সমস্যা। যাদের ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস বা বিভি হয়, তাদের যোনি থেকে এক ধরনের রস নিঃসৃত হয় এবং তাতে উৎকট আঁশটে গন্ধ থাকে।

যোনি থেকে স্বাভাবিক যে রস বের হয়, বিভি হলে তার রঙ এবং ঘনত্বে পরিবর্তন দেখা যায়। বিভি হলে যোনি রস পাতলা পানির মতো হয় এবং দেখতে অনেকটা ঘোলাটে সাদা হয়।

আপনার বিভি হয়েছে কিনা, তা যোনি রসের নমুনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়। পরীক্ষায় সংক্রমণের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, জেল কিংবা ক্রিম ব্যবহার করে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

গবেষণায় নতুন কী জানা যাচ্ছে? যেসব নারীর বিভি নেই, তাদের যোনিতেও বহু ‘ভাল’ ব্যাকটেরিয়া থাকে। এদের বলা হয় ল্যাকটোব্যাসিলাই। এরা পিএইচ লেভেল কমিয়ে যোনিপথের অ্যাসিডিক বা অম্লভাব ধরে রাখে। কিন্তু কখনও কখনও এই স্বাস্থ্যকর ভারসাম্যটি বিনষ্ট হলে যোনিতে অন্যান্য জীবাণুর বংশ বৃদ্ধি ঘটে।

এ রকমটা কেন ঘটে, তা পুরোপুরিভাবে স্পষ্ট না। তবে নিচের কারণগুলোর জন্য বিভি হতে পারে-

* আপনার যৌনজীবন খুবই ব্যস্ত (যেসব নারী সেক্স করেন না তাদেরও বিভি হতে পারে।)

* আপনার যৌন সঙ্গীর বদল ঘটেছে

* আপনি আই-ইউ-ডি জন্মরোধ ব্যবস্থা ব্যবহার করেন * আপনি আপনার যোনির আশেপাশে সুগন্ধি ব্যবহার করেন

প্লস বায়োলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা থেকে আরো জানা যাচ্ছে, মানুষের মুখ-গহ্বরে মাড়ির রোগ কিংবা ডেন্টাল প্লেক থাকলে তাতে যে ব্যাকটেরিয়া দেখা যায়, তার কারণে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস বা বিভি হতে পারে।

এই ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতিকর আচরণ সম্পর্কে জানার জন্য বিজ্ঞানীরা মানুষের যোনি এবং ইঁদুরের ওপর এই গবেষণা চালিয়েছেন।

তারা দেখেছেন, বিশেষ একটি ব্যাকটেরিয়া- ফুসোব্যাকটেরিয়াম নিউক্লিয়েটাম- বিভি’র সাথে সম্পর্কিত ব্যাকটেরিয়াগুলোর বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. অ্যামান্ডা লুইস এবং তার সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, ওরাল সেক্স থেকে কোনো কোনো সময় নারীর যোনিতে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস হতে পারে, এই গবেষণা থেকে সেই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

দুটি নারীর মধ্যে লেসবিয়ান সম্পর্কসহ বিভিন্ন ধরনের যৌনসঙ্গমের ফলে বিভি হতে পারে- একথা বিশেষজ্ঞদের অজানা নয়।

ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সেক্সসুয়াল হেলথ-এর মুখপাত্র অধ্যাপক ক্লডিয়া এস্টকোর্ট বলছেন, এই গবেষণার মধ্য দিয়ে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা আরও পরিষ্কার হবে।

অন্য কোনো সমস্যা থাকুক বা না থাকুক, ওরাল সেক্সের মাধ্যমে যৌনরোগের জীবাণু এবং নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া স্ত্রী অঙ্গে প্রবেশ করতে পারে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।