নি:সন্তান দম্পতিদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ

বিবাহিত দম্পতিদের সন্তান না হওয়ার বিড়ম্বনা সব সমাজেই বিদ্যমান। সাধারণত ২০-৩৫ বছর বয়স্ক দম্পতিরা একত্রে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে জীবনযাপন করে এবং কোনো প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণের সাহায্য না নিয়ে যদি এক বছরের মধ্যে সন্তান উৎদপাদনে সক্ষম না হন তাহলে তাদের বìধ্যত্ব werdfghহয়েছে বলা যাবে। যদি স্ত্রীর বয়স ২৫ কিংবা তার বেশি হয়, তাহলে সময়সীমা (দাম্পত্য জীবন) হবে ছয় মাস। এক সমীক্ষায় জানা যায়, ২০-৪০ বছর বয়সের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ২০ শতাংশ সন্তান উৎপাদনে অক্ষম। সন্তানহীন দম্পতিদের মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষের দোষেই এটা হয়ে থাকে। অথচ সন্তানহীনতার দায় অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের বহন করতে হয়। অনেক মেয়েকে এ জন্য অনেক নির্যাতনও সহ্য করতে হয় পরিবার ও সমাজের কাছ থেকে। সন্তানহীনতার অভিযোগে স্ত্রীকে ত্যাগ করে অনেক স্বামী আবারো বিয়ে করে থাকেন সন্তানের আশায়। কিন্তু বাস্তবে সন্তান না হওয়ার দায় কেবল স্ত্রীর নয়, স্বামীরও। তাই সন্তানহীন দম্পতি পরীক্ষার সময় স্বামী ও স্ত্রী উভয়কেই ভালোভাবে পরীক্ষা করা উচিত।
এখানে সন্তানহীনতার বিষয়টিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা হলেও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এর প্রকৃত কারণ বোঝার দরকার আছে। কুরআনের সূরা আশ-শূরা, আয়াত ৪৯-৫০-এ বলা হয়েছে, ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তায়ালারই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদের দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বìধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজন ও ক্ষমতাশীল।’ তাই যারা মুসলিম তাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের কারণ উপাত্ত জানার পরও কুরআনের আলোকে বিষয়টিকে বুঝতে হবে। এ ছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকেও দেখা যাচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী সব দিক থেকে স্বাভাবিক হলেও এবং নিয়ন্ত্রণহীন নিয়মিত সহবাস করলেও যে তাদের সন্তান হবেই এ কথা বলা যায় না। সুস্খ, স্বাভাবিক এবং ইচ্ছুক দম্পতিদের সন্তান কবে হবে তা সব সময় বলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সব সময়েই কিছু অনিশ্চয়তা থেকে যায়। তাই কুরআনের ওই সিদ্ধান্তকেই সবার স্মরণে রাখা উচিত।
আমরা জেনেছি, বছরব্যাপী স্বাভাবিক দাম্পত্যজীবনে সন্তান না এলে তাকে বìধ্যত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যেসব ক্ষেত্রে মহিলার গর্ভসঞ্চার হচ্ছে, কিন্তু জীবিত সন্তান প্রসব হচ্ছে না। এটাও এক ধরনের বìধ্যত্ব। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত স্বামীর ত্রুটি থাকে না। যেসব ক্ষেত্রে গর্ভধারণ একবারো হয়নি, সেখানে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই ত্রুটি থাকতে পারে। আবার অনেক সময় প্রথম সন্তানের পর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দম্পতির ইচ্ছা এবং চেষ্টা সত্ত্বেও বিলম্বিত হয়। এ-ও একধরনের বìধ্যত্ব। একে সাময়িক বìধ্যত্ব বলা হয়।
পুরুষের যেসব অসুখের কারণে স্ত্রীর সন্তান লাভ সম্ভব হয় না তার মধ্যে রয়েছে অন্তস্রাবী গ্রন্থির অসুখ, যেমন হাইপোথ্যালামাসের (ঐীহসয়ভথলথশৎঢ়) রোগ, কলম্যানস সিনড্রম (কথললশথষ’ঢ় ঝীষনড়সশপ)।

এটি একটি বংশগত রোগ। পিটুইটারী গ্রন্থির অসুখ, যেমন টিউমার, সিস্ট ইত্যাদি। থাইরয়েড হরমোনের অভাব বা মিক্সিডিমা। এ ছাড়া রয়েছে জিনঘটিত কারণ (এপষপয়মধ ঈথৎঢ়প), যেমন¬ প্রকৃত যৌন গ্রন্থির অভাব, জন্মগতভাবে অণ্ডকোষ না হওয়া ইত্যাদি। আবার ‘ক্লাইন ফেলটার সিনড্রোম (কলমষপ ঋপলয়পড় ঝীষনড়সশপ)’ নামক একপ্রকার ক্রোমজমের অসুখের ফলেও শুক্রকীটের অভাব হতে পারে।
অন্তস্রাবী গ্রন্থি ছাড়াও আরো অনেক কারণে পুরুষ বìধ্যত্ব দেখা দিতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে পুষ্টির অভাব, বিশেষত ভিটামিন বি এবং ই। অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত মদপান। অতিরিক্ত গরমে যারা কাজ করেন, যেমন¬ বাস, ট্রাকচালক, খনিশ্রমিক। এদের শুক্রকীটের পরিমাণ কম হতে পারে। কারণ শুক্রকীটের জন্ম ও বৃদ্ধির জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রয়োজন। ভেরিকোসিল (ঠপড়মধসধপলপ), জীবাণু সংক্রমণ, মাম্পসের কারণে অণ্ডকোষের প্রদাহ (গৎশহঢ় ঙড়ধভময়মঢ়), গনোরিয়া, যক্ষ্মা, কিডনি, মূত্রনালী বা মূত্রাশয়ের সংক্রমণ, ডায়াবেটিস মেলাইটাস, শুক্রকীটের গতিপথে কোনো প্রকার বাধা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব (ওশশৎষসলসবমধথল ধথৎঢ়প), প্রভৃতি কারণেও পুরুষের বìধ্যত্ব হতে পারে। ক্যান্সারের ওষুধ ব্যবহার, মানসিক অবসাদের ওষুধ, ম্যালেরিয়ার ওষুধ, কিছু উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, বিকিরণ বা রে, ইত্যাদিও বìধ্যত্বের কারণ হতে পারে। বìধ্যত্বের এসব জানা কারণ ছাড়াও ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো কারণ পাওয়া যায় না। এ জন্য নি:সন্তান দম্পতিদের চিকিৎসায় রোগীর ইতিহাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষের ইতিহাসে তার শৈশব ও বাল্যকালের অসুখ, পুরাতন ও দীর্ঘস্খায়ী অসুখ, পারিবারিক অসুখ, পেশা, ধূমপান, মদ্যপানের ইতিহাস, ওষুধের নেশা, শল্য চিকিৎসা ও আঘাতের বিবরণ এবং বিবাহিত জীবনের ইতিহাস। পুরুষের বীর্য পরীক্ষা ছাড়াও প্রয়োজন হতে পারে টেসটিসের বাইয়পসি, বীর্য কালচার, বিভিন্ন হরমোনের পরিমাণ, ক্রোমজম পরীক্ষা ইত্যাদি।

মহিলাদের যেসব কারণে বìধ্যত্ব দেখা দিতে পারে, যেমন¬ যেকোনো দীর্ঘস্খায়ী অসুখ, পুষ্টির অভাব বা অতিরিক্ত মেদবহুল আতঙ্ক বা ভয়, জরায়ু মুখের অসুখ, জরায়ুর অসুখ, জন্মগতভাবে জরায়ু না থাকা বা ছোট জরায়ু, এক বা দুই শৃঙ্গযুক্ত জরায়ু, দুই ভাগে বিভক্ত জরায়ু, জরায়ুতে জীবাণুর সংক্রমণ (টিবি, গনোরিয়া) জরায়ুতে টিউমার ইত্যাদি।
মহিলাদের বìধ্যত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এন্ডোমেট্রিওসিস (ঊৎনসশপয়ড়মসঢ়মঢ়), যা সাধারণত ৩০-৩৫ বছর বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। বিলম্বে বিবাহ এবং সন্তান সম্ভাবনা বিলম্বিত করা এর একটি প্রধান কারণ। এর প্রধান লক্ষণ ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা, যৌন মিলনে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা। ডিম্বনালীর অসুখের কারণেও বìধ্যা হতে পারে। ডিম্বনালীর প্রধান কাজ ডিম্বাণু ও শুক্রকীটের মিলনের স্খান ঠিক করা এবং ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের সৃষ্টি করা। এই ডিম্বনালী যখন জীবাণুর দ্বারা সংক্রমিত হয় তখন এর শ্লেষ্মাঝিল্লির ক্ষতি হয়। আমাদের দেশে টিবি, গনোরিয়া, স্ট্যাকাইলোকক্কাস, স্ট্রেপ্টোকক্কাস, বিকোলাই ইত্যাদি জীবাণুর সংক্রমণ ডিম্বনালীতে বেশি হয়ে থাকে। শল্য চিকিৎসার কারণেও ডিম্বনালী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যেমন¬ ডিএন্ডসি, এন্ডোমেটিয়াল বাইয়পসি বা অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশনের ফলেও ডিম্বনালীর অসুখ হতে পারে।
হরমোনের অভাবেও বìধ্যত্ব দেখা দেয়। মহিলাদের ঋতুচক্র এবং ডিম্বাণু নির্গত হওয়া নানা অন্তস্রাবী গ্রন্থির হরমোনের ওপর নির্ভরশীল। এর যেকোনো হরমোনের অভাবে তাই বìধ্যত্ব দেখা দিতে পারে। যেমন¬ হাইপোথেলামসের আঘাত, টিউমার, পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার; অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার, থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ, ডিম্বাশয়ের অসুখ¬ টিউমার, সিস্ট ইত্যাদি কারণে হরমোনের গোলমাল দেখা দিয়ে থাকে।
নারীর শরীরজাত অ্যান্টিবডিও অনেক সময় পুরুষের শুক্রকীট ধ্বংস করে দেয় বা শুক্রকীটের জরায়ু মুখে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে। এই অ্যান্টিবডি পুরুষের রক্ত বা বীর্যে এবং মেয়েদের রক্ত বা জরায়ুমুখের শ্লেষ্মাঝিল্লিতে পাওয়া যায়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, মানসিক চাপ। অত্যধিক মানসিক চাপ বìধ্যত্বের কারণ হতে পারে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখন একমত। এমনকি সন্তান লাভের অদম্য বাসনাও সন্তান ধারণে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য সন্তান লাভে ইচ্ছুক দম্পতিদের সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মানসিক ও শারীরিক অবস্খাতেই সন্তান লাভে চেষ্টা করা উচিত। তাই কোনরূপ ভয়, আতঙ্ক, দুশ্চিন্তা না করে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত কামনা করে সন্তান লাভের চেষ্টা করলে তারা সফল হতে পারবেন।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
==============================
হোমিওপ্যাথি একটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। বিজ্ঞ চিকিৎসক, যারা এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত, তারা নি:সন্তান দম্পতিদের চিকিৎসা দিতে পারেন। এ ব্যাপারে বাজারে যেসব বাণিজ্যিক প্রচারণা রয়েছে তাতে প্রলোভিত না হয়ে আধুনিক উচ্চশিক্ষিত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন। মনে রাখবেন, চিকিৎসায় যারা গ্যারান্টি দেবে তারা আপনার সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেবে। সঠিক কারণ নির্ণয় করে সঠিক পদ্ধতিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করলে নি:সন্তান দম্পতিরা উপকার পাওয়ার আশা করতে পারেন।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435 // 01670908547
ইমু 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

ইমেইল-dr.zaman.polash@gmail.com

ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন
 ফেসবুক পেইজে লাইক দিন  https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *