পুরুষের বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী ভুঁড়ি, দাবি গবেষকদের

পুরুষের বন্ধ্যাত্বের জন্য ভুঁড়িকেই অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করা হচ্ছে। ভুল খাদ্যাভ্যাস, খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম এবং অবৈজ্ঞানিক উপায়ে জীবনযাপনের কারণে দিন দিন পেটে জমা মেদই বাবা হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে দাবি গবেষকদের। 

সম্প্রতি কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক দল পুরুষদের মধ্যে একটি পরীক্ষা চালান। মোট ১৫ জন ওবেসিটিতে আক্রান্ত পুরুষের স্পার্ম নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখেন, ওবেসিটিতে আক্রান্ত পুরুষদের শুক্রাণুর জিনে খিদে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বেশ দুর্বল হয়। স্পার্ম কাউন্টও কমে যায় এই ভুঁড়ি ও ওবেসিটি থেকেই। সেই সংখ্যা এতটাই কমের দিকে থাকে যে সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রশ্নচিহ্ন উঠে আসে। পুরুষদের নানা শারীরিক কসরত ও নিয়মের মধ্যে রেখে ওবেসিটি তাড়ানোর পরে দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। তাতে দেখা যায়, স্পার্ম কাউন্ট যেমন বেড়েছে তেমনই স্পার্ম ঘন ও শক্তিশালী হয়েছে।

শুধু তাই-ই নয়, এর আগেও ২০১৬ সালে আর একটি পরীক্ষা করেছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই গবেষকরা। তাতে দেখা গিয়েছিল, ওবেসিটি আক্রান্ত বাবার স্পার্মের সঙ্গে সন্তানের শরীরে প্রবেশ করে মোটা হওয়ার জিন। এমন বাবার সন্তানরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মোটা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বেশির ভাগই ওবেসিটিতে আক্রান্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে এমন ছয়জন পুরুষের উপর গবেষণা চালানো হয়, যারা প্রত্যেকেই ওজন কমানোর জন্য সার্জারি করিয়েছেন। সার্জারির এক বছর পর তাদের স্পার্মের ডিএনএ-তে প্রায় ৫ হাজার রকম গঠনগত পরিবর্তনও হয়েছে। বেড়েছে খিদের উপর নিয়ন্ত্রণ। এবং অস্ত্রোপচারের পর নেওয়া এদের দ্বিতীয় সন্তানরাও ওবেসিটি মুক্ত।

কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘‘চলতি ধারণা বলে, গর্ভবতী নারীদের নিজেদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হয়। মদ, ধুমপান থেকে শত হাত দূরে থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের গবেষণা বলছে শুধু হবু মা নয়, সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য সাবধানে চলতে হয় হবু বাবাকেও।’’

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মার্থা হাজরার মতে, এই বিষয় নিয়ে এর আগেও নানা গবেষণা চলেছে। পুরুষ-নারী নির্বিশেষে ওবেসিটি সন্তান উৎপাদনের পথে অন্যতম বাধা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষরা এই বিষয়ে খানিকটা উদাসীন থাকেন, সন্তান উৎপাদনের পথে যে তারাও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন এই সহজ বিজ্ঞান সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন। পেটের অতিরিক্ত মেদের কারণে পিতৃত্বের বা মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত থেকেছেন এমন দম্পতির সংখ্যাও কম নয়।’’

সূত্র: আনন্দবাজার