শিশুর লিভারের রোগবালাই

লিভার বা যকৃৎ আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন, হরমোন তৈরি করা, কিডনি ও পিত্তের সাহায্যে শরীরকে বিষমুক্ত করা, বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা এবং দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে শরীরে লিভার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

জন্ডিস : জন্ডিস কোনো রোগ নয়, লিভার রোগের উপসর্গমাত্র। রক্তে বিলিরুবিন নামক উপাদান স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে গেলে চোখ ও প্রস্রাব শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় হলুদ হতে দেখা যায়। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ৫ হলে ভালো আবার ২৫ হলে খারাপ। অবশ্য শুধু বিলিরুবিনের মাত্রা থেকে লিভারের অসুখের মাত্রা বোঝা সম্ভব নয়। এর জন্য আরও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন। বলে রাখা দরকার, শুধু লিভারের অসুখেই জন্ডিস দেখা যায় না, আরও অনেক কারণেও জন্ডিস হতে পারে।

হেপাটাইটিস : হেপাটাইটিস হল লিভারের প্রদাহ। এ প্রদাহ দুই ধরনের ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী। ভাইরাস এ, বি, সি, ডি এবং ই দিয়ে মূলত হেপাটাইটিস ছড়ায়। এর মধ্যে এ এবং ই ভাইরাস ক্ষণস্থায়ী হেপাটাইটিসের জন্য দায়ী। এ এবং ই ভাইরাস দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। অন্যদিকে বি এবং সি ভাইরাস সংক্রমিত হয় রক্ত ও দেহরসের মাধ্যমে। বি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে লিভারের কার্যক্রম প্রথমে স্বাভাবিক হয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে শতকরা ৫০ জনের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বা হেপাটাইটিস রোগ সৃষ্টি করে। সি ভাইরাসের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের হার ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

হেপাটাইটিসের লক্ষণ : হেপাটাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণগুলো ঘুরেফিরে প্রায় একই রকম। পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা, দুর্বলতা, স্বল্প জ্বর, হাত-পা চুলকানো ইত্যাদি। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে পানি জমে পেট ফুলে যাওয়া, রক্তবমি, আলকাতরার মতো কালো পায়খানা, এমনকি শিশু অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা : আক্রান্ত শিশুর রক্ত পরীক্ষা করলে হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত কিনা তা বোঝা যায়। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা দেখার পাশাপাশি লিভার এনজাইমের মাত্রা দেখার প্রয়োজন হয়।

শিশুটি কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হল তা দেখার জন্য রক্তের আলাদা পরীক্ষা করতে হয়। রোগের তীব্রতা বোঝার জন্য রক্তের প্রোথমবিন টাইম ও অ্যালবুমিন পরীক্ষা করা হয়।

রক্তের অ্যামোনিয়া মেপে শিশুর অজ্ঞান হওয়া সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। খাদ্যনালির এন্ডোসকপি ও পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করে লিভার রোগের তীব্রতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কখনও কখনও লিভারের অবস্থা জানার জন্য বায়োপসি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা : শিশুর পুষ্টির দিক খেয়াল করে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। পর্যাপ্ত প্রোটিনের সঙ্গে ফলমূল দেয়া যাবে। অল্প লবণ দিয়ে রান্না করা খাবারের সঙ্গে পরিমিত পানি শিশুর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে। এ সময় অল্প সেদ্ধ করা, হলুদ ছাড়া খাবার, ডাবের পানি, আখের রস, শিং মাছের ঝোল প্রভৃতির বিশেষ কোনো ভূমিকা নেই। কুসংস্কার বাদ দেয়াই ভালো।

শিশুর দেহে পুষ্টির মাত্রা বজায় রেখে খাবার খাওয়ালে, সঙ্গে ইনফেকশন ও রক্তপাত ঠেকাতে পারলে লিভারের কোষগুলো সংগঠিত হয়ে কাজ শুরু করে।

এ সমস্যার জন্য একজন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়ে মেডিসিন খাবেন, নিজে নিজের ডাক্তারি করবেন না,কারন রোগীর রোগের লক্ষন মিলতে হবে অন্যথায় উপকার পাওয়া যাবে না।
প্রতিরোধ : শিশুকে সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। পরিমিত বিশ্রাম দিতে হবে। এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রধান উপায় হল শরীরে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, অর্থাৎ টিকা নেয়া। তাই হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস এ’র ভ্যাকসিন নিতে হবে প্রত্যেককে। অযথা ভয় না পেয়ে সময়মতো চিকিৎসা নিন, ভালো থাকুন।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435
ইমো  01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ইমেইল- dr.zaman.polash@gmail.com

ওয়েব সাইটwww.zamanhomeo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *