হার্টের ভালভ কী? এর গুরুত্ব, কাজ কী?
উত্তর : আসলে হার্ট একটি পাম্প মেশিনের মতো কাজ করে। পাম্প করার জন্য কিছু মাংসপিণ্ড থাকে। এখন হার্টের মাংস যেমন থাকে, যেগুলোকে মায়োকার্ডিয়াম বলি আমরা, তেমনি একদিকে রক্ত চলার জন্য কিছু ভালভ লাগে। এ জন্য ভেতরে চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। আর দুটো বড় বড় রক্তনালি রয়েছে। একদিকে চলার জন্য এখানে চারটি ভালভ কাজ করছে। এর মধ্যে একটিকে বলি, মাইট্রাল ভালভ, আরেকটিকে বলি এওটিক ভালভ। এ ছাড়া রয়েছে পালমোনারি ভালভ, ট্রাইকসপিড ভালভ। এ চারটি ভালভ রয়েছে হার্টের ভেতর। এই ভালভগুলোতে কখনো কখনো আবার রোগও হয়। এই রোগের জন্য আমাদের দেশে খুব প্রচলিত হচ্ছে রিউমেটিক হার্ট ডিজিস। রিউমেটিক ফিভারের পরে হার্টের ভালভের সমস্যায় অনেকে আক্রান্ত হয়। এ ধরনের রোগী অনেক পাই।
ভালভের সমস্যা হলে ক্ষতি কী?
উত্তর : ভালভে সমস্যা হলে বিভিন্ন ক্ষতি হয়। হার্টের রক্ত যাওয়ার কথা একদিকে, যাচ্ছে অন্যদিকে। পেছনের যে চেম্বার, সেই চেম্বারে রক্ত বেশি জমে যাবে। সেই চেম্বারে রক্ত বেশি জমার জন্য এটি আস্তে আস্তে বড় হবে। বড় হতে হতে একসময় হার্ট ফেইলিউর হয়ে যাবে। রক্ত যেটি সামনের দিকে যাওয়ার কথা, সেই পরিমাণে যাবে না। পেছনের দিকে যেতে থাকবে। পেছনের দিকে রক্ত থাকলে আস্তে আস্তে ফুসফুসের ওপর চাপ পড়বে। তাহলে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে। পালমোনারি ইডিমা তৈরি হতে পারে। আবার দেখা যায়, লিভার ও পায়ে পানি জমে যেতে পারে। এতে কনজেসটিভ হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।
দেখা যাচ্ছে, যদি ভালভের সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে রক্ত ঠিকমতো এক চেম্বার থেকে আরেক চেম্বারে না যাওয়ার জন্য হার্ট ফেইলিউরের দিকে চলে যেতে পারে। যাকে আমরা কনজেসটিভ হার্ট ফেইলিউর বলে থাকি।
হার্টের ভালভ চিকন হয়ে গেলে, মানে সরু হয়ে গেলে দেখা যায়, সামনের দিকে যেতে পারবে না। সামনের দিকে যেতে না পারলে সামনের যেসব অঙ্গ, এতে রক্ত পরিবহন, খাদ্য, পুষ্টিরও কিছুটা অভাব হবে। একটি হলো চিকন হয়ে যাওয়া, আরেকটি হলো উল্টা দিকে রক্ত যাওয়া। সরু হলে আমরা একে বলি স্টোনোসিস, মাইট্রাল স্টোনোসিস, এওটিক স্টোনোসিস।
উল্টা দিকে রক্ত চলে গেলে আমরা একে রিগারজিটেশন বলি। যেমন : মাইট্রাল রিগারজিটেশন বা এওটিক রিগারজিটেশ। উল্টা প্রবাহ।
প্রশ্ন : হার্টে ভালভে কেন সমস্যা হয়?
উত্তর : রিউমেটিক ফিবারের কারণে স্টেটোকক্কাস জীবাণুর মাধ্যমে গলায় সংক্রমণ হয়। এই সংক্রমণের কারণে, অটোইমিউন প্রসেসের কারণে ভালভগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ভালভগুলো সরু হয়ে যেতে পারে। আবার ডায়ালেটেড হয়ে যেতে পারে। একে আমরা রিগারজিটেশন বলি, ঠিকমতো বন্ধ না হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।
আরেকটি হলো কনজেনিটাল বা জন্মগতভাবেও হার্টের ভালভে সমস্যা থাকতে পারে। এ দুটো কারণ ছাড়াও দেখা যায় যে ইনফেকটিভ এন্ডোকারটাইটেসের কারণে হার্টের ভালভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অথবা রিউমেটিক কিছু রোগের জন্য সমস্যা হতে পারে। যেমন : এনকালোজিং স্পনডালাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি।
ইসকেমিক হার্ট ডিজিস। হার্টের রক্তনালিতে চর্বি জমে যাওয়ার জন্য যেই রোগ, একে ইসকেমিক হার্ট ডিজিস বলি। এর কারণেও সমস্যা হতে পারে। এসব রোগের কারণে হার্টের ভালভে সমস্যা হতে পারে।