হৃদরোগীদের জীবনযাত্রা এবং খাদ্য নির্দেশিকা

হার্ট অ্যাটাক রোগীদের জন্য পরামর্শ

বিশ্রাম

♣* চার থেকে ছয় সপ্তাহ পূর্ণ বিশ্রাম, ক্রমান্বয়ে হালকা থেকে স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে হবে।

♣* প্রথম সপ্তাহে ঘরের মধ্যে হাঁটা-চলা, বাসায় বসে অফিসের ফাইল দেখা।

♣* দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে আস্তে আস্তে হাঁটার পরিধি ও সময় বাড়াবেন, অন্য কোনো অসুবিধা না থাকলে ৬ সপ্তাহের পর দিনে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হাঁটার চেষ্টা করবেন।

♣* প্রথমদিকে সহবাস নিষেধ। যখন রোগী বিনা ক্লান্তিতে ১/২ মাইল হাঁটতে পারবেন বা দুই তলা সিঁড়ি উঠতে পারবেন তখন সহবাস করতে পারবেন। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ৬-৮ সপ্তাহ পর নিয়ম পরিবর্তন করে সুবিধামতো সহবাস করতে পারবেন। খাবার পর অথবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় সহবাস করবেন না।

♣* ষষ্ঠ থেকে অষ্টম সপ্তাহে অফিস করতে পারবেন। এমনকি হালকা গাড়ি চালাতেও পারবেন।

♣* ভারি ও অনভ্যস্ত কায়িক পরিশ্রম সবসময় পরিহার করবেন।

করোনারি হৃদরোগীদের জন্য খাদ্য নির্দেশনা

♣* কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ ও সম্পৃক্ত (saturated) ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে।

ডিমের কুসুম (ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যাবে), কলিজা, মাছের ডিম, খাসি-গরুর চর্বিযুক্ত মাংস, হাঁস-মুরগির চামড়া, হাড়ের মজ্জা, ঘি, মাখন, ডালডা, মার্জারিন, গলদা চিংড়ি, নারকেল এবং এগুলো দিয়ে তৈরি খাবার।

বেশি করে খেতে হবে আঁশযুক্ত খাবার যেমন-

♣* সব রকমের ডাল, বিশেষত ছোলার ডাল।

♣* সব রকম শাক বিশেষত পুঁইশাক।

♣* সবজি বিশেষত খোসসহ সবজি যেমন- ঢ্যাঁড়শ, বরবটি, শিম, কচুর লতি ইত্যাদি।

♣* টকজাতীয় ফল বিশেষত খোসাসহ ফল। যেমন- পেয়ারা, জাম্বুরা আমলকি ইত্যাদি।

উপকারী ফ্যাট ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটজাতীয় খাবার বেশি খেতে পারেন

♣* সব রকমের মাছ বিশেষত সমুদ্রের মাছ, ছোট মাছ, মাছের তেল ইত্যাদি।

♣* উদ্ভিজ তেল, বিশেষত কর্ন অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, সয়াবিন তেল ইত্যাদি।

হিসাব করে খেতে হবে

(ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস গাইড ও বইয়ের নির্দেশ অনুযায়ী খেতে হবে)

♣* শর্করাজাতীয় খাবার : ভাত, রুটি (ময়দা বা সাদা আটার চেয়ে লাল আটা ভালো), আলু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি।

♣* মিষ্টি ফল যেমন- পাকা আম, পাকা কলা, পাকা পেঁপে ইত্যাদি।

♣* দুধ ও দুধের তৈরি খাবার।

পরিহার করতে হবে

বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড- কেক, পুডিং, বার্গার, স্যান্ডউইচ, আইসক্রিম, বোতলজাত কোমল পানীয়।

উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) রোগীদের জন্য পরামর্শ

♣* উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

♣* চিকিৎসকের পরামর্শমতে নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন।

♣* প্রতিদিন হাঁটুন অথবা ব্যায়াম করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

♣* ধূমপান, জর্দা, তামাক পাতা, গুল পরিহার করুন।

* দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন।

♣* ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগের চিকিৎসা করুন ও নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের জন্য খাদ্য নির্দেশনা

কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ ও সম্পৃক্ত ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার বাদ দিতে হবে :

♣* ডিমের কুসুম (ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যাবে), কলিজা, মাছের ডিম, খাসি-গরুর চর্বিযুক্ত মাংস, হাঁস-মুরগির চামড়া, হাড়ের মজ্জা, ঘি, মাখন, ডালডা, মার্জারিন, গলদা চিংড়ি, নারকেল এবং এসব উপকরণ দিয়ে তৈরি খাবার।

বেশি করে খেতে হবে

করোনারি হৃদরোগীদের মতো আঁশযুক্ত খাদ্য নির্দেশনা মেনে চলবেন।

এ্যানজিও প্লাস্টি (PTCA) রোগীদের জন্য পরামর্শ

♣* নিয়মিত ওষুধ খাবেন।

♣* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।

♣* চর্বিজাতীয় খাবার কম খাবেন।

♣* ধূমপান, জর্দ্দা, তামাক পাতা, গুল ব্যবহার নিষেধ।

♣* বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হলে, শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন অথবা হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে যোগাযোগ করুন।

♣* প্রথম সপ্তাহে বিশ্রামে থাকবেন। পরবর্তীতে প্রতিদিন হালকা কাজে কর্ম থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক কর্মে ফিরে যাবেন।

এ্যানজিও প্লাস্টি (PTCA) রোগীদের খাদ্য নির্দেশনা

এ্যানজিওপ্লাস্টি রোগীদের খাদ্য নির্দেশনা করোনারি হৃদরোগীদের খাদ্য নির্দেশনার অনুরূপ।

স্থায়ী পেসমেকার স্থাপনকারী (Permanent Pacemaker) রোগীদের জন্য পরামর্শ

* পেসমেকার অপারেশনের স্থান নখ দিয়ে চুলকাবেন না ও পেসমেকার হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করবেন না।

♣* হৃদযন্ত্রের গতি অনিয়মিত হলে বা কমে গেলে এবং পেসমেকার লাগানোর পূর্বের অসুবিধাসমূহ পুনরায় দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করেন।

♣* বুকের যে পাশে পেসমেকার বসানো হয়েছে সেদিকের কানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না।

♣* উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক ও চুম্বকীয় ক্ষেত্র থেকে দূরে থাকবেন (এমআরআই মেশিন/মেটাল ডিটেক্টর, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ইত্যাদি)।

♣* পেসমেকার স্থাপনের পর প্রথমে ১ মাস, ৩ মাস, ৬ মাস এবং পরবর্তীতে প্রতি বৎসরে একবার পেসমেকার চেকআপের জন্য যোগাযোগ করবেন।

পেসমেকার রোগীদের জন্য খাদ্য নির্দেশনা

♣* পেসমেকার প্রতিস্থাপনকৃত রোগী স্বাভাবিক ও সুষম খাবার খাবেন।

♣* ডায়াবেটিস রোগীরা খাদ্য তালিকা অনুসরণ করবেন।

♣* করোনারি হৃদরোগের রোগী, করোনারি হৃদরোগীর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করবেন।

♣* উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা খাদ্য তালিকা অনুসরণ করবেন।

বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ (Rheumatic Heart Disease)

আক্রান্ত রোগীদের জন্য পরামর্শ

♣* বাতজ্বর পুনরাক্রমণ প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত Penicillin ট্যাবলেট খাবেন, Benyathine Penicillin ইনজেকশন নেবেন।

♣* গলাব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করবেন, প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পন্ন করবেন।

♣* Infective endocarditis প্রতিরোধের জন্য যে কোন অপারেশন এমনকি দাঁত তোলার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে।

♣* সর্দি-কাশি অথবা শ্বাসকষ্ট হলে, কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করাবেন।

♣* শরীরের কোন অঙ্গে দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন।

♣* শরীরে যতটুকু সহনীয় ততটুকু কাজ করতে বাধা নেই। তবে ভারি পরিশ্রম করবেন না।

♣* বাতজ্বরজনিত রোগী গর্ভধারণের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

বাতজ্বরজনিত হৃদরোগীদের জন্য খাদ্য নির্দেশনা

♣* সব রকমের খাবার খাওয়া যাবে।

♣* ডাক্তারের নির্দেশ মতো পানি ও লবণ পরিমিত পরিমাণে খাবেন।

বাল্ব প্রতিস্থাপন অপারেশনের রোগীদের জন্য পরামর্শ

♣* অপারেশনের পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শমাফিক পরিমিত পানি পান করতে হবে।

♣* প্রতিদিন নিয়মিত সময়ে ওষুধ খেতে হবে।

♣* অপারেশন-পরবর্তী সময়ে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার : যেমন ডাবের পানি কম খেতে হবে।

♣* অপারেশন-পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পাতলাকরণ (Warin/Farsen) ওষুধ খেতে হবে।

♣* অন্য যে কোনো অপারেশনের সময় সর্বনিম্ন তিন দিন পূর্বে (Warin/Farsen) খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

বাল্ব প্রতিস্থাপনকারী রোগীদের খাদ্য নির্দেশনা

♣* সব রকমের খাবার খাওয়া যাবে। পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাবেন।

♣* ডায়াবেটিস রোগীরা খাদ্য তালিকা অনুসরণ করবেন।

♣* করোনারি হৃদরোগের রোগী, কারোনারি হৃদরোগীর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করবেন।

♣* যে সব খাদ্যে ভিটামিন কে-এর পরিমাণ বেশি (যেমন সবুজ শাক, কপিজাতীয় সবজি, যকৃত) সে সব খাদ্য কম খেতে হবে।

হার্ট ফেইলিওর রোগীদের জন্য পরামর্শ

♣* হার্ট ফেইলিওর রোগীদের কম লবণযুক্ত সুষম খাবার খেতে হবে।

♣* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খাবেন।

♣* অতিরিক্ত এবং অনভ্যস্ত কাজকর্ম পরিহার করবেন।

♣* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথার ওষুধ অথবা হরমোনজাতীয় ওষুধ খাবেন না।

হার্ট ফেইলিওর রোগীদের জন্য খাদ্য নির্দেশনা

♣* দিনে এক/দেড় লিটার এর বেশি পানি খাবেন না। পাতে লবণ খাবেন না।

♣* অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার যেমন- চিপস, নোনতা বিস্কুট, চানাচুর, আচার ইত্যাদি পরিহার করবেন।

♣* যদি হার্ট ফেইলিওর রোগী একইসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি হৃদরোগে অথবা ডায়াবেটিস রোগে ভোগেন তবে তিনি যথাক্রমে উচ্চ রক্তচাপ অথবা করোনারি হৃদরোগ অথবা ডায়াবেটিস রোগের খাদ্য নির্দেশনা অনুসরণ করবেন।

রক্তনালি (Vascular) রোগীদের জন্য পরামর্শ

♣* ধূমপান, জর্দা, সাদা পাতা, গুল, নস্যি পরিহার করবেন।

♣* খালি পায়ে হাঁটবেন না।

♣* পা সব সময় শুকনো রাখবেন।

হাত ও পায়ের নখ সাবধানে কাটবেন।

* নিজে নিজে পায়ের বাড়া কাটবেন না।

¹♣* হাঁটার সময় পায়ের আঘাত এড়িয়ে চলুন।

♣* আরামদায়ক নরম জুতা পরবেন।

♣* উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং রক্তের অস্বাভাবিক চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

♣* মাইগ্রেনজাতীয় ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।

♣* কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার যেমন গরু, মহিষ, খাসির মাংস, ডিমের কুসুম, বড় চিংড়ি, মাছের মাথা, কলিজা, মগজ ভুঁড়ি, নারকেল, ঘি, মাখন পরিহার করুন।

♣* যাদের ‘ভেরিকোস ভেইন’ আছে তাদের একনাগাড়ে অধিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা/পা ঝুলিয়ে বসে থাকা ঠিক নয়। ক্রেব ব্যান্ডেজ অথবা ইলাস্টিক মোজা পরে হাঁটতে পারলে ভালো। রাতে পায়ের নিচে বালিশ রেখে ঘুমালে ভালো।

♣* হাঁটতে গেলে যদি পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, তবে বুঝতে হবে রক্তনালিতে রোগ থাকতে পারে।

♣* গলায়, পেটে, হাতে অথবা পায়ে যে টিউমার লাফায় অথবা রক্তনালির খুব কাছে অবস্থিত তার চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *