কোষ্ঠকাঠিন্য, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Constipation। এটি একটি অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা যখন কোনো ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে অপারগ হন। সাধারণত এক-দুই দিন পরপর মলত্যাগের বেগ হওয়া এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশনকে কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে গণ্য করা হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি মারাত্মক অস্বস্তিকর শারীরিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সঠিক চিকিৎসার অভাবে এটি পাইলস এবং কোলন ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগেও পরিণত হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর এবং বাজে খাদ্যাভ্যাস, অপুষ্টিকর খাবার ইত্যাদির কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো অস্বস্তিকর সমস্যায় পড়ে থাকেন অনেকেই।
ডাক্তারদের মতে কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায় তখনই এই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এ অবস্থায় পায়খানায় দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও মল পরিষ্কার হয় না।
কারণ:
বেশিকিছু কারণে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারেন। অনেকদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য বা ক্রনিক কনস্টিপেশনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়-
- আঁশযুক্ত খাবার খেলে শিশুদের সমস্যা হতে পারে আর বয়স্করা শাকসবজি ও ফলমূল কম খেলে, পানি কম খেলে।
- অ্যানোরেকটাল স্টেনোসিস বা মলদ্বার জন্মগতভাবে বন্ধ থাকার মতো শারীরিক ত্রুটি থাকলে।
- স্নায়ুতন্ত্রের ত্রুটি থাকলে।
- মানসিক প্রতিবন্ধী হলে।
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে।
- একেবারেই কায়িক পরিশ্রম, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম না করলে।
- শরীরের শক্তি কমে যাওয়া বা হাইপোটনিয়া হলে।
- অনেক দিন ধরে বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে।
- হাইপোথাইরয়েডিজম হলে।
- ডায়বেটিস থাকলে।
- শরীরে ক্যালসিয়াম বেশি হলে।
- অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে।
- কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা থাকলে।
- বিভিন্ন ধরনের ওষুধ যেমন ব্যথার ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধ ইত্যাদির কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ:
- কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন কিনা বুঝার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো লক্ষণের প্রয়োজন হয় না। তবুও যেগুলোর মাধ্যমে বুঝতে পারবেন –
- শক্ত পায়খানা হওয়া
- পায়খানা করতে বেশি সময় লাগা
- বেশি চাপের দরকার হওয়া
- বেশি সময় ধরে পায়খানা করার পরও মলদ্বারে অস্বস্তি ভাব থেকে যাওয়া।
- মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
দীর্ঘসময়ের কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসা না করা হলে
যে সমস্যাগুলো হতে পারে:
১) পাইলসের সৃষ্টি,
২) পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া,
৩) প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে,
৪) এনালফিশার,
৫) পেট ফুলে যেতে পারে,
৬) রেকটাল প্রোলাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে,
৭) মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,
৮) খাদ্যনালীতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে,
৯) সময়মতো চিকিৎসা না করালে কোষ্ঠকাঠিন্য কোলন ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে যার জন্য অকালমৃত্যুও হতে পারে।চলুন এবার ঘরোয়া কিছু উপায় দেখে নেওয়া যেগুলোর মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব :
- ১. পালং শাক ও কলমিশাক :
- কলমি ও পালং শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কলমিশাকের পাতা ও কাণ্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ থাকে যা খাদ্য হজম, পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে। কলমিশাক খেলে শরীরও সুস্থ থাকে।অন্যদিকে পালং শাক হজম শক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
এক কাপ সেদ্ধ পালং শাকেই থাকে চার গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও থাকে ১৫০ মিলিগ্রামের বেশি ম্যাগনেসিয়াম, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।রান্না করে বা সালাদে ব্যবহার করে খেতে পারেন।
আর যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে তাহলে পালং শাকের রস এর অর্ধেক পরিমাণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বেলা নিয়ম করে খেয়ে নিন। দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।২. কলা ও আপেল:
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ফাইবার যা বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
আপেলের খোসার মধ্যে রয়েছে সলিউবল এবং ইনসলিউবল ফাইবার যা খাবার হজমের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী। এছাড়াও আপেলে বিদ্যমান প্যাক্টিন পরিপাকতন্ত্রের সঠিক কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করে। ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন খালি পেটে অন্তত ১ টি আপেল খেতে হবে।৩. গাজর ও শসা:
- অতি পরিচিত এই সবজি দুইটি হাতের কাছেই পাওয়া যায়। গাজর প্রাকৃতিক ডায়াটেরি ফাইবারের বেশ ভালো উৎস। মাত্র আধা ইঞ্চির ৭ খণ্ড গাজরে রয়েছে প্রায় ১.২ গ্রাম ফাইবার। প্রতিদিন গাজর খেলে মুক্তি মিলবে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে।
শসার ক্ষেত্রেও তাই কারণ শসার বেশির ভাগ অংশই পানি দিয়ে তৈরি। তাই নিয়মিত শসা খেলে দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্য।
৪. বেশি করে পানি পান করুন
শরীরে নিয়মিত পানির অভাব হলে সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে। বিশেষ করে গরমকালে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে হালকা গরম পানি পান করতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই কোমল পানীয় বা জুস পান করবেন না। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য আরও প্রবল হতে পারে।
৫. ব্যায়াম করুন নিয়মিত:
ব্যায়াম নিঃসন্দেহে কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। ব্যায়ামের কারণে যেন শরীরে পানির অভাব না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। ব্যায়াম শেষে বেশি করে পানি খেয়ে নিন। আর ভারী ব্যায়াম করতে না চাইলে নিয়মিত হাঁটার চেষ্টা করুন।
- ৬. ইসুবগুলের ভুষি খান:
- প্রায় সবাই জানেন যে ইসুবগুলের ভুষি পানির সাথে মিশিয়ে খেলে যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান হয়। তবে এটি খেতে হবে নিয়ম মতো। ইসুবগুলের ভুষি পানিতে দিয়ে সাথে সাথেই খেয়ে ফেলতে হবে। আবার অনেকের মতে ইসুবগুল ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে চিনি বা গুড়সহ নিয়মিত খালি পেটে সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসুবগুল ভুষির উপকার অনেক।
৭. কফি পান করুন:
পানির তুলনায় কফি পান করলে মলত্যাগ দ্রুত হয়। ফলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও সাহায্য করে।
৮. লেবু ও মধু:
লেবু বা লেবুর রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক খুবই কার্যকরী। সেইসাথে মধুও উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে মধু খুবই উপকারী। দিনে তিনবার দুই চা চামচ করে মধু খান। বা এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস দিয়ে দিন।
এর সঙ্গে আধা চা চামচ নুন এবং সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এটা পান করুন। দ্রুত ফল পেতে সন্ধ্যায় আরেকবার পান করুন এই মিশ্রণ। কিছুদিনের মধ্যেই ফল পাবেন।
-
৯. ক্যাস্টর অয়েল:
সকালে খালি পেটে এক বা দুই চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল খান। চাইলে ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। কয়েক ঘন্টার মধ্যে আপনি ফলাফল দেখতে পাবেন। তবে দীর্ঘদিন এটি খাওয়া উচিত না, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
১০. টকদই:
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে টকদইয়ের ভূমিকা দারুণ। টকদইয়ের প্রোবায়োটিক গুণাগুণ আপনার হজমের সমস্যাকে দূর করতে অনেকাংশে সাহায্য করে। এমনকি নিয়মিত টকদই খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবার সম্ভাবনা থাকে না।
নিয়মিত শাকসবজি খান, বেশি করে পানি পান করুন, দূরে থাকবে কোষ্ঠকাঠিন্য।
-
প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হলমুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর
01711-943435 ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালইমেইল-dr.zaman.polash@gmail.com
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com