ব্রেষ্ট বা স্তন ক্যানসার

2

প্রতি ৮ জন নারীর মধ্যে ১ জন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, পরিসংখ্যানটি আসলেই ভয়াবহ। আমাদের দেশে ক্যান্সারে যতো নারীর মৃত্যু হয় তার দ্বিতীয় কারণ ব্রেস্ট ক্যান্সার নামের নীরব ঘাতক। ব্রেস্ট ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে পরিবারের মা, খালা, ফুপু অথবা দাদি-নানির ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়াও খুব অল্প বয়সে মিনিসট্রেশন হওয়া, বেশি বয়সে মেনোপজে গেলে, বাচ্চা না হলে অথবা বাচ্চাকে বুকের দুধ না দিলে, ধুমপান করলে এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমলে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে উল্লেখ করেন তারা।
স্তনে সাইক্লিক্যাল ব্যথা:
স্তনে ব্যথার উপসর্গ আছে এমন নারীর চার ভাগের তিন ভাগই সাইক্লিক্যাল ব্যথা গ্রুপের। এই ব্যথা প্রতি মাসের সাইকেলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। প্রতি মাসের সাইকেলের কয়েক দিন আগে হরমোনের প্রভাবে স্তন স্ফিত হয়ে ওঠে। ফলে স্তন চাকা চাকা, ভারী ও ব্যথা অনুভব হয়। সাইকেলের পর এ ধরনের চাকা ভাব ও ব্যথা প্রায় সম্পূর্ণই সেরে যায়। সাধারণত এই ব্যথা দুই স্তনে হয়ে থাকে এবং নির্দিষ্ট স্থান নির্দেশ করে না, পুরো স্তনে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। ঋতুবতী নারীর সাইক্লিক্যাল ব্যথা হয়। মেনোপজ (সাইকেল বন্ধ হওয়া) হয়ে গেলে এ ধরনের ব্যথা হয় না। মেনোপজের পর এইচআরটি (হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি) অর্থাৎ হরমোন ওষুধ চালিয়ে গেলে স্তনে ব্যথা হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনেও স্তনে এ ধরনের ব্যথা হয়। মানসিক চাপ ও অন্যান্য দুশ্চিন্তা এবং দুর্ভাবনার কারণেও শরীরে বিভিন্ন হরমোনের মাত্রায় তারতম্য ঘটতে পারে। এতেও কখনো কখনো স্তনে এ ধরনের ব্যথা হতে পারে। শারীরিক পরিশ্রম যেমন হাতে ভারী জিনিস উত্তোলন করলে বা দীর্ঘক্ষণ হাত নাড়াচাড়ার কাজে থাকলে, হাতসহ বুক ও সংলগ্ন স্তনে ব্যথা অনুভব হতে পারে।

স্তনে নন-সাইক্লিক্যাল ব্যথা:4
এ ধরনের ব্যথা হওয়া নারীর সংখ্যা কম। এই ব্যথা প্রতি মাসের সাইকেলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। স্তনের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ব্যথা অনুভূত হয়। ঋতুবতী ও মেনোপজ হওয়া উভয় নারীর নন-সাইক্লিক্যাল ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের ব্যথার কারণ স্তনের বিভিন্ন সমস্যা। যেমন অপেক্ষাকৃত স্থূল আকৃতির স্তন, গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও স্তন্যদানকালীন স্তনের পরিবর্তন, স্তনে আঘাত, ক্ষত, অপারেশন, প্রদাহ। স্তনের নিচে বুকের মাংসপেশি, হাড়, কার্টিলেজে কোনো প্রদাহ, আঘাত। অন্যান্য কারণ যেমন শারীরিক ওজন বেড়ে যাওয়া, স্তনে বিনাইন (ক্যানসার নয়) টিউমার বা রোগ। ইনফ্লামাটোরি ব্রেস্ট ক্যানসারে (খুব কমসংখ্যক রোগীর) স্তনে ব্যথা হতে পারে।

ঝুঁকি নির্ণয়:
সম্প্রতি নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের বি আর সি এ(১ এবং ২)জিন পরীক্ষার মাধ্যমে ঝুঁকি পরিমাপ করা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এই পরীক্ষা করানো হয়।
ম্যামোগ্রাফি
স্তনের এক্স-রেকে বলা হয় ম্যামোগ্রাফি। স্তনে কোনো রোগ হয়েছে কি না তা শনাক্ত করার জন্য এ পরীক্ষা করা হয়। ম্যামোগ্রাফি দুই ধরনের।
ডায়াগনোস্টিক ম্যামোগ্রাফি1423
স্তনে কোনো সমস্যা, যেমন—স্তনে চাকা, বৃন্ত থেকে রক্তক্ষরণ, ত্বক পুরু হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হলে রোগনির্ণয়ে ডায়াগনোস্টিক ম্যামোগ্রাফি করা হয়। এ পরীক্ষায় রোগ শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী এক্স-রে করা হয়।
স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রাফি
স্তনে কোনো সমস্যা না হলেও রোগ আছে কি না তা জানার জন্য যে ম্যামোগ্রাফি করা হয়, তা হলো স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রাফি। এ ধরনের ম্যামোগ্রাফিতে প্রতিটি স্তনের দুটি করে (দুভাবে তোলা) এক্স-রে ফিল্ম করা হয়।
এক্স-রে হলো তেজস্ক্রিয় রশ্মি যা স্তন ক্যানসার হওয়ার জন্য একটি দায়ী উপাদান। তবে ম্যামোগ্রাফি করতে যে এক্স-রে করা হয় তাতে খুব সামান্যই তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহূত হয়। যদি ৪০ বছরের পর থেকে দু-এক বছর অন্তর ম্যামোগ্রাফি করা হয় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণিত হলে ক্ষতির চেয়ে লাভ অনেক বেশি হয় বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিকভাবে ম্যামোগ্রাফি স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং একটি শক্তিশালী মাধ্যম বলে বিবেচিত। অল্পবয়সী নারীর স্তনগ্রন্থি অত্যন্ত ঘন হয়ে থাকে। ম্যামোগ্রাফিতে কোনো সন্দেহজনক ইমেজ বা ছবি থাকলে তা স্তনের ঘন গ্রন্থির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। এ ছাড়া অল্পবয়সী নারীদের বারবার অহেতুক ম্যামোগ্রাফি করা হলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
আলট্রাসনোগ্রাফিCyst1640

এটি এক ধরনের পরীক্ষা যা শব্দতরঙ্গ প্রতিফলিত করে শরীরের ভেতরের বিভিন্ন স্থানের ছবি তৈরি করতে পারে। এতে এক্স-রের মতো তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোনো রশ্মি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। আলট্রাসনোগ্রাফি বা ব্রেস্ট আলট্রাসাউন্ড করে স্তনের ভেতরকার প্রায় সব অংশের ছবি ধারণ করা যেতে পারে। এমনকি বুকের কাছের স্তনটিস্যুর ছবিও এ পরীক্ষায় দেখা যায় যা ম্যামোগ্রাফিতে সম্ভব হয় না। তবে স্তন ক্যানসার স্কিনিংয়ে ম্যামোগ্রাফির বদলে ব্রেস্ট আলট্রাসাউন্ড নয় বরং ম্যামোগ্রাফির সহযোগী পরীক্ষা হিসেবে ব্রেস্ট আলট্রাসাউন্ডকে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে স্তন ক্যানসার নির্ণয় করার লক্ষ্যে আলট্রাসাউন্ডের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ২০-৩০ বছর বয়সী, গর্ভবতী, শিশুকে দুধদানকারী মা ও ঘন স্তনগ্রন্থিসম্পন্ন নারীদের জন্য। কারণ এ পরীক্ষায় কোনো ধরনের ক্ষতিকারক এক্স-রে বা তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করা হয় না, তাই এ পরীক্ষা নিরাপদ। এমনকি স্তনে সন্দেহজনক চাকা হলে, আলট্রাসাউন্ড গাইডে এফএনসি (সুঁই দিয়ে চাকা থেকে কোষ নিয়ে পরীক্ষা) করে রোগ শনাক্ত করা যায়।
লক্ষণ:
ব্রেস্টে চাকা অনুভব করা, আকারে পরিবর্তন, নিপল কুচকে যাওয়া, রক্ত অথবা পুজ বের হওয়া।
রোগ নির্ণয়:
শতকরা ৫০ শতাংশ রোগী নিজেরাই ওপরের লক্ষণ বুঝে ডাক্তারের কাছে আসেন। ব্রেস্টে ব্যথা হলে অনেকেই ক্যান্সারের ভয় পান। তবে ৯০ শতাংশ ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কোনো ব্যথা থাকে না।
রোগের ধাপ:
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্রেস্ট ক্যান্সারকে ৪ টি ধাপে ভাগ করা হয়। প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপে রোগ ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
চিকিৎসা:Nobel-Prize-Winner-Prof-Luc-Montagnier-Discovers-Scientific-csvcvcvBasis-of-Homeopathy
স্তনে গোলাকার পিণ্ড হলেই যে সেটা ক্যানসার হবে, এমন নয়। পিণ্ড বা টিউমার দুই ধরনের—ক্যানসার টিউমার এবং বেনাইন টিউমার বা নির্দোষ টিউমার। স্তনের এ ধরনের ব্যথাহীন পিণ্ড থেকে ক্যানসার নাও হতে পারে। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিত্সককে দেখিয়ে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া উচিত। যে ধরনের টিউমারই হোক না কেন, শুরুতেই ধরা পড়লে এর চিকিত্সা সহজ হয়। তাই লজ্জা বা দ্বিধা না করে  বিশেষজ্ঞকে দেখান। নিয়ম মেনে নিজেই নিয়মিত স্তন পরীক্ষা (সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন) করবেন। ভালোমতো খেয়াল করবেন, স্তনে অন্য কোনো ধরনের গুটি বা পিণ্ডের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় কি না। স্তনে পিণ্ডের অস্তিত্ব অনুভব করার পরও এটা নিয়ে বসে থাকাটা ঠিক নয়।
সচেতনতা:
৩০ বছরের পর থেকে প্রতি মাসে ১ বার নিজেই ব্রেস্টে চাকা অনুভব করা, আকারে পরিবর্তন, নিপল কুচকে যাওয়া, রক্ত অথবা পুজ বের হওয়া এ লক্ষণগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। আর ব্রেস্টের কোনো ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে অবহেলা না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
যদিও নারীদের ব্রেস্ট ক্যানসার বেশি হয়। তবে সংখ্যায় কম হলেও পুরুষরাও কিন্তু এই রোগের ঝুঁকিমুক্ত নয়। আমাদের সচেতনতাই পারে এই ঘাতক রোগে মৃত্যুর হার শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে।

ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog
ফেসবুক–https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *