পাকস্থলী ক্যানসার হয়ে থাকে যেসব কারণে

পাকস্থলীর ক্যানসার বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের মধ্যে পঞ্চম এবং বিশ^ব্যাপী ক্যানসার সংক্রান্ত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। আক্রান্তের পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার প্রায় ২০ শতাংশ। পাকস্থলীর ক্যানসারের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-

হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ : গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার হওয়ার ক্ষেত্রে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরির মাধ্যমে সাধারণত পাকস্থলীর নিচের দিকে ক্যানসার হয়ে থাকে।

খাদ্যোভ্যাস : লবণযুক্ত খাবার, ধোঁয়া বা খারাপভাবে সংরক্ষিত খাবার, নাইট্রেট, নাইট্রাইট ও সেকেন্ডারি অ্যামাইনযুক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

অ্যালকোহল সেবন : বিভিন্ন তথ্যমতে, দীর্ঘস্থায়ী ও অধিক অ্যালকোহল সেবনে পেটের আস্তরণ ইরিটেট হতে পারে। ফলে কোষগুলোয় প্রদাহ হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ দীর্ঘস্থায়ী জ্বালা ও প্রদাহ পাকস্থলীর ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। দশটি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যারা অ্যালকোহল সেবন করেন, তাদের পেটের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি যারা পান করেন না, তাদের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি।

অতিরক্ত তামাক ব্যবহার : যারা ধূমপান করেন, তাদের পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি অধূমপায়ীর তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি। এছাড়া ধূমপান ঐ. ঢ়ুষড়ৎর সংক্রমণের চিকিৎসাকে কম কার্যকর করে তোলে।

দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রাইটিস (পেটের প্রদাহ) : যাদের এ সমস্যা রয়েছে, তাদের পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দীর্ঘস্থায়ী এট্রোফিক গ্যাস্ট্রাইটিস (পেটের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহে পেটের আস্তরণের পাতলা হয়ে যাওয়া) অন্ত্রের মেটাপ্লাসিয়াসহ অ্যাট্রোফিক গ্যাস্ট্রাইটিস (একটি অবস্থা, যেখানে পাকস্থলীর রেখাযুক্ত কোষগুলো সাধারণত অন্ত্রের রেখাযুক্ত কোষের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়)।

পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস : যাদের পাকস্থলীর ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস আছে, যেমন- আত্মীয়-স্বজন (পিতা-মাতা, ভাইবোন বা ছেলেমেয়ে), যার পাকস্থলীর ক্যানসার হয়েছে এবং পারিবারিক ক্যানসার সিন্ড্রোম, যেমন- পারিবারিক অ্যাডেনোমেটাস পলিপোসিস (FAP) বা বংশগত ননপলিপোসিস কোলোরেক্টাল ক্যানসার (HNPCC) কিংবা বংশগত ডিফিউজ গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার (HDGC)।

জিনগত পরিবর্তন : যাদের ঢ়৫৩ (লি-ফ্রোমেনি সিন্ড্রোম) ও ইজঈঅ২ জিনে পরিবর্তন হয়, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি।

এপস্টাইন-বার ভাইরাস সংক্রমণ : ক্ষতিকারক রক্তাল্পতা (যেখানে অন্ত্র সঠিকভাবে ভিটামিন-বি১২ শোষণ করতে পারে না। ফলে লাল রক্তকণিকার সংখ্যা কম হয়), গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (যেখানে পাকস্থলীর অ্যাসিড বারবার খাদ্যনালিতে প্রবাহিত হয়)।

পরিবেশ ও পেশাগত এক্সপোজার : ধাতু, খনি, রাবার শ্রমিক এবং সেইসঙ্গে কাঠ বা অ্যাসবেস্টস নিয়ে কাজ করা মানুষগুলো বেশি ঝুঁকিতে থাকে। খুব উচ্চ মাত্রার বিকিরণের সংস্পর্শে থাকলেও পাকস্থলী ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক থাকার মানে এই নয় যে, আপনি পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন। আসুন, পাকস্থলীর ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন হই। কারণ ক্যানসার প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।