নারীদের মধ্যচলি্লশে একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। জীবনের এ এক সন্ধিক্ষণ। জীবনযাপনকে নতুন করে গোছানো, ঢেলে সাজানোর সময় তখন। ঋতুবন্ধের কাছাকাছি এ সময়কে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলে ‘পেরিমেনোপোজ’।
গড়পড়তা ৪৫ বছর বয়সে এ পরিবর্তনের শুরু এবং তা চলে ৫৫ পর্যন্ত। এ সময় ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ কমে আসে, নারী শরীরে ক্রমে ক্রমে ঘটে পরিবর্তন। ঋতুস্রাব কম হতে হতে এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে আসে ঋতুবন্ধ। নারীর ঋতুচক্রের ইতি ঘটে এবং সন্তান ধারণের ক্ষমতা আর থাকে না। শরীরেও আসে পরিবর্তন। উষ্ণ ঝলক। ঋতুবন্ধের সচরাচর উপসর্গ হলো উষ্ণ ঝলক। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারীর ক্ষেত্রে দেখা দেয় এ উপসর্গ। হঠাৎ করে শরীরে তীব্র উষ্ণ প্রদাহ, দেহের ওপর অংশ ও মুখে হাওয়ার ঝাপটা যেন। রক্তনালিগুলো খুলে গিয়ে ত্বকে অকস্মাৎই রক্তের স্রোত বয়, ঘটে উষ্ণ ঝলক। এ সময় গরমে লাল হয়ে ওঠে মুখ। প্রচুর ঘাম হয়, এরপর ঘাম যখন কমে আসে তখন তাপ নেমে আসে এবং শীত শীত লাগে শরীরে। এক থেকে পাঁচ মিনিট। বিনামেঘে বৃষ্টির মতো হঠাৎই আসে উষ্ণ ঝলক। বিব্রত করতে পারে অসময়ে। তবে তা ক্ষতিকর নয়। শরীরে স্বাভাবিক সাড়া এমন সময়ে। তবে এ উষ্ণ ঝলক যদি খুব জোরালো হয় এবং বারবার হতে থাকে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। গরম ঝাপটাটি যদি হালকা হয় এবং তা সহ্যের মধ্যে থাকে তাহলে উষ্ণস্থান এড়িয়ে চলুন, হালকা-ঢিলা পোশাক পরুন। মশলা ও ঝাল দেয়া খাবার খাবেন না। মানসিক চাপকে মোকাবিলা করুন। মেজাজের চড়াই-উতরাই হরমোনের ওঠানামা, অবিরাম ভারসাম্যহীন, নাড়িয়ে দেয় নারীর ইমোশনকে। মেজাজের চড়াই-উতরাই, কারও কারও গভীর বিষণ্নতা, মনোযোগের অভাব ও স্মরণশক্তি কমে আসতে পারে। মন-মেজাজকে ভালো করা চাই। মানসিক চাপ মোকাবিলা করুন। ব্যায়াম করুন। কাউন্সেলিং বা গ্রুপ সাপোর্টে যোগ দিতে পারেন। মূত্রথলিতে হতে পারে সমস্যা।
স্ত্রী হরমোন ইস্ট্রোজেন মান কমে এলে মূত্রথলিতেও হতে পারে পরিবর্তন। মূত্রথলির পাশের টিস্যু পাতলা হয়ে আসে, প্রস্রাবের সময় ব্যথা হয়, বারবার প্রস্রাবের তাগিদ হতে পারে। হঠাৎ করে প্রস্রাব হয়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়। রোধ করা যায় না। এ সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য রয়েছে কিগেল ব্যায়াম। মূত্রথলির পেশি ও যোনিদ্বারের পেশিকে পালাক্রমে শক্ত ও ছেড়ে দেয়ার এ ব্যায়াম। যখন প্রস্রাবের ইচ্ছা হবে তখন প্রস্রাবের বেগকে দু-তিনবার ধরে রাখা অথবা দিনে পালাক্রমে এসব পেশিকে শক্ত করা ও ছেড়ে দেয়া। এরপরও আছে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা
হাড়ের খনিজ ক্ষয়, হাড় ফোঁপরা ও ভঙ্গুর হওয়াকে ঠেকায় ইস্ট্রোজেন। ইস্ট্রোজেন ঘাটতি হলে হাড় ভেঙে যেতে পারে। বেঁকে যেতে পারে। নিতম্বের হাড় ও পিঠের হাড়ের ভাঙন ঘটতে পারে। হাড়ের অবস্থা জানা যেতে পারে_ ডেঙ্া স্ক্যান করে বা বোন ডেনসিটি টেস্ট করে। ধূমপান করে থাকলে বর্জন করা, মদ্যপান বন্ধ করা (অভ্যাস থাকলে), ব্যায়াম করা এবং ক্যালসিয়াম গ্রহণ (দিনে ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম) সঙ্গে ৪০০ ইউনিট ভিটামিন ডি, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার ও ক্যালসিয়াম পিল। ঋতুবন্ধ হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। কারও যদি শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে ব্যথা করে, ব্যথা যদি বাহু দিয়ে নেমে আসে, তাহলে চেকআপের জন্য অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন। যাদের পরিবারে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস আছে, তাদের জন্যও এটি অপরিহার্য। সঠিক উপায়ে যদি ঋতুবন্ধের মুখোমুখি হওয়া যায় তাহলে নারী জীবনে এ ক্রান্তিকালকে উপভোগ করতে পারেন। নিরাপদ থাকা উচিত। কেউ যদি এসব উপসর্গের শিকার হন তাহলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন।
* বুকব্যথা
* মিলনের সময় ব্যথা-বেদনা
ঘ গভীর বিষণ্নতা
ঘ প্রস্রাবের সময় ব্যথা
* হঠাৎ তীব্র উষ্ণ ঝলক, পরে খুব শীত অনুভব করা।
* যোনি দিয়ে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
* প্রস্রাব করার বারবার তাগিদ বা হঠাৎ করে প্রস্রাব হওয়া
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog
( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall