জন্ডিস হলে কী করবেন? ভিডিও সহ

62

ভাইরাসজনিত লিভারের প্রদাহকে আমরা ভাইরাল হেপাটাইটিস বলে থাকি। এ বিষয়ে  বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের লিভার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ।

প্রশ্ন : ভাইরাল হেপাটাইটিস, এটা খুব সহজ ভাষায় আমরা বুঝতে পারি ভাইরাসজনিত লিভারের প্রদাহ। লিভারের এই প্রদাহ ঘটানোর জন্য কী কী ভাইরাস এখানে জড়িত এবং কোন কোন ভাইরাসের মাধ্যমে এটা হয়?

উত্তর : সাধারণত হেপাটাইটিস এ, বি, সি এবং ই ভাইরাস -এই জাতীয় আরো কিছু ভাইরাস দিয়ে হেপাটাইটিস হতে পারে।

প্রশ্ন : এই ভাইরাসগুলোর মধ্যে কোনটা বেশি ক্ষতিকর? কোনটা কম ক্ষতিকর এবং কোনটা মানুষের দেহে কীভাবে ছড়ায়?

উত্তর : দুই ভাগে যদি ভাগ করি- হেপাটাইসিস এ এবং ই ভাইরাস এই দুটোকে কম ক্ষতিকর বলা হয়। এই ভাইরাসগুলো সাধারণত দূষিত পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এদের পানিবাহিত রোগ বলে থাকি। আর হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাস রক্তের সংস্পর্শে বা শরীরের লালার সংস্পর্শ- এসব থেকে হতে পারে।

প্রশ্ন : এর মধ্যে ক্ষতি কম-বেশির কথা বলছিলেন আপনি। এ, ই -তে কম ক্ষতি । আর বি, সি -তে বেশি ক্ষতি, এর কারণ কী?index

উত্তর : কম ক্ষতি বলার কারণ হচ্ছে হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, সাধারণত চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যায়। এদের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে লিভারে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমস্যা থাকে না। কিন্তু হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাসে যদি কেউ আক্রান্ত হন তাহলে তা স্বল্পমেয়াদি রোগ, যেমন জন্ডিস তৈরি করে। তেমনি দীর্ঘমেয়াদি লিভারের প্রদাহ তৈরি করে। ধীরে ধীরে লিভারের অসুখ হতে পারে। আস্তে আস্তে এটার মাত্রা আরো বাড়তে পারে।

প্রশ্ন : লিভারের ক্যানসার কী ভাইরাসের মাধ্যমে হতে পারে?

উত্তর : হেপাটাইটিস বি বা সি, দুই ভাইরাসের ইনফেকশনের কারণেই ভবিষ্যতে লিভার ক্যানসার হতে পারে। লিভার সিরোসিসও হতে পারে।

প্রশ্ন : একজন মানুষ যদি এ রকম ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হন সেই ক্ষেত্রে তার কী ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে? এবং একজন মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কতদিনের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দেয়?

উত্তর : কারো চোখের রং ,শরীরের রং হলুদ বর্ণ ধারণ করতে পারে। যেটাকে আমরা জণ্ডিস বলে থাকি। এ ছাড়া কারো জ্বর জ্বর ভাব থাকতে পারে। সাথে সাথে বমি বমি ভাব হতে পারে এবং শরীর অস্বাভাবিক দুর্বল অনুভব করে। একটা ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পর সাধারণত দুই থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ হওয়া শুরু করে।

প্রশ্ন : কেউ আক্রান্ত হলে, বা অন্যের রক্ত থেকে ট্রান্সমিটেট বা বাহিত হলে কতদিনের মধ্যে রক্তে রোগটি পাওয়া যায়?

উত্তর : যখন লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন এই জাতীয় জিনিসগুলো পাওয়া যাবে। তার রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। লিভারের এনজাইমগুলো বেড়ে যায়। এবং সেই ভাইরাসের পরীক্ষার মাধ্যমে সেটা পজিটিভ পাওয়া যায়। আর যদি কেউ রক্ত দিতে গিয়ে এই পরীক্ষা করেন, তাহলে তো সাধারণত তার লক্ষণ থাকে না। সেই ক্ষেত্রে তার রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।

প্রশ্ন : আসলে আমি জানতে চাচ্ছিলাম, আজ একজন মানুষের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে গেল- তখন কালই রক্তের পরীক্ষা করলে সমস্যা ধরা পড়বে?

উত্তর : সময় লাগবে। দুই থেকে ছয় সপ্তাহ।

প্রশ্ন : এই সময়ের মধ্যে তো একজন রোগীর রক্ত পরীক্ষা করলে ধরা পড়ল না। তাহলে ওই ব্যক্তি আরেকজনকে রক্ত দিলে যিনি রক্ত গ্রহীতা- তিনি কী আক্রান্ত হতে পারেন?images

উত্তর : আক্রান্ত হতে পারেন। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সেলুনে শেভ করলে এই ভাইরাসটা ছড়াতে পারে। সিরিঞ্জের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এসব কারণে একজনের মধ্যে হেপাটাইটিস বি বা সি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ রকম কারো যদি শরীর ঝুঁকিতে থাকে, তাহলে তার কাছ থেকে আরেকজনের শরীরে রক্ত দেওয়াটা উচিত নয় এই সময়টায়।

প্রশ্ন : সহজ ভাবে বোঝার জন্য বলি, এইচআইভি এইডস যেভাবে ছড়ায় সেভাবে ছড়াতে পারে। কিন্তু এখন সচেতনতার জন্য সিরিঞ্জ একবারই ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশি মাত্রায় দেখা যাচ্ছে যারা মাদকাসক্ত তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। এর কারণ কী?

উত্তর : মাদকাসক্তরা একই সিরিঞ্জ হয়তো দুজন তিনজন ব্যবহার করে। আর যেকোনো মাদকাসক্তিকেই তো আমরা নিষেধ করি। তবে যারা আলাদাভাবে সিরিঞ্জ ব্যবহার করে তাদের মধ্যে আরেকজনের এই ধরনের রোগ অনুপ্রবেশ করার ঝুঁকি থাকে না।

প্রশ্ন : যদি কেউ আক্রান্ত হয়ে যায়, বিশেষ করে বি এবং সি এর বেলায়-তখন কী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন? এটা সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য কি না?

উত্তর : হেপাটাইটিস বি এবং সি-এর চিকিৎসা অবশ্যই আছে। হেপাটাইটিস সি কে বলা হয় নিরাময়যোগ্য। যেহেতু এই ভাইরাসটা পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায়। হেপাটাইটিস বি চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় হয়। পুরোপুরি নির্মূল না হলেও যে চিকিৎসা রয়েছে এতে রোগী সুস্থ হয়ে যান। মানে যে লক্ষণ দেখা দিত বা লিভারের যে সমস্যা হতো, সেগুলো হবে না।

প্রশ্ন : হেপাটাইটিস সি এবং বি-এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। ইনজেকশনগুলোও ব্যয়বহুল। তবে এখন কিছু মুখে খাওয়ার ওষুধও আছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

উত্তর : হেপাটাইটিস বি বা সি দুটিতেই ইন্টারফেরাল জাতীয় ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। সারা পৃথিবীতেই এটা গুরুত্ব দিয়ে করা হয়। পাশাপাশি হেপাটাইটিস বিতে কিছু মুখের খাওয়ার ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। হেপাটাইসি সি-এর ক্ষেত্রে একটি মুখে খাওয়ার ওষুধ ব্যবহৃত হয়েছে। ইদানীং দেখা গেছে আমাদের দেশে কিছু কোম্পানি হেপাটাইটিস সি-এর কিছু মুখে খাওয়ার ওষুধ তৈরি করার অনুমতি পেয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এই ওষুধ যথেষ্টই কার্যকরী। এটিতে কম সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়েছেন।

প্রশ্ন : খরচের ব্যবধান কেমন হয়?

উত্তর : ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসায় ছয় মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়। আর হেপাটাইটিস সি তে মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে চিকিৎসার সময় ব্যয় হয় তিন মাস এবং ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে যায়। আমাদের দেশেই এখন এ চিকিৎসা হচ্ছে এবং ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে।

ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন

( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *