সোরাইসিস রোগ প্রতিকারে হোমিওপ্যাথি

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ

সোরাইসিস রোগ প্রতিকারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ সংকেত নিয়ে আজকের নিবন্ধ।

এই রোগটি অনেকটা একজিমার মতো। একে বাংলায় বিচর্চিকা বলা হয়ে থাকে কিন্তু এটি অপেক্ষা সোরাইসিস নামটিই অধিকতর প্রচলিত। চর্মের ওপর শুষ্ক ক্ষত জন্মে এবং তার ওপর আঁইশের মতো মামড়ি পড়ে। ওই মামড়ি কখনো আঁইশের মতো শুকিয়ে ভুষির মতো খসে পড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুলকানি থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সোরাইসিস ইজ এ প্রি গ্রো সিম্পটম অফ ক্যান্সার। সাধারণত এই রোগ আরোগ্য করা খুব সহজ নয়। লাল বর্ণের চ্যাপ্টা উদ্ভেদ বের হয়ে তা থেকে খোলস উঠতে থাকে এবং এই খোলস অতি পাতলা আঁইশের মতো। এই উদ্ভেদগুলো হাত-পায়ের পেছনে বা হাঁটু ও কনুইয়ে দেখা যায় বেশি। এছাড়া মাথার চুলের নিচে এবং দেহের নানা স্থানেও হতে পারে। সোজা কথা সোরাইসিস হচ্ছে এক প্রকার ক্রনিক শুষ্ক, প্রদাহবিহীন চর্মরোগ। এটি দেহের নানা স্থানে চক্রাকারে নানা সাইজের লাল লাল ম্যাকুল প্যাপুল বা প্যাঁচ দেখা যায়। এর ধারগুলো উঁচু হয় এবং রুপালি চকচকে মোটা আঁশে ঢাকা থাকে। রোগটি বারবার ভোগায়। অন্তর্নিহিত মোরাদোষের ইহা একটি দুরারোগ্য বহিঃপ্রকাশ।

এই রোগের কারণ : সঠিক কারণ জানা যায়নি। অনেকে মনে করেন জীবাণু সংক্রমণ আবার অনেকে মনে করেন লিভার ক্রিয়ার দোষ হেতু। রোগটি ছোঁয়াচে। ত্বকের উপরিভাগের কোষানুদের অতিরিক্ত হারে বাড় বৃদ্ধির ফলে সোরিয়াটিক লেসানে এই রূপ মোটা আঁশ জমে বলে মনে করেন অনেকে। এটির মূলে কোনো ইমিউনো লজিক গোলযোগকে দায়ী করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বংশগত ইতিহাস থাকে। এই রোগ সাধারণত শীত প্রধান দেশে বেশি হয় এবং কালো লোকদের তুলনায় সাদা মানুষদের বেশি হয়। রোগটি যে কোনো বয়স বা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হতে পারে। তবে ১০-১৫ বছর থেকে মাঝবয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই সঙ্গে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আর্থাইটিসও জড়িত থাকে।
আক্রমণ স্থানের দিকে লক্ষ রেখে এই রোগটিকে কয়েকটি বিশেষ শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে-

১. সোরাইসিস ক্যাপিটিস : সোরাইসিস ক্যাপিটিস অর্থাৎ মস্তকের সোরাইসিস। এটা সমস্ত মস্তক ব্যাপিয়া কপাল ও গ্রীবাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ফলে মাথার চুল পড়ে যায়।

২. সোরাইসিস ফেসি : এটা মুখমণ্ডলের পীড়া। মুখের ওপর প্যাঁচগুলো পুরু ও শল্কযুক্ত হয়ে থাকে, এজন্য এটাকে কখনো কখনো দাউদ বলে ভ্রম হয়।

৩. সোরাইসিস পালমারিস : এটা হাত ও পায়ের পীড়া। পীড়ত স্থানের চর্ম শুষ্ক, কর্কশ, পুরু ও তাম্রবর্ণ ধারণ করে। ওপরের স্তরটি একটি খোলসের মতো উঠে যায়। কখনো কখনো আক্রান্ত স্থানটি ফেটে রক্তস্রাব হয়।

৪. সোরাইসিস আঙ্গুইনিয়াম : এই পীড়ায় আঙুলের নখগুলো আক্রান্ত হয়, ওইগুলো অস্বচ্ছ, অসমান হয় এবং কুঁচকে যায়। তারপর ফেটে গিয়ে লাইনে লাইনে আঁইশ জন্মে।

৫. সোরাইসিস সিফিলাইডিস : এরূপ পীড়ার সঙ্গে গৌণ উপদংশ রোগ সংযুক্ত থাকে। মধ্যপ ও বাতগ্রস্ত রোগীদের দেহেই, বিশেষত দেহকাণ্ডে এই রোগ প্রকাশিত হয়। চর্ম লালবর্ণ ও আঁইশযুক্ত হয়ে ওঠে।

রোগ নির্ণয় : প্রথম দর্শনে এই রোগ নির্ণয় করা কঠিন কারণ অন্যান্য চর্মরোগের সঙ্গে ভুল হতে পারে। মাথার সোরাইসিসের সঙ্গে খুশকির পার্থক্য আছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আঁশ জমে। তবে এর আঁশগুলো রুপালি চকচকে, এতে মাথার চুল নষ্ট হয় না। অপরদিকে অন্যান্য চর্মরোগে ভিজা ভিজা ভাব থাকে, তেল তেলে হলদে বর্ণের আঁশ ও মামড়ি পড়ে এবং চুলকানি হয়। এই রোগের সঙ্গে কুষ্ঠ সিফিলিস, একজিমা, ইরিথেমেটোমাস, নখের ফাঙ্গাস ইনফেকশন, ক্যান্সার ইত্যাদির ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক। কাজেই অতি সতর্কভাবে দেখতে হবে এবং অন্যান্য চর্মরোগের লক্ষণ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। স্কিন বায়োপসিতে সোরাইসিস রোগের প্রমাণ পাওয়া যায়।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : এই রোগগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে দৈহিক পরিচ্ছন্নতা এবং পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া অতীব প্রয়োজনীয়। গায়ে কোনো প্রকার মলম ও সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। গায়ে ভালোভাবে অলিভ অয়েল ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। এই রোগে হোমিওপ্যাথিতে অত্যন্ত ফলদায়ক ওষুধ আছে। যা অন্য প্যাথিতে নেই। লক্ষণ সাদৃশ্যে নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব। এই রোগে ব্যবহৃত ওষুধ নিম্নে প্রদত্ত হলো। যথা- ১. আর্সেনিক এল্ব ২. আর্সেনিক আয়োড ৩. ক্যালকেরিয়া কার্ব ৪. থাইরয়েডিন ৫. ফ্লুরিক এসিড ৬. মার্কুরিয়াস ৭. মেজেরিয়াম ৮. এসিড নাইট্রিক ৯. টিউবার কুলিনাম ১০. ব্যাসিলিনাম ১১. সোরিনাম ১২. থুজা ১৩. সালফার ১৪. সাইলিসিয়া ১৫. ক্যালকেরিয়া সালফ ১৬. সিফিলিনাম উল্লেখযোগ্য। তারপরেও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে ওষুধ সেবন করা উচিত। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435 // 01670908547
ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

ইমেইল-dr.zaman.polash@gmail.com

ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন
 ফেসবুক পেইজে লাইক দিন  https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *