ঘরের ধুলো থেকে অ্যালার্জি

3_12924

পরিচ্ছন্ন বাড়িতেও ধুলো অ্যালার্জি থাকা সাধারণ ঘটনা। ধুলোর কারণে অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, নিঃশ্বাসের সঙ্গে কাশি হয়।

ঘরের ধুলো প্রকৃতপক্ষে অনেক জিনিসের মিশ্রণ। এর উপাদানগুলো কম-বেশি হতে পারে; এক ঘর থেকে আরেক ঘরের ফার্নিচারের প্রকারভেদে, ঘর তৈরির উপাদান, পোষা প্রাণীর উপস্থিতি, আর্দ্রতার কারণে। ধুলোর মধ্যে থাকতে পারে সুতার আঁশ, মানব দেহের ত্বকের মৃত কোষ, প্রাণীর লোম, আণুবীক্ষণিক জীবাণু, তেলাপোকার প্রতঙ্গ, ছত্রাকের জীবাণু, খাদ্যকণা এবং আরও অনেক পরিত্যক্ত ক্ষুদ্র জিনিস। এর মধ্যে প্রাণীর লোম, তেলাপোকা এবং ধুলোর জীবাণু হচ্ছে প্রধান তিন বিপজ্জনক বস্তু। কোনো ব্যক্তি এগুলোর যে কোনোটির কারণে ভুগতে পারেন।

ঘর পরিষ্কারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ধুলোর অ্যালার্জি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। যেমন আপনি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে যত চেষ্টাই করুন না কেন, কার্পেট, মাদুর এবং বালিশ থেকে ধুলোর জীবাণু দূর করতে পারবেন না। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।

ধুলোর জীবাণু : অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক এ প্রাণীগুলো আট পায়ের অ্যারাকনাইড পরিবারের অন্তর্গত। আঁটুলি পোকা এবং চিগার একই পরিবারভুক্ত। এগুলো শক্ত দেহের অধিকারী। এরা ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার উচ্চ তাপমাত্রায় ভালোভাবে বাঁচতে পারে। ৭৫-৮০ শতাংশ আর্দ্রতাই এদের পছন্দ। আর্দ্রতা ৪০-৫০ শতাংশের কম হলে এদের বংশ বৃদ্ধি হয় না। শুষ্ক আবহাওয়ায় এদের দেখা যায় না।

শতকরা ১০ ভাগ মানুষ এদের কারণে আক্রান্ত হয়। অ্যাজমা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই এদের সংস্পর্শে এলে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়।

এ জীবাণু মুখমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে মানুষের অ্যালার্জি হয়। এদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বালিশে, মাদুরে, কার্পেটের ভাঁজে এবং আসবাবপত্রের তলায়। ঝাড়ু দিলে বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার প্রয়োগ করলে এরা বাতাসে ভাসতে থাকে অথবা হেঁটে হেঁটে অন্য প্রান্তে সরে যায়। অ্যালার্জি রোগীদের শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে উপসর্গ বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুমান তার নাক জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় বালিশে বাসা বেঁধে থাকা জীবাণুগুলোর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকে।

এদের খাদ্য মূলত পশুর লোম এবং ত্বকের মৃত কোষ। সুতরাং যেখানে মানুষের বাস, সেখানেই এদের বসবাস। এরা কামড়ায় না, অন্য কোনো রোগ ছড়ায় না এবং মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে না। এরা শুধু সেই মানুষগুলোর প্রতি ক্ষতিকর যাদের এ জীবাণুর প্রতি অ্যালার্জি রয়েছে।

ঘরে ধুলোতে ছত্রাক থাকে কেন : যে কোনো বাড়িতেই ছত্রাক কলোনি তৈরি হওয়া সম্ভব। বাড়ির বাসিন্দারা হয়তো দেয়ালে ছত্রাকের কলোনি দেখতে পায় না কিন্তু সেটি ঠিকই তৈরি হতে থাকে। দুটি জিনিস ঘরের মধ্যে ছত্রাকের কলোনি গড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বেশি আর্দ্রতা শতকরা ৫০ এর বেশি। পানির পাইপে ক্ষুদ্র ফুটা বা যে কোনো পানির প্রবাহ এতে ভূমিকা রাখে। দেয়ালে কোনো বোর্ড থাকলে বা স্যাঁতস্যাঁতে আসবাব থাকলে সেখানে ছত্রাক জন্মায়। ছত্রাকের স্পোর কাপড়ের মাধ্যমে ছড়ায়।

ঘরের ধুলোতে তেলাপোকা থাকে কি : তেলাপোকার বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ ঘরের ধুলোতে মিশে থাকে। বিশেষ করে পুরনো বাড়ি ও ফ্ল্যাটবাড়ি যেখানে বিভিন্ন ফ্ল্যাটে বিভিন্ন পরিবার বাস করে, সেখানে তেলাপোকা নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব। অ্যালার্জি আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষ করে অ্যাজমা রোগী এ ধরনের বাড়িতে গেলে তার উপসর্গ বেড়ে যায়। বেঁচে থাকা ও বংশবিস্তার করার জন্য তেলাপোকার দরকার খাদ্য ও আর্দ্রতা।

ঘরের ধুলোর অ্যালার্জি কি মৌসুমি : আমেরিকাতে ধুলোর জীবাণুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয় জুলাই-আগস্টে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এ উচ্চ সংখ্যা বজায় থাকে। বসন্তের শেষের দিকে ধুলোর জীবাণু ঘটিত অ্যালার্জির সংখ্যা সবচেয়ে কম থাকে। রোগী জানিয়েছেন, তাদের উপসর্গ সবচেয়ে বেশি হয় শীতকালে। এর কারণ হচ্ছে মৃত জীবাণু এবং জীবিত জীবাণুদের বর্জ্য উভয়ই অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন মৌসুমে ছত্রাকের পরিমাণও কমবেশি ঘটে। গ্রীষ্মের সময় তেলাপোকার পরিমাণ বেশি হয়।

গ্রীষ্মকালে মানুষ বাড়িতে সচরাচর বেশি সময় কাটায় বলে এ সময়ে অ্যালার্জির উপসর্গও বৃদ্ধি পায়।

কীভাবে ধুলোর জীবাণু থেকে দূরে থাকবেন : পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে ঠিক কোন্ ধরনের ধুলো উপাদান থেকে আপনি অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ধুলোর জীবাণু পরিপূর্ণভাবে অপসারণ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে আপনি কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন, যাতে পরিমাণটা কম থাকে।

শোবার ঘরের দিকে বিশেষ নজর দিন : গড়পড়তা হিসেবে মানুষ তার জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটায় বেডরুমে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধুলোর জীবাণুর পরিমাণ বেশি থাকে শোবার ঘরে। এজন্য ধুলো-অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শোবার ঘরের দিকে বেশি মনযোগ দিতে হবে।

* বেছে নিন এমন শোবার জিনিসপত্র যেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করা যায় এবং যাতে অ্যালার্জির পরিমাণ কম থাকে। বালিশে ফোম বা তুলা ব্যবহার না করে সিনথেটিক জিনিস ব্যবহার করুন। সপ্তাহে অন্তত একবার বিছানাপত্র ধুয়ে শুকিয়ে নিন।

* সম্ভব হলে বেডরুমে এয়ারকন্ডিশনার ও আর্দ্রতারোধক যন্ত্র ব্যবহার করুন। আর্দ্রতা কম থাকলে জীবাণু ও তেলাপোকার বংশবিস্তার রোধ হবে।

* জানালায় সূক্ষ্ম কাপড়ের ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ঘন ঘন বদলাতে হবে। কাপড় ক্লোজেটে রাখুন। ক্লোজেটের ঢাকনা বন্ধ রাখবেন।

* ঘরে কোনো মৃত প্রাণী বা প্রাণীর অংশ থাকলে অবিলম্বে বাইরে ফেলে দিন।

* শোবার ঘরে কখনও পোষা প্রাণী ঢুকতে দেবেন না।

মেঝের ধুলো কমানো

* নিয়মিত বিরতিতে ঘর পরিষ্কার করুন। মেঝে মোছার সময় স্যাঁতস্যাঁতে ও তৈলাক্ত কাপড় ব্যবহার করবেন না। ঘর পরষ্কারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।

* শোবার ঘরে কার্পেট ব্যবহার না করাই উত্তম। ব্যবহার করলেও এমন ধরনের কার্পেট নেবেন যেগুলোর আঁশ সুবিন্যস্ত।

* যেসব জিনিস ও আসবাবপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, সেগুলো বেডরুমে না রেখে অন্যত্র সরিয়ে ফেলুন।

ঘরের বাতাসের ধুলো কমানো : এমন ধরনের এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করুন যার দ্বারা ঘরের আর্দ্রতা শতকরা ৫০ ভাগের নিচে রাখা সম্ভব। এসির ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করুন প্রয়োজনে ঘনঘন ফিল্টার পরিবর্তন করতে হবে।

চিকিৎসা= এ সমস্যার জন্য হোমিওপ্যাথ একমাত্র চিকিৎসা,দ্রুত কোনো ভালো হোমিওপ্যাথ ডাক্তারের পরার্মশ নিন।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435 //01670908547
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com

( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *