গনোরিয়া রোগ প্রতিকারে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

download

গনোরিয়া রোগ প্রতিকারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের প্রয়োগ সংকেত নিয়ে আজকের নিবন্ধ। গনোরিয়া একটি ভয়ংকর যৌন রোগ। স্ত্রীলোক বা পুরুষদের প্রস্রাবনালীর অভ্যন্তরস্থ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির প্রদাহ হয়ে সেখান থেকে পুঁজেরমত স্রাব নিঃসৃত হলে তাকে প্রমেহ বা গনোরিয়া রোগ বলে। ইহা কেবলমাত্র যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেই এক নারী থেকে অন্য পুরুষে এবং এক পুরুষ থেকে অন্য নারীতে সংক্রমিত হয় এবং ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। পুরুষের মূত্রনালীর পশ্চাতে একটি গর্ত আছে ইহাকে ফসা-ন্যাভিকিউলারিস বলে। এই রোগ প্রথমে এই স্থানেই আরম্ভ হয় তারপর ধীরে ধীরে মূত্রনালী, মূত্রথলি ও অন্তকোষ আক্রান্ত হয়। নারীদের ক্ষেত্রেও মূত্রনালী, মূত্রথলী, জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান টিউব ইত্যাদি আক্রান্ত হয়। আর শিশুদের ক্ষেত্রে গনোরিয়াগ্রস্ত মায়ের পেট থেকে সন্তান বের হবার সময় ইহার পুঁজ সন্তানের চোখে লাগলে এক প্রকার চোখের রোগ হয়। ইহার ফলে চোখ অন্ধ হয়ে যাবার আশংকা থাকে। এই রোগ জীবাণু দেহের অন্যান্য যন্ত্র যেমন চোখ, গলা, জয়েন্ট ইত্যাদিও আক্রমণ করে।
এই রোগের কারণ :

১। সিফিলিস রোগের ন্যায় ইহাও একটি ইনফেকটিভ ও স্পেসিফিক পীড়া। গন-কক্কাস নামক এক প্রকার জীবাণু দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে। ইহা একটি দারুণ সংক্রামক ব্যাধি। উপদংশ রোগের ন্যায় ইহাও গনোরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সহবাসে সংক্রমিত হয়ে থাকে। রোগটি কমবেশি সব দেশেই দেখা যায়। হিসাব করে দেখা গেছে বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ২০-২৫ কোটি লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়।
২। রোগের দুষ্ট সেক্সস্যুয়েল কন্ট্রেক্ট বা যৌন মিলনের দ্বারা রোগটি ছড়ায়। এই রোগে আক্রান্ত স্ত্রী বা পুরুষের সংগে যৌন মিলনের ফলে অথবা সমকামিতার মাধ্যমে রোগটি সুস্থ পুরুষ বা নারীর যৌনাংগ তথা জনন ইন্দ্রিয়ে সংক্রমিত হয়। অনেক সময় অল্প বয়স্কা কুমারী মেয়েদের ঋতুবতী হবার পূর্বেই গনোরিয়া জীবাণু দ্বারা যৌনিদেশ ও যৌনি কপাট আক্রান্ত হয়ে ভালভো-ভ্যাজাইনাইটিস হয়। এর কারণ বড়দের দ্বারা অবৈধ ও রোগ দুষ্ট যৌন মিলন।photo-1438521998
৩। সংস্পর্শে এবং অপবিত্র সহবাসে এই রোগ বেশি হয়। যে সকল নারী অতিরিক্ত, অনিয়মিত এবং যথেচ্ছ সংগমরত থাকে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখে না তাদের এই রোগ বেশি হয়। এছাড়াও রোগীর ব্যবহৃত জীবাণুদুষ্ট জামা কাপড়, প্যান্ট, গামছা, তোয়ালে ব্যবহার থেকেও হতে পারে। আমাদের দেশে পতিতালয় থেকে এই রোগ অধিক পরিমাণে বিস্তার লাভ করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
রোগ প্রকাশের সময় : রোগ প্রকাশের সময় (INCUBATION PERIOD) পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩-১৪ দিন। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সময় আরো একটু বেশি। এদের জীবাণু সংক্রমণের পরে ১-৩ সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত রোগের লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পায়। অনেক মেয়েদের আবার যৌনাঙ্গে এই জীবাণুদের সংক্রমণ ঘটলেও তারা লক্ষণ বিহীন ক্যাবিয়ার হিসেবে অনেক সপ্তাহ বা মাস রয়ে যায়। এটা ধরা পড়ে তখনই যখন এদের অঙ্গে যৌন মিলনে পুরুষদের রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এছাড়া সমকামী পুরুষদের মুখ ও গলা এবং রেকটামে এই জীবাণুদের লক্ষণবিহীন সংক্রমণ দেখা যায়।
এই রোগের লক্ষণ :

১। বার বার মূত্র ত্যাগের ইচ্ছা। মূত্র ত্যাগকালে জ্বালাপোড়া করে। ২। প্রস্রাবের পথ কিট কিট করে কামড়ায়। । জনন ইন্দ্রিয়ে, প্রদাহ, উহা থেকে পুঁজ পড়ে। যৌনাংগে ব্যথা, সূচীবিদ্ধ যন্ত্রণা। ৪। মূত্রনালী চুলকায়, সুড়সুড় করে প্রথমে জলেরমত পড়ে সাদা ও হলদে পুঁজ নির্গত হয়। সর্বদাই ঝরতে থাকে, জামা কাপড়ে চটচটে দাগ পড়ে। ৫। পুরুষদের লিংগের ভিতরের নালীতে এবং মুখের কাছে এবং নারীদের মূত্রনালী ও যৌনির চারিপাশে ঘা হয়। ধীরে ধীরে ঘা বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ৬। চিকিৎসা না করলে মূত্রনালী অবরুদ্ধ হয়ে যায়। সরু ধারায় মূত্র বের হয় এবং তা কষ্টকর হয়। সংগমকালে আনন্দহীন এবং নিদ্রাকালে স্বপ্ন মাধ্যমে শুক্র ক্ষরণ হয়। এছাড়া পরে বাত, হৃদরোগ, স্নায়ুশুল, চোখের রোগ প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। ৭। রোগ পুরাতন হলে (ক্রনিক) পুজ পড়া, জ্বালা পোড়া, সুড়সুড় করা, ব্যথা, বেদনা প্রভৃতি থাকে। তবে গনো-কক্কাস জীবাণুর পরিবর্তে স্ট্রেপটো কক্কাস এবং স্টাফাইলোকক্কাস প্রভৃতি জীবাণু থাকে। ৮। গনোকক্কাস জীবাণু চোখকে আক্রমণ করলে চোখের যন্ত্রনা হয়। অবিরাম পুজ পড়ে, চোখের পাতা ফুলে ওঠে। প্রস্রাব দ্বার দিয়ে মাঝে মাঝে পুঁজের মত সাদা পাতলা জলের মত স্রাব ক্ষরণ হতে থাকে। প্রথম দিকে স্রাব পাতলা থাকে পরে তা ঘন, হলুদাভ ও প্রচুর বের হয়। ৯। কয়েক দিনের মধ্যে ইউরেথ্রার সম্মুখভাগের প্রদাহ আরো বৃদ্ধি পায়। দ্বারের মুখ আরো স্ফীত ও লাল হয়ে ওঠে এবং প্রবল স্পর্শ কাতর হয়। কখনো বা লিংগের উত্তেজনা বশত লিংগ উত্থান হলে ভয়ানক কষ্ট হয়। লিংগ উত্থানের এই কষ্টকর অবস্থাকে কর্ডি বলে। কুঁচকীর গ্লান্ড ফুলে যায়। অনেক সময় গ্লান্ডগুলো প্রদাহ ও ব্যথা হয়, পেকে পুঁজ জমে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। একে বাগী বা বিউবো বলে। সব সময় এই জাতীয় দুর্লক্ষণ হতে পারে। ১০। মলদ্বার ও পেরিনিয়ামে দপদপানি ও টাটানি যন্ত্রনা হয়। চিকিৎসা না হলে রোগটি কয়েক সপ্তাহ পরে সাব একিউট বা ক্রনিক হতে পারে। এই অবস্থায় মুত্রনালীর ক্ষত থেকে মাঝে মাঝে খুব সামান্য পুঁজ শ্লেষ্মা বের হয়ে কাপড়ে লেগে থাকতে পারে। এই অবস্থাকে গ্লিট বলে। ১১। গ্লিট বা ক্রনিক অবস্থায় যদি প্রস্টেট গ্লান্ডের প্রদাহ জড়িত থাকে তা হলে প্রস্রাব করার সময় অনেকক্ষণ বসে বা দাড়িয়ে থাকতে হয়। সহজে প্রস্রাব হয় না, অল্প অল্প ফোঁটা ফোঁটা পড়ে অথচ বেগ লেগেই থাকে এবং সমগ্র মুত্রনালী, পেরিনিয়াম ও কোমরে দপদপানি যন্ত্রণা থাকে।
রেকটাল গনোরিয়া : রেকটাল গনোরিয়ার লক্ষণটি সমকামি পুরুষদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। আক্রান্ত রোগীর মলনালী বা রেকটামের প্রদাহ তীব্রভাবে দেখা দিতে পারে। মলের সংগে মিউকাস বা পুঁজ শ্লেষ্মা বের হয়। জ্বালা যন্ত্রনা হয়। গুহ্যদ্বার ফুলে ওঠে, উহার ছাল উঠে যায়, মলত্যাগের ভয়ানক কষ্ট হয়।
গনোরিয়াল অফথালমিয়া : রোগদুষ্ট যৌন মিলনের সময় স্ত্রীর যৌনাঙ্গের স্রাব কোনভাবে চোখে লাগলে অথবা পুরুষ রোগীদের মুত্রনালীর স্রাব হাতে লাগলে সেই হাত ভাল করে না ধোঁয়া থাকলে দৈবক্রমে তা চোখের সংস্পর্শে এলে যেমন হাত দিয়ে চোখ মুছলে চোখে গনোকক্কাস ইনফেকশান ঘটে কনজাংটিভার প্রদাহ হতে পারে। এছাড়া নবজাতকের চোখে গনোকক্কাস ইনফেকশানও হতে পারে।
গনোকক্কাস ফ্যারিনজাইটিস : গনোরিয়ার জীবাণু দ্বারা ফ্যারিংস আক্রান্ত হয়ে এই রোগ হতে পারে। সমকামী পুরুষদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যায়। ইহা অনেক সময় লক্ষণবিহীন অবস্থায় থাকে। আক্রান্ত রোগীর গলায় অস্বস্তি বোধ হয়। গলা খুসখুস করা, সোরথ্রোট, কোন কিছু গিলতে গেলে গলায় লাগা ইত্যাদি দুর্লক্ষণ থাকতে পারে। গলা পরীক্ষা করলে গলার ভিতর টনসিলের চারপাশটা লাল দেখায়। অনেক সময় প্যালেট বা টাগরা ও আলজিভ লাল হয়ে ফুলে থাকতে পারে। কখনো কখনো গলায় পুঁজ শ্লেষ্মা জমতে পারে এবং গলা খাঁকরি দিলে তা বেরিয়ে আসে।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান :

গনোরিয়া রোগ প্রতিকারে হোমিওপ্যাথিতে অত্যন্ত ফলদায়ক ঔষধ আছে। যা অন্য প্যাথিতে নেই। নির্দিষ্ট মাত্রায় লক্ষণভেদে ঔষধ প্রয়োগে এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। এই রোগে ব্যবহৃত ঔষধ সংক্ষেপে বর্ণনা করা গেল।
১. ক্যানারিস ২. একোনাইট ৩. থুজা ৪. মেডোরিনাম ৫. সিপিয়া ৬. পালসেটিলা ৭. সালফার ৮. এসিড নাইট্রিক ৯. এসিড বেঞ্জায়িক ১০. এসিড ফু্লরিক ১১. মার্কসল ১২. হিসার সালফ ১৩. সাইলিশিয়া ১৪. আর্জেন্টমেট ১৫. আর্জেন্ট নাইট্রিকাম ১৬. সিনেবেরিস ১৭. মেজোরিয়াম ১৮. এসিড ফম ১৯. ক্যান্থারিস উল্লেখযোগ্য। তারপরও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে ওষধ সেবন করা উচিত।

সতর্কতাঃ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435 //01670908547
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com

( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *