বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সাফল্য।

বন্ধ্যাত্ব কি ?
বন্ধ্যাত্ব নিজে কোন রোগ নয় অন্য রোগের প্রতিক্রিয়াতেই এইরোগ হয়ে থাকে।
জরায়ুতেটিউমার,স্বাদা স্রাব,ক্ষত,জরায়ু সংকোচন,মেদভুরী,এবং অন্যকোন রোগ যাহা স্ত্রীলোককে দুর্বল করে বন্ধা করে ফেলে।অসাস্হকর পরিবেশে ও অপুষ্টিকর খাদ্যের জন্যও স্ত্রীদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।শরীরের প্রাকৃতিক বিধান জনিত কারনে বন্ধ্যাত্ব হলে কোন চিকিৎসাতেই সফল হয় না।কিন্তু অন্যরোগের পরিনামে বন্ধ্যাত্ব হলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় আরোগ্য হয়ে স্তান জন্ম দিতে সক্ষম হয়। নারীর মনের বাসনা একজন মা হওয়া।কোন কারনে মা হতে না পারা খুবই কষ্টের ।মাতৃত্বেই নারীর পুর্নতা।নারীর আজীবনের লালিত স্বপ্ন একটি সন্তান লাভ।যার সন্তান হচ্ছেনা তার কষ্ট সে ছাড়া কেউ জানে না।সন্তানের আশায় নারী পুরুষ উভই পাগলের মত দিকবেদিক ছুটতে থাকেন।নানা আপচিকিৎসার ফলে সন্তানের আশায় নিজের জীবন বিষময় করে ফেলেন।চিকিৎসা।নেওয়ার পুর্বেই বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা থাকা প্রয়োজন।চিকিৎসার প্রথমেই গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হলো রোগের কারন নির্নয় ও কারন অনুযায়ী প্রাকৃতিক চিকিৎসা নেয়া।চিকিৎসকের কাছে রোগের বর্ণনা দেয়ার প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় নিচে রোগের কারনসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
সন্তানের জন্ম দিতে অসামর্থকে বন্ধ্যাত্ব বলা হয়।যে সমস্ত স্ত্রীলোক এক বা ্একাধিক কারনে সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা বিলুপ্ত হইয়া যায় তাহাকে বন্ধ্যা বলে।
প্রাচিন কামশাস্ত্রে ১২ প্রকার বন্ধাত্বের উল্লেখ রয়েছে।নারী বায়ু,পিত্ত, কফস এই ত্রিদোষের কারনে বন্ধ্যা হয়।রক্ত দোষ জনিত রোগসমুহ।ভূতজ বা জীবানু ঘটিত সার্ব দৈহিক রোগ সমুহ।দৈবকৃত বা মৃত ও অভিচারজ জন্ম দাত্রী । প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী নারীর
বন্ধ্যাত্বের প্রকারভেদঃ 
১)আদিবন্ধা
২)কাকবন্ধা
৩)গর্ভস্রাবিনী।
গর্ভোৎপত্তির জন্য চারটি উপাদান প্রয়োজন।যথা:**ঋতু **ক্ষেত্র **জল **বীজ।
এই চার বস্তুর সান্নিধ্যে বীজ হইতে অঙ্কুর উৎপত্তিহয়।এই প্রকার ঋতুকাল গর্ভাশয় মাতৃশরীরে রস ও বীজ (শৈুক্রানু ও ডিম্বানু )সমাবেশে নারীতে গর্ভোৎপত্তি হয়।এই চারটি বস্তুর কোন একটি বা একাধীক বস্তুর অভাব বা বিকৃতি হইলে সন্তান উৎপত্তি হয না।সন্তান লাভের জন্য নারী ও পুরুষ উভয়েরই সক্ষমতা থাকতে হবে।
পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারনসমুহঃ
পুরুষের অক্ষমতা গুলো শুক্রানুর অভাব অথবা বিকৃতি,শুক্রাণুর গতিহীনতা,বীজবাহিনীর অবরোধ,পুরুসাঙ্গ ছোট বা যোনি ছেদন করিতে অক্ষম,সঠিক সময়ের পুর্বেই বীর্যপাত, অন্তকোষ না থাকা ও যৌনরোগাক্রান্ত হওয়া ইত্যিাদি কারনে পুরুষেরা সন্তান দানে অসমর্থ হয়।পুরুষের অন্ডগ্রন্হি হতে নির্গত শুক্রানুর সুস্হতার অভাব ও মৈথুনের অক্ষমতা এই দুইটি কারনের জন্য যেহেতু পুরুষ সন্তান উৎপাদনে অসমর্থ হয সেই হেতু এই কারনের পিছনে যে সকর রোগদায়ী তাহার চিকিৎসা জরুরী।

নারীর বন্ধ্যাত্বের কারনঃমানসিক কারনসমুহ যেমন মৈথুনের সময়ে মানসিক অস্হিরতা,দাম্পত্য কলহ,পারিবারিক অশান্তি,মানসিক আঘাত ইত্যাদি।মৈথুন বিষয়ে বিঘ্ন যেমন মৈথুন সহ্য না হওয়া,মৈথুন বিদ্বেষ,মৈথুন ইচ্ছাহীনতা।জননাঙ্গ সম্বন্ধীয় বিকৃতি যেমন গর্ভাশয় একেবারে ছোট অথবা সংকীর্নতা,বীজগ্রন্হির অভাব।শোধ অবরোধ যেমন -গনেরিয়া বা অন্যকোন যৌণ রোগ দ্বারা শোধ,অম্লস্রাব,মৈথুন শেষে শুক্রানু বের হয়ে আসা,গর্ভাশয়ের রোগসমুহ,গর্ভাশয়ের বিকৃতি বীজবাহিনীর অবরোধ ও বিকৃতি বা টিউমার হওয়া ইত্যাদি।দৈহিক অপুষ্টি,রক্তহীনতা,হরমোন জনিত গোলযোগ ইত্যাদি কারনে নারীর সন্তান হয়না।
সম্ভাব্য কারন নির্নয় করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দ্বারা সুফল পাওয়া যায়।হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল।

নারীর বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধসমুহের লক্ষণভিত্তিক আলোচনা ঃ

কালোফাইলম:সাদা স্রাবের কারনে নারী গর্ভধারনে অসমর্থ হলে কলোফাইলম উপযোগী।
নেট্রাম কার্ব:স্বামী-স্ত্রী সহবাসের পর স্বামীর বীর্য স্রীর যোনি হইতে বাহির হইয়া আসে বিধায় স্তান লাভ করতে অসমর্থ হয় তবে নেট্রাম কার্ব উপযোগী।
হেলোনিয়াস:অতত্যন্ত খিটখিটে স্বভাব,গভীর বিষাদপুর্ন।জরায়ুর নানা রোগ ভোগগের কারনে সন্তান না হলে এ ঔষধটি উপযোগী।
কোনিয়াম:নারীর অনিয়মিত মাসিক,মাসিক কম,মাসিকের সময় স্তনে বেদনা এই লক্ষণ সমষ্টি যে নারীর মাঝে পাওয়া যায় তার জন্য উপযোগী।
অরাম মিউর নাট:জরায়ু রোগাক্রান্ত রোগিনীর জন্য অরাম মিউর নাট উপযোগী।জরায়ুতে ছোট ছোট টিউমার,বেশী বেশী রক্ত প্রদর ইত্যাদি লক্ষনে উপযোগী।
বোরাক্স:ডিমের সাদা অংশের মত প্রচুর সাদা স্রাব সব সময় যোনী ভিজিয়া থাকে।চুল জরিয়ে যায়,উপর হতে নিচে নামতে ভয় নেই বন্ধ্যা নারীল জন্য উপযোগী।
অরাম মেট:সন্তান না হওয়ার কারনে ভীষণ মনোকষ্ট,সর্বদা মনমরা,সন্তান পাওয়ার চিন্তা সবসময় চিন্তিত সেইরোগীর জন্য অরাম মেট উপযোগী।
এগনাস্টাস ক্যাকটাস:যে রমনীর মাসিক অনিয়মিত,স্বল্পস্রাব,সাদা বা হলুদ প্রদর স্রাব কাপড়ে দাগ পরে সেই নারীর বন্ধ্যাত্বের জন্য উপযোগী।
উথানিয়া:ইহার অপর নাম অশ্বগন্ধা এই ঔষধটি নিয়মিত বন্ধ্যা নারীকে নিয়মিত দিলে সে সন্তান লাভের উপযোগী হয়।এ ঔষধটি সেবনে নারীর স্বাস্হ্য সবল হয় ডিম্বানু উৎপন্ন হয় ও সন্তান লাভের উপযুক্ত হয়।
আয়োডিয়াম:রাক্ষুষে ক্ষুধা রোগিনী ঠিকমত খায় কিন্তু শরীর ক্রমশ: শুকাইয়া যায়।স্তন শুষ্ক,ডিম্বকোষ,জরায়ুর রোগ ভোগ ইত্যাদির কারনে নারী সন্তান উৎপাদনে অসমর্থ হলে আইয়োডিয়াম উপযোগী।
প্লাটিনা:রোগিনী প্রবল কামাতুর,নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে তলপেটে একটি জীবিত কোন বস্তুর নড়াচড়া অনুভব করেনমণ মণ সর্বদা পরিবর্তনশীল এই রমনীর জন্য প্লাটিনা উপযোগী।
পালসেটিলা:নম্র স্বভাবের রমনী,ক্রন্দনশীল,মন পরিবর্তনশীল,জরায়ু তলপেট,কোমর বেদনায় কাতর,বাধক বেদনা মাসিক কম ইত্যাদি লক্ষণ সমষ্টি যে নারীর মাঝে পাওয়া যায় তার জন্য পালসেটিলা উপযোগী।

জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের বিকৃতির জন্য অধিকাংশ স্ত্রীলোক বন্ধ্যা হইয়া থাকে।এই জন্য জন্য সকল লক্ষণ বিবেচনায় ঔষধ প্রয়োগ জরুরী।ধাতু দোষের কারনে ও বন্ধ্যাত্ব হতে পারে তাহার জন্য
ক্যালকেরিয়াকার্ব,সিমিসিফুগা,ব্যাসিলিনাম,ফেরামমেট,ডাস্কোরিয়া,ফসফরাস,এসিডফস,স্যাবাইনা,সিপিয়া,সালফার প্রভৃতি ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
নারীর বন্ধ্যাত্বের বাইয়োকেমিক চিকিৎসাঃ
নেট্রামমিউর:লবনপ্রীয় রোগীনির মাসিকের গোলযোগ,সহবাসে অনিচ্ছাসহ নেট্রাম মিউরের সার্বলাক্ষনিক।বিবেচনায় যদি নেট্রাম মিউরের উপযোগী রোগী হয় তবে এ ঔষধটি একটি মুল্যবান ঔষধ।মাত্রা: ২০০শক্তির ৪ বড়ি দিনে ২বার আহারের পরে।
ক্যালকেরিয়া ফ্লোর:জরায়ুতে টিউমার,পলিপাস সাদাস্রাব ও ওভারীর রোগসমুহ যে রোগীর মাঝে আছে সেই।রোগীর জন্য ক্যালকেরিয়া ফ্লোর উপযোগী।মাত্রা: ২০০শক্তির ৪ বড়ি দিনে ২বার আহারের পরে।
সাইলেসিয়া:ঋতুর পরিবর্তে সাদাস্রাব,স্রাবের পরিমান অনেক বেশী,হাজাকারক,স্রাব হওয়ার আগে তলপেটে বেদনা অনুভব ,ফেলোপিয়ান টিউবে পুজ বা পানি জমা।যোনি ফোলা,স্রাবে অত্যন্ত দুর্গন্ধ,অনিয়মিত মাসিক ,ইত্যাদি লক্ষন যে রেগিনীর মাঝে আছে তার জন্য অত্যন্ত প্রযোজনীয় ঔষধ।মাত্রা: ২০০শক্তির ৪ বড়ি দিনে ২বার আহারের পরে।
ক্যালকেরিয়া ফস:জরায়ুর দুর্বলতা,মনে হয় জরায়ু নিচে নেমে যাচ্ছে,পায়খানা প্রস্রাবের পরে রোগ বেশী মনে হয়,জরায়ুর স্হানচ্যুতি।সাদা স্রাব দুধেরমত সাদা।মাসিকের পরে সাদা স্রাব।মাসিকের রং কখনও লাল কখনও কাল ইত্যাদি রোলক্ষন যে রোগিনীর মাঝে পাওয়া যাবে তার জন্য ক্যালকেরিয়া ফস উপযোগী।মাত্রা: ২০০শক্তির ৪ বড়ি দিনে ২বার আহারের পরে।
নেট্রাম ফস:জরায়ু ও যোনির স্রাহ হলুদ,পাতলা,অম্ল গন্ধ যুক্ত ঘ্রানে বমি আসলে সেই রোগিনীর জন্য নেট্রাম ফস অত্যন্ত উপযোগী ঔষধ।মাত্রা: ৬,১২শক্তির ৪ বড়ি দিনে তিন বার আহারের পরে।
বন্ধ্যাত্বের মুল কারন অনুসন্ধান করিয়া তার প্রতিকার প্রয়োজন।বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা একটি জটিল ব্যাপার।বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার জন্য সময়ের প্রয়োজন।নারীর বন্ধাত্ব চিকিৎসার সফলতার জন্য নারীর সুস্হ্যতা প্রয়োজন এ জন্য পুষ্টিকর খাদ্য যেমন ঘী ও দুগ্ধজাত দ্রব্য পথ্য দিলে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।

ডাঃ ইয়াকুব আলী সরকার