হোমিওপ্যাথি মানবজীবনকে দীর্ঘায়িত করে

Homeopathy & longivity (হোমিওপ্যাথি মানবজীবনকে দীর্ঘায়িত করে) :-

চিকিৎসাবিজ্ঞানী মহাত্মা স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এবং তাঁর অনেক উত্তরসুরি বিগত দুইশ বছর যাবত দাবী করে আসছেন যে, এলোপ্যাথিক চিকিৎসা আয়ু হ্রাস করে থাকে এবং বিপরীতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করে। কিন্তুহোমিওপ্যাথিকে যারা এলোপ্যাথির চাইতে উৎকৃষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি মনে করে না, তাদের কাছে এটি একটি ফালতু এবং ফাঁকা বুলি হিসেবে গণ্য। যতটুকু জানা যায়, বিষয়টিকে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রমাণ করার কোন প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি। তারপরও এটি সহজেই প্রণিধানযোগ্য যে, হোমিওপ্যাথি তার অনুসারীদের দীর্ঘজীবন নিশ্চিত করার বাস্তব ভিত্তিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। ইহা সর্ববিদিত যে, জীবনবীমার দৃষ্টিতে চিকিৎসকদের জীবনকে মন্দ জীবনহিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে, যদিও মদ্যপ বা মাদক ব্যবসায়ীদের মতো ততটা নয়। জীবনবীমা কোম্পানির পরিসংখ্যানে বিংশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডের এক বছরের পেশাদার পুরুষদের তুলনামূলক মৃত্যুহার ছিল এই রকম ঃ – (১) পাদরী, পুরোহিত, ধর্মযাজক- ৪৪৩, (২) কৃষি শ্রমিক- ৪৭০, (৩) খামার মালিক- ৪৯৫, (৪) রেলওয়ে রক্ষী, দাড়োয়ান- ৬০৭, (৫) ব্যারিষ্টার, উকিল- ৬২৭, (৬) গৃহনির্মাণ কর্মী- ৬৫৬, (৭) চিকিৎসক এবং শল্যচিকিৎসক- ৬৯৩, (৮) কয়লাখনি শ্রমিক- ৭২৭ এবং মদ ব্যবসায়ী- ১৭২৪। উক্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ডাক্তার এবং সার্জনদের মৃত্যুহার প্রায় ৫০% যা সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র, রোদ-বৃষ্টিতে খেটে খাওয়া, অস্বাস্থ্যকর গৃহে বাস করা আর সবচেয়ে বেশি চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত কৃষি শ্রমিকদের চেয়েও বেশী। চিকিৎসক এবং সার্জনদের উচ্চ মৃত্যুহারের কারণরূপে উল্লেখ করা যায় তাদের অত্যন্ত কর্মব্যস্ত জীবন, অনিয়মিত পানাহার, ঘনঘন রোগ-জীবাণুর সংস্পর্শ ইত্যাদিকে। আমি বিশ্বাস করি যে, চিকিৎসা পেশাজীবিদের আপত্তিকর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির কারণ তাদের নিজেদের ওপর দ্রুত ঔষধ প্রয়োগের প্রবনতা এবং খাবার-পানীয় সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধির মৌলিক ধারাগুলোকে অবহেলা করাইত্যাদি ইত্যাদি, যা সম্পর্কে অনেক চিকিৎসকেরই অল্প ধারণা বিদ্যমান। ব্রাইটস ডিজিজ, ডায়াবেটিস, যকৃত রোগ এবং পরিপাকতন্ত্রের রোগে চিকিৎসকদের মৃত্যুহার অত্যধিক বেশী হওয়া তাদের ত্রুটিযুক্ত পুষ্টি অবস্থাাকে নির্দেশ করে।

চিকিৎসকদের উচ্চ মৃত্যুহারের কারণকে যদি ধরে নেওয়া হয় তাদের পেশাকে তবে একই যুক্তি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়ার কথা। কিন্তুবাস্তব পরিসংখ্যান সেটি বলে না। হ্যানিম্যান নিজে ৮৮ বছর বেচে ছিলেন এবং মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পযর্ন্ত পূর্ণ উদ্যমে কাজ করে গেছেন। তিনি ৮০ বছর বয়সে প্যারিসে হিজরত করেন এবং অর্গাননের ষষ্ট সংস্করণ লেখার জন্য জীবনের এই অবশিষ্ট আট বছরে যতো পরিশ্রম করেছেন, সারাজীবনেও তিনি অতোটা কঠোর পরিশ্রম করেননি। বিপুল সংখ্যক হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসক তাদের জীবনের চূড়ান্ত বার্ধক্যে পৌঁছে ছিলেন এবং তাদের অধিকাংশই জীবনের শেষ মুহূর্ত পযর্ন্ত কর্মঠ ছিলেন। কোন হোমিওপ্যাথ যদি একটু ক্লেশ স্বীকার করে গত বিশ বছরের এলোপ্যাথিক এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের মৃত্যুর রেকর্ড পর্যালোচনা করতেন; তবে দাবীটি সহজে প্রমাণ হতো যে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহনকারীরা দীর্ঘ জীবন লাভ করে থাকে। ব্রিটিশ হোমিওপ্যাথিক জার্নালসমূহ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, হোমিওপ্যাথির আবিষ্কারক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান বেঁচে ছিলেন ৮৮ বছর এবং তাঁর সহধর্মীনী মেলানী বেঁচে ছিলেন ৮৮ বৎসর যিনি ছিলেন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ডাক্তার এবং হোমিওপ্যাথ। হ্যানিম্যানের নাতী ডাঃ লিওপোল্ড বেঁচে ছিলেন ৮৮ বছর। অন্যান্য হোমিও চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং ডাক্তারদের মধ্যে ডাঃ কনস্ট্যান্টাইন হেরিং ৮০, ডাঃ হেইল ৭৯, ডাঃ এলেন ৭৫, ডাঃ স্ক্রিনার ৮১, ডাঃ ভন বয়েনিংহুসেন ৮৩, ডাঃ ড্রিসডেল ৭৫, ডাঃ ফিঙ্কি ৮৫, ডাঃ বরিক ৮০, ডাঃ গারসটাল ৮৩, ডাঃ ডাডজেন ৮৪, ডাঃ গারসডরফ ৭৭, ডাঃ মারেনজিলার ৮৯, ডাঃ কাউন্ট ডি গাইডি ৯৪, ডাঃ কুইন ৭৯, ডাঃ রিচার্ট ৮৬, ডাঃ পেসচার ৭২, ডাঃ লেম্যান ৭৭ বছর আয়ু লাভ করেছেন। তালিকাটি যদিও অসম্পূর্ণ কিন্তুবেশ চিত্তাকর্ষক।

ইলিস বারকার জি নামক একজন গবেষক “হোমিওপ্যাথিক ওয়ার্ল্ড”নামক একটি ব্রিটিশ চিকিৎসা সাময়িকীতে ত্রিশ বছরে প্রকাশিত ডাক্তারদের মৃত্যুসংবাদ বা কুলখানি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত বয়সের পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেন যে, অধিকাংশ হোমিও চিকিৎসক গড়ে ৮০ বছর আয়ু লাভ করেছেন। সর্বোপরি এসব হোমিও চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং ডাক্তারগণের অনেকেই ঔষধ আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে মারাত্মক মারাত্মক সব ঔষধ প্রচুর পরিমাণে খেয়ে নিজেদের দেহ-মনের উপর তাদের গুণাগুণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন যা খুবই বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তারপরও গড়ে তাহারা যে পরিমাণ আয়ু পেয়েছেন তা এলোপ্যাথিক ডাক্তারদের তুলনায় অনেক বেশী। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, হোমিওপ্যাথি তার অনুসারীদের জীবনকাল নিশ্চিতভাবেই দীর্ঘায়িত করে থাকে।

প্রভাষক ডা. এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর
01711-943435 ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

ইমেইল-dr.zaman.polash@gmail.com

ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com