অস্টিওআরথ্রাইটিস- বয়স কালের বাত রোগ।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ

8
বাবা,মা, নানা, নানী সবারই ব্যাথা আর ব্যাথা, হাতে পায়ে হাটুতে, কোমোরে সবখানেই। সবাই বাতের রুগী।বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাত জেকে ধরে আর ব্যাথাতে কষ্ট পান বয়স্কেরা।বৃদ্ধ বয়সের এমনি এক রোগ অস্টিওআরথ্রাইটিস । অনেক ডাক নাম আছে রোগটার যেমন “ডিজেনারেটিভ জয়েন্ট ডিজিজ”, “অস্টিও আরথ্রোসিস” জয়েন্ট ক্ষয় রোগ’ ইত্যাদি। নামের থেকেই বোঝা যায় রোগটা হল গিঠ বা জোড়ার প্রদাহ আর জন্ম হয়েছে ডিজেনারেশান বা ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে।কথাটা এসেছে গ্রীক ভাষা থেকে।মানব সভ্যতার মতই পূরোনো রোগটি।সেই প্রস্তরযুগের ফসিল, মিসরের “মমি” সবারই হাড়ে পাওয়া গেছে এই রোগের চিহ্ন। একশোর ও বেশী প্রকারের আরথ্রাইটিস রোগের মধ্যে সবচে’বেশি হল এ রোগ, প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ।আমেরিকাতে দু থেকে আড়াই কোটি আর বৃটেনে ৩০ থেকে ৪০লক্ষ লোক এই রোগের রুগী।fdsfdsfds

গিঠের গঠনঃ-আমাদের শরীরের ফ্রেম হল হাড় দিয়ে তৈরী যার উপর ভর দিয়ে আমরা সোজা হয়ে দাড়াতে পারি, কাজ করতে পারি।একটা হাড় আরেকটা হাড়ের সাথে গিঠ এর মাধ্যমে যুক্ত। মাংশপেশীর কাজ হোলো এই জয়েন্ট বা গিঠকে নড়াচড়া করানো ভাজ করা্নো ইত্যাদি।দুটো হাড় গিঠের যেখানে এসে মিশেছে সেখানে হাড়ের প্রান্তদুটো কার্টিলেজ দিয়ে ঢাকা থাকে।এই কার্টিলেজ হাড়ের প্রান্তদুটোতে মসৃন গদি হিসেবে কাজ করে। হাড় দুটো জোড়া থাকে একটা থলি বা জয়েন্ট ক্যাপসুল দিয়ে।থলির দুই প্রান্ত দুই হাড়ে লাগান থাকে আর থলির ভিতর দিককার লাইনিং হোলো “সাইনোভিয়াম”। এই সাইনোভিয়াম তৈরি করে সাইনোভিয়াল ফ্লুইড যা জমা থাকে থলি বা ক্যাপসুলএর মধ্যে।সাইনোভিয়াল ফ্লুইড কাজ করে লুব্রিক্যান্ট বা পিচ্ছিলকারক হিসেবে।সাইনোভিয়াল ফ্লুইড এবং কার্টিলেজ দুটোতে মিলে জোড়াকে ঘর্ষনবিহীন মসৃন নড়াচড়াতে সাহায্য করে।

অস্টিওআরথ্রাইটিস রোগটা কি?
এক কথায় এটা হল গিঠ ক্ষয়ে যাওয়া রোগ আর সবচে’ বেশি আক্রান্ত হয় হাড়কে ঢেকে রাখা কার্টিলেজ ।বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের গিঠের কারটিলেজে পানি কমতে থাকে আর ভঙ্গুর হয়ে যায়।ক্রমাগত ঘর্ষনের ফলে এক সময় কার্টিলেজ মসৃনতা হারায় আর পৃষ্ঠদেশে ছোট ছোটো ক্ষত সৃষ্টি হয় যা আস্তে আস্তে গভীর হতে হতে গভীরতর হতে থাকে এবং এক সময় নিচের হাড় বেরিয়ে আসে।কার্টিলেজ হয়ে যায় পাতলা।গিঠের ভিতরে জায়গা যায় কমে।কার্টিলেজ না থাকাতে গিঠের মসৃনতা থাকে না,গিঠের চলাচল ব্যাহত হয়, সাথে ব্যাথা।হাড়ে হাড়ে ঘষা খেয়ে অনেক সময় শব্দ হয় গিঠের ভিতর।গিঠ জাম মেরে ধরে থাকে।আর গিঠের প্রান্তে তৈরি হয় ছোটো ছোটো হাড় যার নাম অস্টিওফাইট।স্বাভাবিক অবস্থায় খুব বেশী প্রদাহ না থাকলেও আঘাত, অত্যধিক ব্যাবহার বা অন্য কোনো কারনে গিঠ মাঝে মাঝে প্রদাহে আক্রান্ত হয়। তখন গিঠের ফোলা এবং ব্যাথাও বেড়ে যায়।

অস্টিওআরথ্রাইটিস রোগের কারনঃ- সঠিক একক কারন জানা যায় নি। বরং অনেক গুলো কারনই এই রোগ হওয়ার পেছনে দায়ী।4

১) বয়সঃ-রোগটা শুরু হয় ৪০ বা ৫০ বছর বয়সের পর থেকে। সে হিসেবে বৃদ্ধ বয়সের রোগ এটি।বয়স যদিও গুরুত্বপুর্ন এটি কিন্ত অবধারিত কারন নয়।কদাচিত কখনো কখনো রোগটি অল্প বয়সেও দেখা যায় আবার অতি বৃদ্ধ বয়সেও রোগের লক্ষন দেখা যায় না ।

২) গিঠ আঘাতপ্রাপ্ত হলে, অত্যধিক ব্যবহৃত হোলে বা অন্য কোনো রোগগ্রস্থ হলেও অস্টিওআরথ্রাইটিস দেখা দিতে পারে।

৩) লিঙ্গঃ- পুরুষ বা মহিলা যে কারও এ রোগ হতে পারে।তবে আনুপাতিক হারে মহিলার সংখ্যা বেশি।

৪) শরীরের ওজনঃ – বেশি ওজন একটি গুরুত্বপুর্ন কারন।মোটা হলে বা ওজন বেশি হলে গিঠের উপর বেশি চাপ পড়ে এবং জয়েন্ট কারটিলেজ দ্রুত ক্ষয়ে যেতে থাকে।10

৫)পেশাঃ- কোনো কোনো পেশা তে গিঠের উপর বেশী চাপ পড়ে এবং কার্টিলেজের ক্ষয় তরন্বিত হয়ে অস্টিওআরথ্রাইটিস হতে পারে।

৬) বংশগতঃ- সরাসরি বংশগত রোগ নয় তবে পারিবারিক প্রভাব আছে।
৭)মাংসপেশীর দুর্বলতাঃ সবল পেশী গিঠের সাপোর্ট। মাংশপেশি দুর্বল হলে গিঠ সহজেই আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং গিঠের ক্ষয় তরান্বিত হয়।
প্রকারভেদঃ- অস্টিওআরথ্রাইটিস দুই প্রকার, -প্রাইমারি, যখন অস্টিওআরথ্রাইটিস অন্য কোন কারন বা রোগ ছাড়াই হয়, সেকেনডারি- যখন রোগটি অন্য কোন কারনে বা রোগের ফলে হয়।
যে সমস্ত গিঠে অস্টিও আরথ্রাইটিস বেশী দেখা যায় সেগুলো হলঃ-
হাটু, হি্প, মেরুদন্ড, হাত্, কনুই ইত্যাদি।যে সমস্ত গিঠকে শরীরের ওজন বহন করতে হয় যেমন হাটু বা হিপ জয়েন্ট সে গুলোতে অস্টিও আরথ্রাইটিস বেশি দেখা যায় আর এই সমস্ত গিঠের রোগই বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে হাটা, চলাফেরা,ওঠাবসা করতে।
রোগের লক্ষনঃ-
১)গিঠে ব্যাথা , গিঠ ফোলা ,গিঠ ব্যবহার করতে কষ্ট, গিঠে জাম মেরে ধরে থাকা ইত্যাদি এই রোগের প্রধান লক্ষন।

২)এ রোগে সবচে বেশি আক্রান্ত হয় হাটু তাই হাটু ভেঙ্গে নিচে বসা, নিচে বসা, নামাজ পড়া, পায়খানা প্রস্রাব করা, সিড়ি ভেঙ্গে ওঠা নামা করা কাজ গুলো করতে অসুবিধা হয়।সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বা কাজ কোরে একটু বিশ্রাম নিলে জাম মেরে ধরে থাকা ভাবটা বেশি অনুভুত হয়। একটু কিছুক্ষন ব্যবহার করলে গিঠের নড়াচড়া সহজ হয়ে আসে।
৩)মাঝে মাঝে গিঠের ফোলা এবং ব্যাথা বেড়ে গিয়ে হাটা চলা এবং কাজ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

৪)অনেক সময় ক্ষয়ে যাওয়া হাড় একটা আরেকটার সাথে ঘষা খেয়ে ব্যাথার সাথে সাথে গিঠের মধ্যে কট কট শব্দ হয়।

চিকিৎসা– হোমিওপ্যাথি এর একমাত্র ভালো চিকিৎসা,অন্য কোনো চিকিৎসা ব্যাবস্থায় এ রোগের ভালো কোনো চিকিৎসা নাই।

=====================================================================

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435 // 01670908547
ইমু 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন
Face Book page : ( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *