আদর্শ অভিভাবক হওয়ার দশটি গুণাবলী

মা-বাবা সন্তানের জন্য পরম নির্ভরতার একটি স্থান। মা-বাবা আর সন্তানের সম্পর্ক পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর সম্পর্কের একটি। মা-বাবা তাদের সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন। মা-বাবা তাদের Knowledge এবং অভিজ্ঞতার আলোকে সন্তানকে বড় করে তোলেন।  তারপরও  আদর্শ অভিভাবক হওয়া পৃথিবীর সব থেকে কঠিন কাজগুলোর একটি।

আদর্শ অভিভাবকদের মধ্যে কি কি গুণাবলী থাকে তা জেনে নিনঃ

১। সন্তানকে ভালোবাসা ও স্নেহ করা:   

প্রতিটি মা-বাবাই  তাদের সন্তানকে ভালোবাসেন। হয়তো প্রকাশ ভঙ্গির ভিন্নতা থাকে, তবে অনেকই সন্তানের প্রতি জমানো স্নেহ-মমতা প্রকাশ করতে পারেন না। কিন্তু একজন সন্তানের সঠিক বেড়ে উঠার জন্য মা-বাবার স্নেহ-মমতা অপরিহার্য। তাই অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে। দেখাতে হবে যে একজন সন্তানের জন্য তাদের ভালোবাসা অতুলনীয়।

২। বাচ্চাকে প্রশংসা করা:

আদর্শ অভিভাবকত্বের অন্যতম গুন হল বাচ্চাকে প্রশংসা করা। যে কোন কাজের ক্ষেত্রে সন্তানকে প্রশংসা করুন। এতে তার মাঝে ইতিবাচক আত্নবিশ্বাস,  Knowledge, সৃজনশীলতা তৈরি হবে, যা তার বেড়ে উঠার জন্য অনেক গুরত্বপূর্ণ।

৩। অন্যের সাথে তুলনা না করা:

প্রত্যেকটা বাচ্চাই আলাদা। তাদের Knowledge, মেধা, সৃজনশীলতা ও গুণাবলীর প্রকাশভঙ্গি আলাদা। সুতরাং কোন বাচ্চাকে অন্য কোন বাচ্চার সাথে তুলনা করা বোকামি। এতে তাদের মনে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়। ভাল অভিভাবকত্বে মূলত বাচ্চাকে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে সফলতার পথে হাটতে শেখানো হয়।

৪। বাচ্চার কথা মনোযোগ সহকারে শোনা:

বাচ্চার কথা মনোযোগ সহকারে শোনা, তার সমস্যা সমাধানে সাহায্য করা, এসব তাকে গুরত্বপূর্ণ ভাবতে সাহায্য করে। ছোট বড় যেকোন সমস্যায় সে যেন আপনার কাছেই ছুটে আসে, সেইটুকু নির্ভরতার জায়গাটা তৈরি করুন।

৫। বাচ্চাকে সময় দেয়া:

আপনার ব্যস্ত শিডিউলের মাঝেও সময় বের করে বাচ্চাকে  নিয়ে ঘুরতে যান, খোলাখুলি কথা বলুন, তার পছন্দ-অপছন্দের গুরত্ব দিন। একাধিক বাচ্চা হলে তাদের সবাইকে সমান গুরত্ব দিন এবং একত্রে সময় কাটান। শিশুদের সাথে কখনোই বৈষম্যমূলক আচরণ করবেন না।

৬। অযথা রাগ দেখাবেন না:

জীবনে অনেক সমস্যা থাকতে পারে, তার মানে এই নয় যে, আপনি আপনার বাচ্চার উপর রাগ ঝাড়বেন। সে ভুল করলে তাকে বুঝিয়ে বলুন, যাতে সে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলতে শিখে। শৃংখলাবদ্ধতা, দায়িত্ব নেয়া, ভুল স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া ইত্যাদি ভাল আচরণ করতে শেখান।

৭। বাচ্চার সামনে কখনোই ঝগড়া করবেন না:

মা-বাবার দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কের কারনে বাচ্চার উপর নেতিবাচক প্রভাব পরে। বাচ্চার সামনে ঝগড়াঝাটি, মারামারি করলে তা বাচ্চাকে নিরাপত্তাহীনতার মাঝে ঠেলে দেয়। সুতরাং বাচ্চার সামনে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ বজায় রাখুন।

৮। স্বাবলম্বী হতে শেখান:

আপনার বাচ্চাকে নিজের কাজ নিজে করতে শেখান। ছোটখাটো কাজ যেমন, তার বই, খেলনা, কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি করতে দিন। মা-বাবার কাজে কিংবা অন্যের কাজে সাহায্য করার মধ্য দিয়েই একটি শিশু দায়িত্ববান হয়ে উঠে।

৯। অতিরিক্ত আশা না করা:

আমাদের সমাজে মা-বাবারা  তাদের স্বপ্নের বোঝা শিশুদের উপর চাপিয়ে দেয়। ফলে সে না পারে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে, না পারে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে। বাচ্চার প্রতি অতিরিক্ত আশা না করে, তাকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী পছন্দমতো পথে চলতে দিন। তার স্বপ্নপূরণের পথে সে যেন সঠিক ভাবে চলতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। তাকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলুন এবং আগ্রহ ও মজার সাথে পড়া-লেখা করতে সাহায্য করুন।

১০। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে দিন:

শিশুরা অবুঝ, তারা ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তারা তাদের ভুল আচরণ যাতে বুঝতে পারে এবং নিজেকে সংশোধন করতে পারে সেই চেষ্টা করুন। তাকে ভাল-মন্দের পার্থক্য বোঝান এবং খারাপ আচরণের জন্য সীমিত শাসন করুন। তবে শিশুদেরকে কখনোই সবার সামনে বকা দিবেন না, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বরং তাকে তার ভুল আচরণের খারাপ দিক সম্পর্কে ব্যাখ্যা করুন। আর তাতেই একটি শিশু তার নেতিবাচক আচরণ থেকে সংশোধন হয়ে ইতিবাচক আচরণ করতে শিখবে। মা-বাবা থেকে প্রাপ্ত Knowledge সন্তানের চলার পথের পাথেয় হিসাবে কাজ করে এবং তাকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *