আপনি কি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ?

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ

.1462870_575823285822257_781064106_n
জীনগত অসামঞ্জস্যতা এমন একটি ব্যাধি , যেটা একটি একক ডিএনএ এর পরিপূর্ণ ক্রোমোজোম বা ক্রোমোজোম সমষ্টির বৃদ্ধি অথবা ঘাটতির জন্য একক জীন এ যে সামান্য পরিবর্তন সাধিত হয় তা থেকে ঐ অস্বাভাবিকত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে , আর এই অস্বাভাবিকত্ব বৃদ্ধি পাওয়াই হল জীনগত অসামঞ্জস্যতা ।
স্তন ক্যান্সার হল জীনগত অসামঞ্জস্যতার মাঝে অন্যতম । বর্তমান বিশ্বে যা একটি ভয়াবহ ব্যাধি হিসেবে পরিচিত । তবে বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নের ফলে এই ব্যাধি কে জয় করা অনেকাংশেই সম্ভব হয়ে উঠেছে ।

স্তন ক্যান্সার কি?

শুধুমাত্র আমাদের দেহের কার্যক্রম গুলো সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য এবং সচল রাখার জন্য কোষ সাধারনত বৃদ্ধি পায় এবং বিভক্ত হয় । কিন্তু মাঝে মাঝে কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক কার্যক্রম গুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং কোষ সমূহ অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে টিউমারে পরিণত হয় । এটাকেই ক্যান্সার বলা হয় । যখন স্তন টিস্যুর কোষ সমূহ কান্সারে আক্রান্ত হয় তখন তাকে স্তন ক্যান্সার বলা হয় । স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্তদের মাঝের বেশীরভাগের ই তাদের পূর্ব পুরুষদের মাঝে কারো এই রোগে আক্রান্ত হবার ইতিহাস নেই । শুধুমাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ রোগী ই বংশগতভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে । BRCA1 অথবা BRCA2 জীনের বংশগতভাবে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারনেই এ রোগ সৃষ্টি হয় ।Cyst1640
BRCA1 অথবা BRCA2 জীন দুটি কে বলা হয় টিউমার দমনকারী জীন কারন এই জীন দুটি অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি রোধ করে । BRCA1 এর অবস্থান ক্রোমোজোম ১৭ তে এবং BRCA2 এর অবস্থান ক্রোমোজোম ১৩ তে । বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে , BRCA1 এবং BRCA2 জীন দুটি ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ভেঙ্গে যাওয়া ডিএনএ কে সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করে । যে সকল পুরুষ এই ক্ষতিগ্রস্ত জীন বহন করে তাদেরও স্তন কান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে । অনেকেই মনে করেন যে স্তন ক্যান্সারে শুধুমাত্র নারীরাই আক্রান্ত হয় । কিন্তু এটি একটি ভুল ধারনা কারন পুরুষরাও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন । যে সকল নারী জীনের অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত কোন কপি বহন করে এবং যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ভেঙ্গে যাওয়া ক্রোমোজোম সঞ্চিত হয় । সে সকল নারীরই এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশংকা বেশী থাকে । এই আশংকা ৮০ শতাংশ ।

একজন মানুষ কিভাবে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় ?2
যাদের BRCA1 অথবা BRCA2 জীনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে তাদের ই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশংকা বেশী থাকে । আর এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন একটি AUTOSOMAL DOMINANT PATTERN এ সংঘটিত হয় । একটি শিশুর দেহে যদি আক্রান্ত কোষের কোন কপি থাকে তাহলে তারও পরবর্তীতে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশংকা থাকে । যে সকল শিশুর পিতা মাতার দেহে BRCA1 অথবা BRCA2 জীনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে সে সকল শিশুর জীনেও ঐরূপ পরিবর্তন ঘটার আশংকা ৫০ শতাংশ । একজন মানুষের দেহে ক্ষতিগ্রস্ত জীন থাকলেই যে সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে তা কিন্তু নয় । কিন্তু এই পরিবর্তন যত বাড়তে থাকবে তার ততো স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশংকাও বাড়তে থাকবে ।
BRCA1 এবং BRCA2 এর পরিবর্তন চিকিৎসকগণ কিভাবে পরীক্ষা করেন ?safe_image.phpiiiiii
একজন মানুষের যদি তার পূর্বপুরুষদের মাঝে কারোর স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হবার ইতিহাস থাকে তবে তার জীনেও অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটার আশংকা থাকে । রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা চিহ্নিত করতে পারেন যে ঐ রোগীর স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হবার আশংকা রয়েছে কিনা। কিন্তু পরবর্তীতে সেই রোগী স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হবেন কিনা তা বলা যায় না ।

একজন নারী কিভাবে ঘরে বসে নিজে পরীক্ষা করবেন যে তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা অথবা আক্রান্ত হবার আশংকা রয়েছে কিনা ?
স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে ধীরে ধীরে । তবু সঠিকভাবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না হবার কারণে জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে এটি । তাই প্রতি মাসে একবার অন্তত নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করতে হবে । ২০ বছর বয়স থেকে এ পরীক্ষা করা উচিত । আর প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করার প্রথম ধাপ হল নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করতে জানা ।boob2
স্তন ক্যান্সার এর প্রথম উপসর্গ হল স্তন বা বগলে চাকা । প্রাথমিক অবস্থায় ৯৫ শতাংশ রোগীর স্তনের চাকায় কোন ব্যথা থাকে না । অন্য কোন উপসর্গ না থাকায় বেশীরভাগ রোগী ই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ৬ মাস থেকে ৫ বছর দেরি করে ফেলেন । তত দিনে স্তনের চাকা বড় হয়ে যায় । স্তনের উপরের ত্বক ও বগলের গ্রন্থিতে ছড়িয়ে পরে । এবং একসময় টা ক্যান্সারে পরিণত হয় এবং ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে ।

নিজে যেভাবে স্তন পরীক্ষা করবেন :

এই পরীক্ষা করতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট । প্রয়োজন একটি নিরিবিলি ঘর ও বড় একটি আয়না । ঋতুচক্র শেষ হবার এক সপ্তাহের মধ্যে এ পরীক্ষা করলে সবচেয়ে ভাল হয় । কারন , সে সময় স্তন কিছুটা হালকা থাকে । মেনোপজ হয়ে গেছে কিংবা জরায়ুতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এমন নারীরা মাসের যে কোন দিন এ পরীক্ষা করতে পারেন । তবে মনে রাখার জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করতে পারেন ।

আয়নার সামনে :78163752
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পর্যাপ্ত আলোয় কাপড় সরিয়ে নিজেকে ভাল ভাবে লক্ষ্য করতে হবে । প্রথমে দুই বাহু দেহের দুই পাশে ঝুলিয়ে দাঁড়াতে হবে । তারপর দুই বাহু মাথার উপর উঁচু করতে হবে । এবার দুই হাত কোমরে চেপে দাঁড়াতে হবে , যাতে বুকের মাংসপেশি টানটান হয় । হালকা করে স্তনের বৃন্ত চেপে দেখতে হবে ।
লক্ষ্য করার বিষয়
১। স্তনের আকার আকৃতি ও রঙের পরিবর্তন আছে কিনা ।
২। স্তনের ত্বক কমলার খোসার মত পুরু হয়ে আছে কিনা ।
৩। স্তনের বৃন্ত ভিতরে ঢুকে গেছে কিনা ।
৪। স্তনের বৃন্ত থেকে নিঃসৃত তরলের রঙ কি ?

=====================================

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435 //01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন
Face Book page : ( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *