একজিমা নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি

ডাঃ এস.জামান পলাশ
Psoriasis
চামড়ার বহিঃ ত্বকের প্রদাহসহ রস নিঃসরণ হতে থাকলে তাকে একজিমা বলা হয়। এই রোগটি মূলত এক ধরনের বংশগত অসুখ। জেনেটিক অসুখ হলেও বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে একজিমা হয়ে থাকে। প্রথমে আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে ওঠাসহ চুলকানি, ছোট ছোট প্যাপুল ও রসপূর্ণ ফুসকুড়ি, স্ফীতি, রস গড়ানো ইত্যাদি হয়ে তা শুকিয়ে শক্ত আবরণ বা মামড়িতে ঢাকা পড়ে। পরিশেষে এতে আঁশ জমে আক্রান্ত স্থানের চামড়া মোটা ও শক্ত হয়ে যায় এবং তাতে পিগমেন্ট বা রঞ্জকবস্তু জমে রঙ বিকৃত হয়ে যায়। এটি এক ধরনের বিশ্রী চর্মরোগ এবং ছোঁয়াচেও বটে। প্রথমে জ্বালাকর জলপূর্ণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লাল বর্ণের ফুসকুড়ি বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাটা ফাটা জলভরা উদ্ভেদ দেখা যায়। চুলকাতে চুলকাতে ক্ষতে পরিণত হয় এবং ক্ষত স্থান হতে পানির মত আঠা আঠা রস নির্গত হয়। এই পীড়া সচরাচর মুখমন্ডল, হস্তপদ, জননেন্দ্রিয় প্রভৃতি স্থানে প্রকাশ পায়। শিশুদের মাথা ও পায়ের দীর্ঘাস্থির উপরিভাগ এই পীড়ার অতি প্রিয় স্থান। এতে চুলকানি থাকে কখন কখন চুলকানির সাথে জ্বালাও থাকে।xxxxxx
উৎপত্তির কারণ: একজিমা চামড়ার উপর প্রকাশিত রোগ হলেও এটিকে তরুণ রোগ বলে মনে করা উচিত নয়। বহুক্ষেত্রেই এর কারণ, সোরা এবং বংশগত ধাতুদোষ। প্রকৃতির শুভ ইচ্ছায় অন্তর্নিহিত দোষগুলো এইভাবে চামড়ার ভিতর দিয়ে বহিঃপ্রকাশিত হয়ে একজিমা রূপে বহু প্রকার সাংঘাতিক অবস্থা হতে রোগীকে রক্ষা করে। যক্ষ্মা প্রবণ শিশু, পূর্ব পুরুষের কাছ হতে প্রাপ্ত সিফিলিস দোষপ্রাপ্ত শিশুর পক্ষে বহু ক্ষেত্রে একজিমা প্রকাশিত হয়ে অভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলোকে কঠিন কঠিন পীড়া হতে মুক্ত রাখে। ডা. এইচ এলেন বলেছিলেন ‘কেউই বলতে পারেন না যে দেহাভ্যন্তরের জীবনীশক্তি সংরক্ষক যন্ত্রগুলোকে পরিত্যাগ করে এই রোগটি বহিঃপ্রকাশিত হওয়ার ফলে, কতশত শিশুর জীবন রক্ষা পেয়েছে।’ আমাদের মনে রাখা উচিত যে ধাতুগত দোষগুলোর ভিতর দিক হতে বাহির দিকে হওয়াই প্রকৃতির শুভ ইঙ্গিত, বাহির হতে এগুলো ভিতর দিকে তাড়িত হলেই অভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলো পীড়িত হয় এবং রোগীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। যতদিন বহিঃপ্রকাশিত রোগটি থাকে ততদিন অভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলোর ভয় থাকে না। এই জন্য কোনো রকম কড়া মলম বা ইনজেকশন প্রভৃতি দ্বারা একজিমা ভিতর দিকে তাড়িয়ে দিলে তার ফল অনেক ক্ষেত্রেই সাংঘাতিক হয়ে থাকে। সাধারণ লোকে মনে করে যে চর্মরোগটি আরোগ্য হল কিন্তু বাস্তবিক তা না হয়ে এটি ভিতরদিকে চালিত হয় এবং অন্য কোনো অভ্যন্তরীণ যন্ত্রকে আক্রমণ করে। বিচক্ষণ চিকিৎসক মাত্রই লক্ষ্য করেছেন যে ওইভাবে চর্মরোগ চাপা দেয়ার ফলে কত ব্যক্তি হাঁপানি, মুর্চ্ছা, পেটের অসুখ, শুলব্যথা এমন কি যক্ষ্মা বা উন্মাদরোগ প্রভৃতিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আবার ওইরূপ অবস্থাতেও ধাতুগতভাবে হোমিওপ্যাথি মতে চিকিৎসা হলে আগের চর্মরোগটি পুনরায় বহিঃপ্রকাশিত হয়ে অভ্যন্তরীন রোগটি দূর করে।
অভ্যন্তরীণ ধাতুদোষই একজিমার মূল কারণ হলেও অনেক ক্ষেত্রে আর্সেনিক, পারদ, চিনি প্রভৃতি নিয়ে কাজ করা, অগ্নির উত্তাপের কাছে বাস করা, উত্তেজক পদার্থ প্রভৃতি আহার বা পান করা প্রভৃতিও একজিমা প্রকাশের কারণ হয়ে থাকে। আবার অভ্যন্তরীন কোনো যন্ত্র পাকস্থলি, অন্ত্রাদি, যকৃৎ, অস্থি গহ্বরের যন্ত্রসমূহ প্রভৃতির বিকৃতির ফলেও একজিমা দেখা দিতে পারে। এজন্য অনেক সময়েই দেখা যায় যে একজিমাগ্রস্ত রোগী কোষ্ঠকাঠিন্য, অজীর্ণ প্রভৃতি রোগে ভোগেন। তাদের পক্ষে কোষ্ঠশুদ্ধি ও উপযুক্ত খাদ্য ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজনীয় হয়।
রোগের লক্ষণ ও প্রকারভেদimages-6
লক্ষণ বিচার করে রোগটিকে সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।
১. একজিমা ইরিথিমেটোসিয়াম: এটি সাধারণত চামড়ার স্বল্প স্থান বা অধিক স্থান জুড়ে হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লালবর্ণের ফুসকুড়ি বা উদ্ভেদ, প্রচ- চুলকানি এবং পুরশু ও শক্ত মামড়ি পড়ে আবার কখনও সামান্য রস গড়ায়। মধ্যবয়স্ক এবং বৃদ্ধদের অধিক হয়।
২. একজিমা প্যাস্টিউলোসাম: পুরশু শক্ত মামড়িযুক্ত একজিমা। অত্যধিক চুলকানিতে মামড়ি ফেটে যায় এবং দুর্গন্ধযুক্ত প্রচুর রস নির্গত হয়। রস তাড়াতাড়ি শুস্ক হয়ে ঈষৎ সবুজ আভাযুক্ত হলদে বর্ণ ধারণ করে। সাধারণত যক্ষ্মা রোগগ্রস্থ ব্যক্তিদের মাথায় এই রোগ দেখা যায়।
৩. একজিমা ভেসিকিউলোসাম: প্রথমে আক্রান্ত স্থান উত্তপ্ত ও লাল হয়ে ওঠে এবং চুলকানি আরম্ভ হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভেদ সেখানে প্রকাশ পায় এবং পানির মত রস নির্গত হয়। রস শুকালে পাতলা মামড়ি পড়ে। সাধারণত শিশুদের হাতে মুখে এই রোগ বেশি হয়।
৪. একজিমা ফিসাস: সোরাফিসিলিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া শীতকালে এবং বর্ষাকালে রোগটি বেশি হয়। গ্রীষ্মকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় এই জাতীয় একজিমা সাধারণত সেরে যায়। হাত পায়ে, সন্ধিস্থলে, ঠোঁটের কোণে, মুখমন্ডলে এবং কানে বেশি হয়। হাত-পা বেশি সময় পানিতে ভেজা থাকে যাদের, যারা অধিক সাবান সোডা ব্যবহার করেন, অত্যধিক গরমে বা আগুনের কাছে বসে কাজ করেন যারা তাদের এই জাতীয় একজিমা হতে পারে। আক্রান্ত স্থানের চামড়া শুষ্ক, খসখসে এবং পুরু ও ফাটা ফাটা হয়, চুলকালে রক্ত বের হয়, মধুর মত ঘন চটচটে রস বের হয়।images-5
৫. একজিমা রশুব্রাম: সাধারণত কুচকি, কোমর, দেহের সন্ধিস্থলে এবং শিশুদের মুখে, মাথায় এবং বৃদ্ধদের দেহের নিম্নাঙ্গে বেশি হয়। এটি হলে কখনও মামড়িযুক্ত বা কখনও রক্তাক্ত পানির মত রস বের হয়। যেকোনো একজিমা ধীরে ধীরে বৃদ্ধিলাভ করে ভয়ংকর রূপ লাভ করে এবং ভবিষ্যতে দুরারোগ্য রোগে পরিণত হয়। এই জাতীয় রোগের সূচনায় উপযুক্ত চিকিৎসার দ্বারা আরোগ্য লাভের চেষ্টা করা উচিত।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান: একজিমা নিরাময়ে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। লক্ষণ সাদৃশ্যে নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ সেবনে একজিমা সম্পূর্ণ ভাল করা সম্ভব। যে ওষুধ বেশি ব্যবহৃত হয় তা নিচে দেয়া হল।

যেমন: ১. রানটক্স ২. গ্রাফাইটিস ৩. নেট্রাম সালফ ৪. মেজোরিনাম ৫. পেট্রোলিয়াম ৬. এলুমিনা ৭. বোরাক্স ৮. অরামমেট ৯. আর্সেনিক আয়োড ১০. টেলুরিয়াম ১১. সোরিনাম ১২. সিফিলিনাম ১৩. ক্যালকিরয়া কার্ব ১৪. ক্যালকেরিয়া সালফ ১৫. মার্কসল ১৬. টিউবার কিউলিনাম ১৭. কেলিসালফ ১৮. হিপার সালফার ১৯. সিপিয়া ২০. থুজা ২১. সালফার উল্লেখযোগ্য। তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
=======================================

ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog
ফেসবুক–https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *