এমবিবিএস ডাক্তার ৩০ মিনিটেই ঳ ভিডিও সহ

1_28799410985057_1445900799066204_3032443935686213787_n
তোহুর আহমদ

সার্টিফিকেট। বাংলায় যার অর্থ সনদ বা প্রমাণপত্র। এ শব্দটি বেশি প্রয়োগ হয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের ক্ষেত্রে। শিক্ষাজীবনের ধাপে ধাপে ভালো মানের সনদ অর্জন করাও অনেকটা সোনার হরিণের মতো বিষয়। আর এখনকার পিএসসি, জেএসসি ছাড়াও মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়া শিক্ষার্থী জীবনের বড় অধ্যায়। এরপর এইচএসি ও স্নাতক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের প্রতিটি ধাপের সনদ তো বড়ই মূল্যবান। নানা চড়াই-উতরাই ও কঠিন অধ্যবসায় পেরিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার এসব সনদ অর্জন করতে হয়, যা একজন ছাত্রের জীবনে বহু কাক্সিক্ষত শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতি।

অথচ গুরুত্বপূর্ণ এসব শিক্ষা সনদ নিয়ে জালিয়াতি হচ্ছে হরহামেশা। তাও আবার ক্ষেত্রবিশেষে একেবারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের হুবুহু সনদ শিটে। ভাবা যায়? কিন্তু এটাই সত্য।

দীর্ঘদিন থেকে প্রশাসনের নাকের ডগায় সার্টিফিকেটের জালিয়াতির ফাঁদ খুলে বসেছে একটি চক্র। দেশজুড়েই সক্রিয় এ চক্রের সদস্যরা। তবে রাজধানীতে তাদের রমরমা তৎপরতা একটু বেশিই। রাজধানীতে ছড়িয়ে থাকা সার্টিফিকেট জালিয়াতি চক্রের অন্দর মহলের খোঁজ জানতে শহরের অলিগলি চষে বেরিয়েছে যুগান্তরের অনুসন্ধান সেল। টানা এক মাসের অনুসন্ধানে এ চক্রের সদর-অন্দরের যে চিত্র ওঠে এসেছে তা শুধু ভয়ংকরই নয় রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। আমাদের উদ্দেশ্য, পাঠককে এই অন্দর মহলের খবর দিয়ে সাবধান করা। আর হাতেনাতে প্রমাণ দিয়ে দেখিয়ে দেয়া কিভাবে রাজধানীর বুকে এই গুরুতর অপরাধ চলছে একেবারে ওপেন সিক্রেট স্টাইলে। তাও আবার বছরের পর বছর।

১০ জুন। বেলা ২টা। যুগান্তর অনুসন্ধান সেলের সদস্যরা হাজির সার্টিফিকেট জালিয়াতির জন্য বিশেষ পরিচিতি পাওয়া বাকুশাহ মার্কেটের সামনে। আবার এই মার্কেট ‘নীলক্ষেত’ নামেই সবার কাছে পরিচিত। অনেকে বলেন, নীলক্ষেত মার্কেটে মৃতকে জীবিত করা ছাড়া আর সবই করা যায়। অর্থাৎ অসম্ভবকে সম্ভব করাই এই মার্কেটের কাজ। এবার বাস্তবে এটি দেখার পালা।

জানা ছিল, নীলক্ষেতে সব ধরনের সার্টিফিকেটই পাওয়া যায়। কিন্তু এমবিবিএস সার্টিফিকেটও কি এখানে পাওয়া সম্ভব? যদি পাওয়া যায় তাহলে নীলক্ষেত থেকে ডাক্তারি পাস করতে কত দিন লাগে? তাই ছদ্মবেশে কাগজের একটি ফাইল হাতে অনুসন্ধান সেলের সদস্যরা ঢুকে পড়ল নীলক্ষেতের ২ নম্বর গলিতে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন। গলিতে ঢোকার মুখেই উসকো খুসকো চুলের এক যুবক ইচ্ছে করে গায়ে ধাক্কা খেলেন। সংঘর্ষের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে তিনি বললেন, ‘কি লাগব কন। কোনো সমস্যা নাই। সব কইরা দিমু। হানড্রেড পার্সেন্ট অরিজিনাল।’ বোঝার আর বাকি রইল না। মনে হল, আমরা যথাস্থানে পৌঁছে গেছি। অতঃপর আলাপ হল এই যুবকের সঙ্গে। নাম আরিফ। এরই মধ্যে তিনি তার একটা ভিজিটিং ধরিয়ে দিলেন। এতে লেখা ‘এখানে সব ধরনের কম্পিউটার কম্পোজ, কালার প্রিন্ট, ফটোকপি, আইডি কার্ড ও ভিজিটিং কার্ড তৈরি করা হয়। দোকান নং ২০৬। বাকুশাহ মার্কেট। মোবাইল নম্বর …।

যুগান্তরের অনুসন্ধান সেলের সদস্যরা তার কাছে একটা এমবিবিএস পাশের সার্টিফিকেট চান। বলা মাত্রই তার আগ্রহের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। এখানেই শেষ নয়, আরিফের সঙ্গে দরদাম শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এত সহজে এ ধরনের প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় আরিফ কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। আসল কাস্টমার কিনা সন্দেহ হল তার। তাই আরিফের প্রশ্ন, আপনারা র‌্যাব বা ডিবির লোক নাতো ভাই? তাকে আশ্বস্ত করা হয়, আমরা র‌্যাব-ডিবি ওসব কিছু নই। সার্টিফিকেটের অরজিনাল কাস্টমার। তাই অরজিনাল সার্টিফিকেট দেয়ার অনুরোধ তার কাছে। আরিফ বলেন, ‘মেডিকেল সার্টিফিকেট তো, একটু সময় লাগব। অন্যগুলা হইলে টাইম লাগত না।’ অরজিনাল এমবিবিএস সার্টিফিকেটের জন্য আরিফ ১০ হাজার টাকা চাইলেন। দরদাম করে তাকে ৫ হাজারে রাজি করানো গেল। অনুসন্ধান সেলের একজন সদস্যের নাম-ঠিকানা ও এডভান্স ৫শ’ টাকা নিয়ে আরিফ চলে গেলেন ভেতরে। এর ঠিক ত্রিশ মিনিট পর সদ্য প্রিন্ট করা খুলনা মেডিকেল কলেজের একটা এমবিবিএস পাশের সার্টিফিকেট নিয়ে হাজির তিনি। সার্টিফিকেট দেখে বোঝার উপায় নেই এটি ‘নীলক্ষেত মেডিকেল কলেজ’ থেকে দেয়া। সার্টিফিকেটে রোল- রেজিস্ট্রেশন, সিরিয়াল নম্বর, প্রিন্সিপালের স্বাক্ষর, প্রতিস্বাক্ষর সব নিখুঁত। হুবহু অরজিনালের মতো। কাগজে খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে দেয়া সার্টিফিকেটের সব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসহ লোগোটাও নিখুঁতভাবে প্রিন্ট করা। সাধারণভাবে এটিকে নকল সার্টিফিকেট বলে সন্দেহ করার কোনো সুযোগ নেই। খুশি হয়ে আরিফকে ৩ হাজার টাকা মিটিয়ে সেদিনের মতো চলে আসে যুগান্তরের অনুসন্ধান সেলের সদস্যরা।

এর ঠিক ১৫ দিন পর ২৫ জুন আবারও নীলক্ষেতে হাজির অনুসন্ধানী সেলের সদস্যরা। তবে এবার উদ্দেশ্য ভিন্ন। এবার কারখানায় গিয়ে সরেজমিন সার্টিফিকেট জাল করার দৃশ্য ভিডিও করার পালা। তাই দ্বিতীয় দফায় নীলক্ষেতসংলগ্ন নিউমার্কেট থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে আরিফের মোবাইলে ফোন করা হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হলেন তিনি। পুরনো কাস্টমারকে চিনতে পেরে হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডসেকও করলেন। বললেন ‘এবার কি লাগব, কন। সমস্যা নাই, কইরা দিতাছি।’ তার কাছে এবার আব্দার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের সার্টিফিকেটের। দু’হাজার টাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অরজিনাল সার্টিফিকেট দিতে রাজি হলেন তিনি। তাকে বলা হল, ‘এখানে প্রচণ্ড রোদ। বরং আপনার অফিসে গিয়ে বসা যাক। পুরনো কাস্টমার তাই তেমন একটা আপত্তি করলেন না। বিভিন্ন আঁকাবাঁকা অন্ধকার গলিপথ পেরিয়ে তিনি হাজির হলেন, নীলক্ষেতসংলগ্ন চিশতীয়া মার্কেটের দোতলায়। অজ্ঞাত কারণে দিনের বেলাতেও অন্ধকার হয়ে আছে এই মার্কেটের কয়েকশ’ দোকান ঘর। তবে বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে পরিত্যক্ত মার্কেট। মার্কেটের ভেতরে কয়েকটা অন্ধকার গলি পেরিয়ে আরিফ নিয়ে এলেন বিশেষ একটি কক্ষের সামনে। সেখানেও কোনো আলো নেই। শুধু কম্পিউটারের মনিটরের আলোয় কয়েকজনকে আবছাভাবে দেখা গেল। এদের একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন আরিফ। তার নাম মিলন। তিনি কম্পিউটারে ফটোশপ প্রোগামের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের সার্টিফিকেট তৈরিতে ব্যস্ত। মিলনের আরও একজন সহকারী বিভিন্ন কালি মিলিয়ে প্রিন্ট করা সার্টিফিকেটে দক্ষ হাতে স্বাক্ষর দিয়ে যাচ্ছেন শুধু। এবার অনুসন্ধান সেলের সদস্যদের দেয়া নাম, ঠিকানা ও জন্ম তারিখ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সাটির্ফিকেট প্রিন্ট করতে বলা হল। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই বিশেষ কাগজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের সার্টিফিকেট প্রিন্ট করা হল। সার্টিফিকেটের ফাঁকা ঘরে ইংরেজি আঁকাবাঁকা অক্ষরে ছাত্রের নাম, আবাসিক হলের নাম, সাবজেক্ট, পাসের সন ও প্রাপ্ত বিভাগ লিখে ফেললেন মিলন। এরপর ভিসির স্বাক্ষরের জায়গায় বিশেষ কায়দায় নকল স্বাক্ষর দিলেন মিলনের সহযোগী। অবিশ্বাস্য এই পুরো প্রক্রিয়াটির ভিডিও দৃশ্য অনুসন্ধান সেলের সদস্যদের কাছে থাকা গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হল।

তবে আমরা শুধু নীলক্ষেত নয়, রাজধানীর আরও কয়েকটি সাটিফিকেট জালিয়াতির কারখানায় ঢুঁ মারতে চাই। পরদিন তাই আমরা হাজির রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের সামনে। এখানেও কম্পিউটার কম্পোজের সাইনবোর্ড লাগানো অসংখ্য দোকান। পরিচয় হল আসিফ নামের একজনের সঙ্গে। পাশে ডেকে নিয়ে গোপনীয় কথাবার্তার ভঙ্গিতে তার কাছে এইচএসসি পাসের সার্টিফিকেট চাওয়া হল। এদিক-ওদিক তাকিয়ে রাজি হলেন আসিফ। বললেন, ‘তিন হাজার টাকা লাগব। ১০ মিনিটে ডেলিভারি দিয়া দিমু।’ দরকষাকষি করে দেড় হাজার টাকায় তাকে রাজি করানো গেল। ছাত্রের নাম-ঠিকানা, জন্ম তারিখ ও টাকা নিয়ে চলে গেলেন তিনি। ১৫ মিনিট পর এসে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে হরিরামপুর এমএ রউফ কলেজ থেকে পাওয়া ফার্স্ট ডিভিশনের একটি সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিলেন তিনি। বোঝা গেল, এটিও নীলক্ষেতের মতই জালিয়াতির আরেক স্বর্গরাজ্য। এবার আমাদের গন্তব্য কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ সংলগ্ন বনানী সুপার মার্কেটে। একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা থাকায় এ এলাকাটি বিশ্ববিদ্যালয় পাড়া হিসেবে পরিচিত। তাই বনানী মার্কেটে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পদচারণা। মার্কেটের বারান্দায় এলোমেলোভাবে হাঁটাহাঁটি করতে দেখে উৎসাহ নিয়ে আলাপ করতে এলেন সাজিদ নামের এক যুবক। উদ্দেশ্য শুনে মুচকি হাসলেন তিনি। বললেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট লাগব কন। এক ঘণ্টায় আইন্যা দিতাছি।’ যেকোনো ইউনিভার্সিটির হলেই হবে, বলার পর সাজিদ অগ্রিম ২ হাজার টাকা চাইলেন। টাকা পেয়ে চলে গেলেন তিনি। এক ঘণ্টা পর ফিরে এলেন। হাতে একটি খাম। মার্কেটের পেছনে গিয়ে খাম খুলে বের করলেন নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি এমবিএ ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ সার্টিফিকেট। সাজিদ জানালেন এগুলো বাইরের কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট করা নয়। সরাসরি ইউনিভার্সিটি থেকেই প্রিন্ট করে আনা। তাই ধরা খাওয়ার কোনো চান্স নেই। এভাবেই ভুয়া ও জাল সার্টিফিকেটের অন্দর মহলের আদ্যপান্ত বেরিয়ে এসেছে যুগান্তরের অনুসন্ধানে।

জাল এবং ভুয়া এমবিবিএস সার্টিফিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রার ডা. জাহিদুল হক বসুনিয়া বলেন, জাল ডাক্তারি সনদের বিষয়ে তাদের কিছু করণীয় নেই। তবে বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোনো ডাক্তারের সার্টিফিকেট ভুয়া বা জাল প্রমাণিত হলে তার ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সার্টিফিকেটটি দেখে ঢাবির প্রক্টর ড. এএম আমজাদ আলী আঁতকে ওঠেন। কারণ ঢাবির ব্যবহৃত অরজিনাল কাগজেই জাল সার্টিফিকেটটি প্রিন্ট করা। তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশের সহায়তায় ঢাবির পক্ষ থেকে নীলক্ষেতসহ আশপাশের এলাকায় একাধিকবার অভিযানও চালানো হয়েছে। কিন্তু জাল জালিয়াতি বন্ধ হচ্ছে না।

বাকুশাহ (নীলক্ষেত) হকার্স মার্কেট সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাউদ উল্লাহ মজিদ যুগান্তরকে বলেন, কোনো দোকানে সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি বনানো যাবে না মর্মে সব দোকানে বাধ্যতামূলক বিজ্ঞপ্তি টাঙানো আছে। তারপরও বেশকিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হবে।

রাজধানীতে সার্টিফিকেট জালিয়াত চক্রের বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেসন্স) কর্নেল জিয়াউল আহসান যুগান্তরকে বলেন, র‌্যাব একাধিকবার নীলক্ষেতে জাল সার্টিফিকেট চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময় র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের হাতে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা ধরাও পড়ছে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ কারণেই এ ধরনের অপরাধ পুরোপুরি নির্মূল করা যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *