এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করব কাকে, ডাক্তারকে নাকি নিজের ভাগ্যকে?

আমার স্ত্রী যখন প্রেগন্যান্ট হন,নিয়মিত এক মহিলা ডাক্তার চেকআপ করতেন। কাজের চাপে সব সময় স্ত্রীর সাথে যেতে পারতাম না।প্রথম যখন যাই তখন ডাক্তার আমাকে বললেন, সিজার করা লাগতে পারে, মানসিক প্রস্তুতি রাখবেন।

দ্বিতীয় বার যখন আবার গেলাম, তখনও একই কথা বললেন।এবার আমি রেগে গিয়ে বললাম, ম্যাডাম আপনি কি চান আমার বাচ্চা সিজারে হউক?

তিনি অবাক হওয়ার ভান করে বললেন, আমি তা চাইব কেন?

আমি বললাম, তাহলে সিজারের কথা বারবার বলছেন কেন? সময় হলে বুঝা যাবে বাচ্চা কীভাবে হবে।আপনি অগ্রিম কথা বলছেন কেন?

তিনি স্বাভাবিক গলায় বললেন, না মানে,আপনাকে প্রস্তুত থাকার কথা বলছি আর কি!

বাইরে বেড়িয়ে স্ত্রী বললেন, উনি সবাই কে এই কথা বলেন।

প্রসব ব্যাথা যখন উঠল,উনার কাছে নিয়ে গেলাম। উনি নিকটস্থ একটা ক্লিনিকে ভর্তি করতে বললেন। আমরা তাই করলাম। ওখানে গিয়ে জানলাম উনি এই ক্লিনিকের ও ডাক্তার। সব সিজারের রোগীকে তিনি এখানে পাঠান।প্রতিদিন এখানে তিনি তিন চারটি সিজার করে থাকেন।

রাত দশটার দিকে প্রসব বেদনা বাড়লো , ডাক্তার আমাকে ডেকে পাঠালেন,জানতে চাইলেন কীভাবে বাচ্চা চাই। আমি বললাম নরমাল ডেলিভারি হউক।

এগারোটার দিকে আবার ডেকে বললেন, আমরা সিজার করতে চাইছি, না হলে সমস্যা হতে পারে। বাচ্চার থলিতে পানি শুকিয়ে গেছে। আমি বললাম আরেকটু দেখি।

আমাদের সব আত্মীয় স্বজন হাসপাতালে উপস্থিত। তারা বলতে লাগলেন, যেহেতু ডাক্তার বলছে পানি শুকিয়ে গেছে সেহেতু ডাক্তারের কথা শুনা উচিত। আমি বললাম আমি নরমাল ডেলিভারি করাতে চাই।

কিছুক্ষন পর ডাক্তার আবার আমাদের রুমে আসলেন। এবং সিজার করাতে বললেন। এবার আমাকে ফেলে সবাই ডাক্তার কে বললো, রোগী নিয়ে যান,সিজার করে ফেলুন। আমার শাশুড়ি বললেন,বাবা তুমি অমত করো না। ডাক্তার বলছে সিজার না করলে অসুবিধা হবে,তুমি কি চাও আমার মেয়েটার কিছু হউক?
আমি ভয়ে রাজি হয়ে গেলাম।

ছয় মাস পর বুঝা গেল বাচ্চা স্বাভাবিক আচরণ করছে না।তার উঠা বসা দেরিতে হচ্ছে। সে কিছু বলতে পারছে না। এক বৎসর যখন হলো তখন নিশ্চিত হলাম, বাচ্চা স্বাভাবিক নয়।

পিজি হাসপাতালের নিউরোলজিক্যাল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মিজানুর রহমানের কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি বসেন ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে। তিনি বোধহয় এমন কোন পরীক্ষা নাই যা করান নি। একটানা এক বৎসর তার অধীনে চিকিৎসা চললো। কিছু পরীক্ষা তিনি ইন্ডিয়া থেকে করিয়ে আনলেন তার এজেন্টদের মাধ্যমে। এক বৎসর পর বললেন,সিজার করার সময় বাচ্চা ব্রেইন এ আঘাত পেয়েছে।

কোন ফল পেলাম না।ইন্ডিয়া থেকে যে পরীক্ষা গুলো তিনি করিয়ে এনেছেন বিপুল টাকার বিনিময়ে, পরে জেনেছি এ পরীক্ষা গুলো পিজি হাসপাতালে ছিল যা স্বল্প মূল্যে করানো যেত।

পরে অধ্যাপক মিজানুর রহমানের টিভির একটা লাইভ ইন্টারভিউ দেখলাম, যেখানে তিনি বলছেন এ রোগের চিকিৎসা এখনও পৃথিবীতে বের হয়নি। তাহলে এক বৎসর তিনি কি চিকিৎসা দিলেন?

ল্যাব এইড হাসপাতালে একজন আন্তর্জাতিক মানের নিউরোলজিস্ট বসেন যিনি জাতি সংঘের অধিনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। তার কাছে গেলাম।মিজান ডাক্তারের সব কাগজ পত্র পেশ করলাম। তিনি তা ছুয়ে ও দেখলেন না,খসখস করে অনেক গুলো পরীক্ষা লিখে দিয়ে বললেন, এগুলো করে আনুন তারপর রোগী দেখবো। মেজাজ খারাপ করে কোন পরীক্ষা না করেই বাসায় চলে আসলাম।

আমার পরিচিত একজন ডাক্তার আছেন যিনি গ্রামিনফোনের লাইভ অনুষ্ঠানে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তিনি একদিন কথায় কথায় বললেন অধ্যাপক মনসুর হাবিবের কথা।তিনিও ল্যাব এইড হাসপাতালে বসেন। দেশ সেরা নিউরোলজিস্ট তিনি। তার কাছেও একটানা ছয় মাস দৌড়ালাম। ফলাফল শূন্য!

চিন্তা করলাম ইন্ডিয়া নিয়ে যাব,ভিসা করতে গিয়ে পরলাম জটিলতায়,ডাক্তারি ভিসা লাগবে। ডাক্তারি ভিসা করতে গিয়ে পরিচয় হলো দয়াগন্জ ইবনে সিনা হাসপাতালের এক অধ্যাপকের সাথে।তিনি জানালেন, এ রোগের চিকিৎসা ইন্ডিয়াতে ও নেই।তবে তিনি শুনেছেন দিল্লি হাসপাতাল, যারা পুরো ইন্ডিয়ার চিকিৎসা ব্যাবস্হা নিয়ন্ত্রণ করেন,তারা চেষ্টা করছেন। পুরোপুরি সফল হয়েছেন কিনা জানেন না।

এখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছি। সব কিছু আল্লাহর হাতে।বাচ্চাটাকে একটা প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করেছি। বাসায় আলাদা টিচার রেখেছি। জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে।

মাঝে মাঝে ভাবি, এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করবো কাকে,ডাক্তার কে নাকি নিজের ভাগ্যকে?

হানিফ ওয়াহিদ

রোগীকে জোর করে সিজার অপারেশান করে মৃত্য বাচ্চা আইসিইউতে রেখে ৫ লক্ষটাকা বিল।

গর্ভকালীন সময়ে হোমিও ঔষধ সেবন নিরাপদ ও ইজি ডেলিবারী হবে