করোনাভাইরাসের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

ডা.বশীর মাহমুদ ইলিয়াস 

আজ থেকে দুইশ বছর পূর্বে যখন হোমিওপ্যাথি (homeopathy) আবিষ্কৃত হয়েছিল তখন হোমিওপ্যাথি দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল মহামারী রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির অসাধারণ সফলতার কারণে । ইউরোপের দেশগুলোতে তখন কলেরা মহামারী শুরু হয়েছিল । ঐতিহাসিক নথিপত্রে দেখা যায় তখন এলোপ্যাথিক হাসপাতালগুলোতে কলেরা রোগীর মৃত্যুর হার ছিল ৯০% আর হোমিওপ্যাথিক হাসপাতারগুলোতে মৃত্যুর হার ছিল ৫% । সে যাক, বর্তমানে মহামারী আকারে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (coronavirus) রোগের চিকিৎসার জন্যArsenicum album এবং Bryonia alba নামক ঔষধ দুটি একটার পরে আরেকটা এভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খান । এগুলো ৩০ বা ২০০ বা অন্য যে-কোনো শক্তিতে ১ ফোটা বা ৫টি বড়ি করে ৪ ঘণ্টা পরপর হিসাবে খেতে পারেন । ২ দিন বা ৩ দিন খাওয়াই যথেষ্ট হবে । তবে প্রয়োজন হলে আরো বেশী দিন খেতে পারেন । এই ঔষধ দুটি দোকানে পাওয়া না গেলে তার বদলেPhosphorus এবংRhus toxicodendrum ঔষধ দুটি পূর্বের নিয়মে খেতে পারেন । জ্বর বেশী থাকলে মাথায় পানি ঢালবেন । তরল খাবার বেশী বেশী খাবেন । চিনি লেবু দিয়ে শরবত খেতে পারেন । সাধারণত এলোপ্যাথিক চিকিৎসা করলে করোনাভাইরাস চলে যাওয়ার পরেও অনেক দিন দুর্বলতা নিয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে হয় । কিন্তু হোমিও চিকিৎসা করলে করোনাভাইরাস দ্রুত আরোগ্য হবে এবং রোগীর শারীরিক শক্তি সামর্থও সাথে সাথেই স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে ।


প্রশ্ন: করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার কোন উপায়(preventive) আছে কি না?


উত্তর: করোনাভাইরাস বা যে-কোন সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহ প্রদত্ত আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে(immunity) শক্তিশালী করা । আর ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করার একমাত্র উপায় হলো সকল রোগে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ খাওয়া এবং পাশাপাশি সারা বছর হোমিওপ্যাথিক ভিটামিনগুলো খাওয়ার অভ্যাস রাখা । হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ছাড়া আর যত রকমের ঔষধ আছে, সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অত্যন্ত বেশী এবং এগুলো কোন না কোন ভাবে আমাদের ইমিউনিটির ক্ষতি করে থাকে । পক্ষান্তরে প্রতিটি হোমিও ঔষধই রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি আমাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে । যে-কোন রোগের টিকা নিয়ে কিছু সময়ের জন্য আপনি সেই রোগ থেকে বাঁচতে পারেন ঠিকই কিন্তু সে-সব টিকার কারণে তার চাইতে ও ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হতে পারেন । গবেষণায় দেখা গেছে টিকার কারণে মানুষ যে-সব ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হতে পারে তাদের মধ্যে আছে এনাফাইলেকটিক শক(Anaphylactic shock) বা হঠাৎ মৃত্যু, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, এনসেফালোপ্যাথি(Encephalopathy) ব্রেনের ইনফেকশন, গুলেন বেরি সিনড্রোম(Guillain-Barré Syndrome), বুদ্ধিপ্রতিবন্দিত্ব (Autism), ডিমায়েলিনেটিং ডিজিজেজ অব সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম, অপটিক নিউরাইটিস(Optic neuritis) দৃষ্টিশক্তির গোলমাল, মৃগীরোগ(Epilepsy), ট্রান্সভার্স মায়েলাইটিস(Transverse myelitis), হাঁপানি, কিডনী ড্যামেজ ইত্যাদি ইত্যাদি । কাজেই কোন রোগের জন্যই টিকা নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় । আমার পরিবারের পাঁচ সদস্যের কেউই মশারী ব্যবহার করে না, চব্বিশ ঘণ্টাই আমাদেরকে মশায় কামড়াইতেছে । তারপরও কেবল মাত্র আমার ছোট মেয়েটি চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল, তা ও আবার হোমিও ঔষধ খাওয়ার কারণে তিন দিনেই জ্বর সেরে যায় । অন্য চারজনকে এখনও চিকনগুনিয়া আক্রমণ করতে পারে নাই । ইহার একমাত্র কারণ আমার পরিবারের সকলেই সকল রোগে হোমিও ঔষধ খেয়ে থাকে এবং সারা বছর ভিটামিন জাতীয় হোমিও ঔষধগুলো খেয়ে থাকে(যেমন- Calcarea phos, kali phos, ferrum phos, Carbo veg, Nux vomica, Alfalfa, Avena sativa ইত্যাদি) । হোমিওপ্যাথিতেInfluenzinum নামে একটি ঔষধ আছে যাহা প্রতি শুক্রবারে ১ ফোটা বা ৫টি বড়ি করে খেলে বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, করোনাভাইরাস ইত্যাদি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে(৩০ বা ২০০ শক্তিতে খেতে পারেন) । ইনফ্লুয়েঞ্জিনাম ঔষধটি পাওয়া না গেলে Arsenicum abum ঔষধটি একই নিয়মে খেতে পারেন ।

প্রশ্ন: করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার পরে শারীরিক দুর্বলতা(weakness) থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কি ঔষধ খেতে পারি?


উত্তর: Picricum acidum 30 নামক হো্মিও ঔষধটি ৩ দিন সকালে খাবেন ১ ফোটা বা ৫টি বড়ি করে ।

হোমিও ডাক্তাররা করোনাভাইরাসের ভয়ে চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করবেন না । মহাচিকিৎসা বিজ্ঞানী স্যামুয়েল হ্যানিম্যান মহামারীর ভয়ে কখনো চিকিৎসা বন্ধ করে দেন নাই বরং মহামারী আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা দিয়ে হোমিওপ্যাথিকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন । যাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন হোমিও ঔষধের সামনে করোনাভাইরাস কোনো রোগের মধ্যেই পড়ে না । করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে উচ্চ শক্তিতে দুই তিন বার Rhus toxicodendron খান, দুই দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবেন । বাংলাদেশের বর্তমান ভ্যাপসা আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করলে আমার মতে Rhus toxicodendron ঔষধটি হবে করোনাভাইরাসের স্রেষ্ট ঔষধ । অবশ্য লক্ষণ সমষ্টি অন্য ঔষধের সাথে মিলে গেলে সেটিও খেতে পারেন ।

Influenzinum : take this homeopathic medicine as a vaccine to remain safe from coronavirus, one time after one week interval. Take it in 30, 200 or in any other potency, in one drop or five pills dose. If this medicine is not available you can take Arsenicum album in similar rules.

Arsenicum album & Bryonia alba : take these two homeopathic medicines if you are infected by coronavirus, one after another in a cyclical way with 4 hours interval. Take these in 30, 200 or in any other potency, in one drop or five pills dose. If these two medicines are not available or if you do not get sufficient benefit you can take Phosphorus & Rhus toxicodendron in similar rules. if you do not get sufficient benefit you can take those four medicines one after another in a cyclical way.

Carbo veg – Wants to be fanned constantly; breath cold.

Antim tart – difficult respiration with sleepiness.

Apis – difficult respiration after lying.

Lachesis – difficult respiration after sleep.

Bryonia alba – difficult respiration after movement.

Ipecac – difficult respiration with vomiting tendency.

নিউমোনিয়ার সেরা ঔষধ যেমন Bryonia alba তেমনি করোনাভাইরাসেরও সেরা ঔষধ এটি

করোনাভাইরাসের সহজ চিকিৎসা হলো যতদিন সর্দি-কাশি-জ্বর থাকবে Rhus toxicodendron খাবেন তিনবেলা করে আর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে Bryonia alba খাবেন তিনবেলা করে

রোগীর মধ্যে বমিবমি ভাব থাকলে নিউমোনিয়ার মানে শ্বাসকষ্টের একটি স্রেষ্ট ঔষধ হবে Ipecac

শয়ন করিলে যদি শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় তবে প্রথমেই চিন্তা করতে হবে Apis Mellifica ঔষধটির কথা

ঘুমালেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তার ঔষধ হলো Lachesis

নড়াচড়া বা কাজ করলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে Bryonia alba খেতে হবে

শ্বাসকষ্টের সাথে ঘুমঘুম ভাব থাকলে Antimonium tartaricum খেতে হবে

ভ্যাপসা আবহাওয়ায়, মোটা যার শরীরে পানি বেশী তার শ্বাসকষ্টে Natrum sulphuricum খেতে হবে

পেট নীচে দিয়ে শয়ন করলে শ্বাসকষ্ট কমলে অথবা ভোরবেলা শ্বাসকষ্ট বাড়লে Medorrhinum খেতে হবে

রোগ ভোগের পরে দুর্বলতার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে Carbo veg, China, Picric acid, Nux vomica ইত্যাদি খেতে হবে

হোমিও ডাক্তারের সিরিয়াল না পেলে Rhus toxicodendron, Arsenicum album, Bryonia alba, Phosphorus এই চারটি ঔষধ ৬ ঘন্টা পরপর চক্রাকারে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেতে থাকেন (৩০ বা যে-কোনো শক্তিতে ১ ফোটা বা ৫টি বড়ি করে)। করোনাভাইরাস আপনাকে কবরে শোয়ানো তো দূরের কথা বিছানাতেও শোয়াতে পারবে না ইনশায়াল্লাহ ।

করোনাভাইরাসে মৃত্যু থেকে বাঁচতে বেশী বেশী দান করুন, হাদিসে বলা হয়েছে দান হঠাৎ মৃত্যু ঠেকায় ।

মানুষ মরে অন্য রোগে কিন্তু করোনাভাইরাস সাথে থাকায় বদনাম পড়ে করোনাভাইরাসের ঘাড়ে ।

Camphora : এলোপ্যাথিক ডাক্তারগণ যেমন মৃত্যুপথযাত্রী কোনো রোগীকে বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা হিসাবে কোরামিন ইনজেকশান বা ওরাডেক্সন ইনজেকশান দেন, হোমিও ডাক্তারগণ তেমন অবস্থায় রোগীকে খাওয়ান Camphora নামক হোমিও ঔষধটি । এই ধরনের রোগীদের যেহেতু অনেক সময় ঔষধ খাওয়ার মতো ক্ষমতা থাকে না, তাই এটি জিহ্বার উপরে বা ঠোটের ভেতরে রেখে দিলেও কাজ হবে অথবা পানিতে ভিজিয়ে কয়েকটা ঝাকিঁ দিয়ে নাকের সামনে ধরলেও চলবে । নিঃশ্বাসের সাথে ঔষধের দুয়েকটা অণু-পরমাণূ ভেতরে গেলেই কাজ হবে । এই হোমিওপ্যাথিক ঔষধটা কর্পুর থেকে তৈরী করা হয় যা আমাদের দেশের মুদি দোকানে কিনতে পাওয়া যায় । কাজেই এই হোমিও ঔষধটা যদি আপনার কাছে না থাকে বা আপনার পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব না হয়, তবে এক টুকরা কর্পুর হাতে নিয়ে একটি কাঠের উপর বিশ পঞ্চাশ বার ঘর্ষন করে সেটি মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের ( বা পশু-পাখির) জিহ্বার উপরে বা ঠোটের ভেতরে স্পর্শ করান অথবা নাকের সামনে ধরুন, ইনশায়াল্লাহ সে সুস্থ হয়ে উঠবে । হোমিও ঔষধ সাধারণত ঘর্ষণের মাধ্যমে তৈরী করা হয় ।

করোনা ভাইরাস আপনার শরীরে হাজার বার ঢুকেও আপনার কোনো ক্ষতি বা আপনাকে হত্যা করতে পারবে না । চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, গাছের মরা ঢালেই ব্যাঙের ছাতা (ছত্রাক) জন্মায়, সুস্থ ঢালে কখনো নয় । মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এক ধরনের পরিবেশ লাগে । মাছদের বেঁচে থাকার জন্যও এক বিশেষ ধরনের পরিবেশ লাগে । নর্দমার যে পোকা তাকেও কিন্তু সেখান থেকে অন্য পরিবেশে নিয়ে গেলে সে আর বাঁচবে না । তেমনিভাবে করোনাভাইরাসেরও বেঁচে থাকার জন্য এবং বংশবৃদ্ধির জন্য একটি বিশেষ ধরনের পরিবেশ দরকার হয় । যার শরীরে করোনাভাইরাস বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ আছে সেটি কেবল তার শরীরেই বংশবৃদ্ধির মানে রোগ সৃষ্টির চেষ্টা করে সফল হবে । যার শরীরে করোনাভাইরাস বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ নাই, সেটি তার শরীরে হামলা করবে না অথবা হামলা করলে সে নিজেই ধ্বংস হবে । এজন্য দেখা যায় যে-কোনো মহামারীতে তিন ধরনের ঘটনা ঘটে – কিছু লোক আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, কিছু লোক আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠে আর কিছু লোক আক্রান্ত হয় না । কাজেই কিছু লোক অনেক সাবধান থাকার পরেও আক্রান্ত হবেন আবার কিছু লোক সাবধান না থেকেও আক্রান্ত হবেন না । কাজেই সাবধান থাকা ভালো কিন্তু বেশী সাবধান থাকলেই যে রক্ষা পেয়ে যাবেন এমন গ্যারান্টি নাই । যার শরীরে ত্রুটি বিচ্যুতি আছে, করোনা ভাইরাস বসবাসের মতো উপযুক্ত পরিবেশ আছে, করোনা ভাইরাস তাকেই আক্রমণ করে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে । এজন্য যারা এলোমেলো খাওয়া-দাওয়া করেছেন, বেশী পরিশ্রম করেছেন বা বেশী অলসতা করেছেন, প্রয়োজন মতো ঘুমান নাই অথবা বেশী ঘুমিয়েছেন, এখন থেকে এসব বদভ্যাস ছাড়েন । ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খান অর্থাৎ সব ধরনের খাবার খাবেন, কোনোটা বেশী খাবেন না আবার কোনোটা খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিবেন না । পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলেন, সুস্থ থাকার জন্য রংধনু খাবার খেতে হবে অর্থাৎ রঙধনুতে যত রঙ থাকে তত রঙের খাবার খেতে হবে । যেই খাবারগুলো রান্না ছাড়া খাওয়া সম্ভব সেগুলো রান্না ছাড়া খাওয়ার চেষ্টা করুন । কেননা রান্না করলে খাবারের গুণাগুণ কিছুটা হলেও নষ্ট হয়ে যায় । কয়েক রকমের তরকারি এবং শাক-সবজি ব্লেন্ডারে জুস করে খেতে পারলে সেটা অনেক উত্তম গণ্য হবে । পরিমাণ মতো পরিশ্রম করবেন, হাতে কোনো কাজ না থাকলে ব্যায়াম করবেন, পরিমাণ মতো বিশ্রাম করবেন ঘুমাবেন । মাওলানা সাঈদী একবার বলেছিলেন যে, আড়াই মণ ওজনের বস্তা নিয়ে কাউকে হাঁটতে দেখলে অসুখ-বিসুখ বাপ বাপ ডাক ছেড়ে পালিয়ে যায় । সাঈদী সাহেবের কথাটা যে কতো বড় একটা সত্য কথা তা যে-কোনো ডাক্তার মাত্রই স্বীকার করতে বাধ্য ।