কিডনি হচ্ছে আমাদের দেহের রক্ত পরিশোধনের অঙ্গ। আমরা যেসব খাবার খেয়ে থাকি তার পুষ্টি সরাসরি আমাদের দেহে ছড়ায় না। খাবার গ্রহণের পর তার একটি অংশ কিডনি থেকে রক্তে যায়। রক্তের মাধ্যমে পুরো দেহে সঞ্চালিত হয়। এছাড়াও শরীরে জমে থাকা অনেক রকম বর্জ্যও কিডনিতে পরিশোধিত হয়। কিডনির নানা সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কিডনিতে পাথর হওয়া।
যদি কোনো কারণে কিডনিতে খনিজ পদার্থ আটকে যায় বা যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার কারণে কিডনি দেহের বর্জ্য ঠিকমতো পরিশোধিত করতে না পারে তখন তা কিডনির ভেতরে জমা হতে থাকে । একেই আমরা মূলত কিডনির পাথর হিসেবে জানি।
ঠিক কি কারণে কিডনি তার সঠিক কাজ করতে পারে না তা জানেন কি? চলুন জেনে নেয়া যাক এর কারণগুলো-
লেবু জাতীয় খাবার কম খাওয়া
লেবু, কমলা, মালটা এ রকমের citrus ফল কম খাওয়ার কারণে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কারণ এ ফলমূলে থাকে সাইট্রেট যা কিডনিতে পাথর হওয়া রোধে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এ ধরনের ফল অবশ্যই খাবেন। যদি তেমন কিছু নাও পান তাহলে পানিতে লেবু চিপে পান করতে পারেন। তবে অবশ্যই তা পরিমিত পর্যায়ে।
পালংশাক বা অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া
পালংশাকে অনেক বেশি মাত্রায় অক্সালেট থাকে। অক্সালেট দেহের ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে যায় এবং মূত্রনালির মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এতে করে দেহে অক্সালেটের মাত্রা বেড়ে যায় যা কিডনিতে জমা হতে থাকে পাথর হিসেবে।
ক্যালসিয়ামের অভাব
দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে তা কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। খাবারে পরিমিত ক্যালসিয়াম না থাকা এবং ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ না হওয়ার কারণে কিডনিতে পাথর জমার আশংকা প্রায় ২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খাওয়া
অনেকেই খাবারে অনেক লবণ খান, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কারণ লবণের সোডিয়াম খুব সহজে কিডনি দূর করতে পারে না এবং তা কিডনিতে জমা হতে থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের কারণেও কিডনিতে পাথর জমার আশংকা বাড়ে।
মাইগ্রেন ও ব্যথানাশক ওষুধ
যারা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন তারা অতিরিক্ত মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ওষুধ সেবন করেন। এ ওষুধের সবচেয়ে বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিডনিতে পাথর জমার আশংকা। কারণ এ ধরনের ওষুধ মূত্রনালির পিএইচ এর মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে যা কিডনিতে পাথর জমতে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত সোডা অর্থাৎ কোমলপানীয় পান করা
অতিরিক্ত পরিমাণে কোমলপানীয় পানের কারণেও কিডনিতে পাথর জমে। এ ধরনের কোমলপানীয়তে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস থাকে যা মূত্রকে অ্যাসিডিক করে তোলে। এছাড়াও এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। ঢ়এ অস্বাস্থ্যকর চিনিও কিডনিতে পাথর জমার জন্য দায়ী।
পরিমিত পানি পান না করা
কিডনির কাজ হচ্ছে দেহের বর্জ্য ছেঁকে দেহকে টক্সিনমুক্ত করা। আর এ কাজটি কিডনি করে পানির সহায়তায়। যদি আপনি পানি পরিমিত পান না করেন তাহলে কিডনি সঠিকভাবে দেহের বর্জ্য দূর করতে না পারলে কিডনিতে পাথর হিসেবে জমা হতে থাকে । সুতরাং পরিমিত পানি পান করুন।
এসব কারণে কিডনিতে পাথর জমার আশংকা অনেক বেশি, সুতরাং সাবধান থাকা জরুরি। এছাড়াও যাদের পরিবারের ইতিহাসে কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা আরও সতর্ক থাকুন। কারণ তাদের কিডনির সমস্যা হওয়ার আশংকা অন্য্যদের তুলনায় বেশি থাকে।
তাই এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যে কারণে কিডনির সমস্যা বৃদ্ধি পায় এবং কিডনি তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়। যদি কিডনি এবং মূত্রজনিত কোনো সমস্যা হয় তাহলে শিগগিরই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ গ্রহণ করে সেই অনুযায়ী চলা উচিত।