কিডনি অকেজো হয়ে যায় কীভাবে?

kidney_12555

প্রশ্ন : কিডনি ফেইলিওর বলতে আমরা কী বুঝি?

উত্তর : আসলে কিডনির একটি প্রধান রোগ হচ্ছে ফেইলিওর। এটাকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে থাকি। প্রথম হচ্ছে, যদি হঠাৎ করে কিডনি অকেজো হয়, একে আমরা বলি অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি। আর যেটি ধীরে ধীরে কিডনিকে বিনাশ করে, সেটাকে এখন আমরা বলি ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। সেটাকে কিডনি ফেইলিওর তখনই বলা হয়, যখন তার কিডনিটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।

প্রশ্ন : কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণগুলো কী?

উত্তর : অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওরের কারণ অনেক ব্যাপক। আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি স্বাভাবিক মানুষের হঠাৎ করে যদি অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর হয়, প্রথমেই তাকে খেয়াল করতে প্রস্রাবের পরিমাণটা কমে যাচ্ছে কি না। এখন এই প্রস্রাবের পরিমাণটা কেন কমল? যদি কোনো কারণে তার শরীরের পানি বেরিয়ে যায়, সেটি প্রধান কারণ। সাধারণত যদি খুব বেশি ডায়রিয়া হয়, তাহলে শরীরের পানি বেরিয়ে যায়। অথবা যদি খুব বেশি বমি হয় অথবা যদি কোনো কারণে তার খুব বেশি রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে পানি বেরিয়ে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণ আমরা দেখতে পাই গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে। বাচ্চা প্রসবের আগে বা পরে রক্তক্ষরণ হয়ে অনেক সময় অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর হয়ে যায়।

আর গ্রামে-গঞ্জে সাধারণত বর্ষাকালের পরে বা আগে খাবার পানির অভাবে বা দূষিত পানি পান করার ফলে ডায়রিয়াজনিত রোগ বেড়ে যায়। এটিও অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওরের অন্যতম প্রধান কারণ। যেহেতু তার শরীরে থেকে পানি বেরিয়ে যাচ্ছে।

এর সঙ্গে সঙ্গে এ সময়ে মশার উপদ্রব বেশি হয়। যেটাকে আমরা বলি অ্যানাফিলিস মসকুইটো। আপনি পত্রপত্রিকায় প্রায় দেখবেন, এই সময়টায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি। ডেঙ্গু জ্বর যদি হয়ে যায়, তখন তার কিডনি ফেইলিওর এবং লিভার ফেইলিওর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটি একটি জটিল রোগ। ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতা হিসেবে এগুলো আসতে পারে।

প্রশ্ন : ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে কার কিডনি ফেইলিওর হতে পারে? সেটি বোঝার কি কোনো উপায় আছে?images (2)

উত্তর : এটা কারো শরীরের অ্যালার্জিজনিত কারণে হতে পারে। কেউ হয়তো এ ধরনের রোগে কখনো ভোগে নাই, তবে যদি ওষুধ নিয়মিত খেয়ে যায়, তার বেলায় এটি হতে পারে। তবে আবার অধিকাংশের ক্ষেত্রে না-ও হতে পারে।

আর কিডনি রোগের কারণে আবার অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর হয়। কিডনির যে ফিল্টার অরগান (ছাঁকন যন্ত্র), যাকে আমরা বলি ফিল্টেশন মেমব্রেন বা ছাঁকনি, এই ছাঁকনি দিয়ে রক্তের যেসব পদার্থ আছে, সেগুলো প্রতিদিন পরিশোধিত হয়। তবে কোনো কারণে যদি মেমব্রেনটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়, তখন অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর হতে পারে। বেশি পরিমাণ অ্যালবুমিন নির্গত হয়ে যায়, লোহিত কণিকা চলে যায়। পরিশোধিত হচ্ছে না—এ সমস্যা হতে পারে। এই কারণগুলোই আসলে ব্যাপকভাবে দেখা যায়।

আর আমরা ইদানীং যেটা দেখছি, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে সাধারণত জটিল রোগী ভর্তি হয়। এ সময় তাদের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, ডিহাইড্রেশন থাকার জন্য আমাদের অনেক অ্যান্টিবায়োটিক আর ওষুধ দিতে হয়। রোগীর ওপরে তখন বিরাট চাপ পড়ে যায়। আর জটিল রোগীদের সাধারণত রক্তচাপ কমে যায়। এই রক্তচাপ যখন আশি বা নব্বইয়ের নিচে নেমে যায়, তখন কিডনি আর কাজ করতে পারে না। এই জন্য ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ৩০ থেকে ৫০ ভাগ রোগীদের অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর দেখা যায়। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের কিছু জটিলতা হিসেবেও এই সমস্যা ধরা পড়ে।

মজার ব্যাপার যেটা হচ্ছে, এখন সিরাম ক্রিয়েটিনিনের গাইডলাইনটি অনেক বদলে গেছে। ধরুন, আমি আমার সিরাম ক্রিয়েটিনিন জানি, তবে আমার ক্ষেত্রে যদি সাত দিনের মধ্যে ১ দশমিক ৫ ভাগ বেশি বেড়ে যায়, তাহলে কিডনি ফেইলিওর বলা হবে। আর যিনি কোনো সিরাম ক্রিয়েটিনিন বেজ লাইন জানেন না, তাকে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করে যদি প্রথম দিন দেখি যে ৮০ মাইক্রোমোল সিরাম ক্রিয়েটিনিন হয়েছে বা ১ দশমিক ১ মিলিগ্রাম আছে, দুই দিনের মধ্যে যদি ওই ৮০টা ১২০-এ চলে যায়, তাহলে আমরা বলি তার কিডনি ফেইলিওর শুরু হয়ে গেছে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা রোগ ধরতে পারি, তাহলে কিডনি ফেইলিওর রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে এর বেশি হয়ে গেলে যদি আমরা আরো অপেক্ষা করি, তখন ঠিক হতে সময় লাগে। তখন অনেক জটিলতা বৃদ্ধি পায়। অনেক ক্ষেত্রে খুব বেশি বেড়ে গেলে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়। সে জন্য অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর যত দ্রুত নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা করা যায়, সে তত দ্রুত সেরে উঠবে।

প্রশ্ন : কী কী ধরনের উপসর্গ এ ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়?

উত্তর : খুব সামান্য ক্রিয়েটিনিনও যদি বাড়ে, ধরুন দুই দিনের ব্যবধানে ২৬ মাইক্রোমোল বাড়ে, সেটা স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে থাকলেই অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর হয়ে যাচ্ছে। অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি যেটাকে বলা হচ্ছে।

এ সময়ে সে যদি সিরাম ক্রিয়েটিনিনের প্রতি চিন্তাভাবনা না করে, যদি পরীক্ষা করার সুযোগ না থাকে, সে ক্ষেত্রে তাকে প্রস্রাবটা খেয়াল রাখতে হবে। আমি হয়তো তিন লিটার পানি খাচ্ছি। হঠাৎ করে দেখলাম, আমার প্রস্রাব সেই তুলনায় কমে গেছে। ৫০০ এমএল হয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। আমাকে অবশ্যই বুঝতে হবে, একটা খারাপ কিছু ঘটে যাচ্ছে। এবং সেটার জন্য অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। সে জন্য প্রস্রাব কতটুকু হচ্ছে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। সম্ভব হলে সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করতে হবে। আর কারণগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার ডায়রিয়া হয়েছে, জ্বর হয়েছে, হঠাৎ করে অ্যান্টিবায়োটিক বেশি মাত্রায় খেয়েছে বা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস আছে, তবে সিরাম ক্রিয়েটিনিন জানা নেই, উচ্চ রক্তচাপ আছে, তবে সিরাম ক্রিয়েটিনিন জানা নেই—তখন তার অল্প কারণে অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর হতে পারে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *