কিডনি রোগীদের রমজানে খাদ্যাভ্যাস

images (6)

বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। এই কিডনি রোগীরা কি রোজা রাখতে পারবেন, আর যদি রাখে তবে তাদের কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এ বিষয়ে সবাই কমবেশি বিভ্রান্তিতে ভোগেন।
যাদের জন্য রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ :যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী, যাদের কিডনি বিকল হয়ে পঞ্চম ধাপে আছেন, যাদের নিয়মিত ডায়ালিসিস করতে হচ্ছে, যাদের মূত্রতন্ত্রের প্রদাহের চিকিৎসা চলছে, আকস্মিক কিডনি বিকল রোগীদের মধ্যে যারা কিডনির কোনো জরুরি অপারেশন করাতে হচ্ছে, তারা। তাছাড়া দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের যদি রক্তের উপাদানে কোনো জটিলতা দেখা দেয়, যাদের ডায়ালিসিস বা উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত আছে, তাদের এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে রোজা রাখতে হবে।
কিডনি রোগীরা রোজা রাখতে পারেন কিন্তু তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে :
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী : যারা প্রথম থেকে পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত আছেন, কিন্তু কোনো জটিলতা নেই তারা রোজা রাখতে পারবেন তবে তাদের প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন_ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এগুলো পরিমিতভাবে খেতে হবে। পিঁয়াজু ও ভাজা-পোড়া খাবার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ঝাল-মসলা পরিহার করতে হবে। যাদের রক্তে পটাশিয়াম বেশি তারা শাকসবজি পটাশিয়ামমুক্ত করে খাবেন ও ফল সীমিত পরিমাণ খাবেন। আপনার ডাক্তারের পরামর্শে রক্তের উপাদান মাঝে মাঝে পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। যাদের শরীরে অতিরিক্ত পানি আছে বা শরীর ফোলা তারা একবারে অনেক বেশি পানি খাবেন না। সেহরির সময় ভাত-রুটি, মাছ-মাংস, ডিম, দুধ পরিমিত খাবেন। ইফতারের সময় খাবেন খেজুর, চিড়া, দই, ডিমের পুডিং, সেমাই, পায়েস, পিঠা ইত্যাদি।
যাদের ঘন ঘন প্রস্রাবে ইনফেকশন হয় :প্রস্রাবে ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য সেহরির সময় ও ইফতারের পর পর বেশি করে পানি খাবেন। কমপক্ষে ৩ লিটার প্রতিদিন। এ ছাড়া ক্রানবেরি জুস অথবা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ, প্রস্রাবে ইনফেকশন কমিয়ে আনে। প্রতিদিন সেহরির সময় ১ বা ২টি ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট খাবেন। যাদের ঘন ঘন মূত্রতন্ত্রে ইনফেকশন হয়, তারা ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্য কট্রিম অথবা নাইট্রোফোরানটোয়িন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক অল্প মাত্রায় খেতে পারেন।
কিডনিতে পাথর : কিডনিতে পাথর সৃষ্টির সঙ্গে পানির একটা সম্পর্ক আছে। পানি কম খেলে পাথর হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। কাজেই যাদের পাথর হওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের ইফতার থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত ৩-৪ লিটার পানি খেতে হবে। সেই সঙ্গে আলগা লবণ পরিহার করতে হবে এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার বিশেষ করে গরু-খাসির মাংস কম খেতে হবে।
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের গ্রহণীয় খাদ্য তালিকা :
মাছ-মাংস :মুরগির মাংস, বিভিন্ন ধরনের মাছ পরিমিত।
শাক : লালশাক, ডাঁটাশাক, কলমিশাক, মিষ্টি কুমড়া শাক, লাউশাক, সরিষা শাক, ও কচুশাক।
সবজি : ডাঁটা, পটোল, করলা, ঝিঙ্গা, কাঁকরোল, লাউ, শসা, বেগুন, চাল কুমড়া, বিচি ছাড়া শিম, পাকা বেল, ধুনদুল, বেগুন, গাজর, চিচিঙ্গা/ঝিঙ্গা, চালকুমড়া ও আলু (সামান্য)।
ফল : আপেল, পাকা পেঁপে, পাকা পেয়ারা, আনারস, নাসপাতি, জামরুল, পাকা কাঁঠাল, কাঁচা আম ও পাকা বেল।
অন্যান্য : চাল, আটা, ময়দা, মুড়ি, চিড়া, মুগ ডাল (অল্প পরিমাণ), সেমাই, সুজি, বার্লি, কর্নফ্লেক্স, ভুট্টা, কর্নফ্লাওয়ার ইত্যাদি।
কিডনি সংযোজনের রোগী :বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, কিডনি সংযোজিত রোগীর রোজা রাখতে পারেন। তবে তাদের ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, এখন প্রচণ্ড গরমের সময়। খোলা খাবার, রাস্তার পাশে বিভিন্ন রঙবেরঙের শরবত সহজেই জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। এগুলো খেয়ে ডায়রিয়া, বমিতে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগীর আকস্মিক কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। এজন্য এ ব্যাপারে সচেতনতাবোধ গড়ে তোলা জরুরি।

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন

( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *