কুরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য, জবাই ও বণ্টন সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসয়ালা (সবার জানা দরকার)

কুরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য, জবাই ও বণ্টন সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসয়ালা

(সবার জানা দরকার)

▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬

(১) পশুর সাতটি অংশ খাওয়া জায়েয নেই। শরীরের ভেতর প্রবাহিত রক্ত, পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ, স্ত্রীলিঙ্গ বা যোনি, গ্ল্যান্ড বা জমাটবদ্ধ মাংস, মূত্রথলি এবং পিত্ত। .

(২) মাংস, হাড্ডি ইত্যাদি সবকিছু দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ওজন করে সমানভাবে ভাগ করতে হবে; অনুমান করে বণ্টন করা যাবে না। [ইবনু আবিদিন, রাদ্দুল মুহতার: ৬/৩১৭].

(৩) কুরবানির মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ গরিবদের দান করা, এক ভাগ আত্মীয়দের দেওয়া এবং একভাগ নিজেরা খাওয়া মুস্তাহাব (উত্তম), তবে বাধ্যতামূলক নয়। আত্মীয়-স্বজনের মাঝে গরিব থাকলে তাদেরকে অগ্রাধিকার দিন। একসাথে দুটো নেকি হবে: আত্মীয়তার হক আদায়, পাশাপাশি গরিবকে সাহায্য করা। পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি হলে নিজেদের জন্য বেশি পরিমাণে রেখে কম পরিমাণ দান করলেও দোষের কিছু নেই। [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৭১; ১৯৭৩; ইবনু কুদামা, আল-মুগনি: ১৩/৩৭৯].

৪) কুরবানির মাংস কাটার জন্য নিয়োজিত শ্রমিককে কুরবানির মাংস থেকে বিনিময় দেয়া যাবে না। তাকে টাকা বা অন্য কোনো কিছু দিয়ে বিনিময় দিতে হবে। তবে পূর্ণ বিনিময় বা পারিশ্রমিক দেওয়ার পর চাইলে মাংস দান করতে পারবে। কাউকে দিয়ে নাড়ি-ভুড়ি পরিষ্কার করালে কুরবানির পশু থেকে বিনিময় বা পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে না। তাছাড়া, কুরবানির পশুর চর্বি বা নাড়ি-ভুড়ি বিক্রি করা যাবে না। নিজেরা খেতে না পারলে দান করে দিতে হবে। [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৩১৭; বুখারি, আস-সহিহ: ১৭১৭; বাদায়িউস সনায়ি’: ৪/২২৫].

(৫) জবাই করার সময় শরিকদের নাম বলার প্রয়োজন নেই; জবাইকারী সবার পক্ষ থেকে জবাই করছে, এটা অন্তরে থাকলেই যথেষ্ট।

(৬) পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে, সিনা কিবলামুখী করে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে জবাই করা উত্তম। এর ব্যতিক্রম হলেও জবাই সহিহ হবে, তবে ইচ্ছা করে এমনটি করা উচিত নয়। [ইবনু হাজার, ফাতহুল বারি: ১০/২১; আইনি, উমদাতুল কারি: ২১/১৫৭; মাসিক আল কাউসার].

(৭) পশুর মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তার চামড়া ওঠানো যাবে না। জবাইয়ের সময় খাদ্যনালী, শ্বাসনালী কাটতে হবে এবং এ দুটোর উভয় পাশের দুটো রক্তনালী থেকে কমপক্ষে একটি কাটতে হবে। [সারাখসি, আল-মাবসূত].

(৯) জবাইকারী মুসলিম হতে হবে। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করতে হবে। কুরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা উত্তম। [আবু দাউদ, আস-সুনান: ২৭৮৮; বুখারি, আস-সহিহ: ১৬২৬].

(১০) পশুর সামনে অস্ত্র ধার না দেওয়া। জীবিত পশুর সামনে আরেক পশুকে জবাই করতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। এতে তারা কষ্ট পায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করবে, যাতে পশুর বেশি কষ্ট না হয়। জবাইয়ের সময় নির্দয় হওয়া উচিত নয়। [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৫৫; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩১৭২].

(১১) মাংস ভবিষ্যতের জন্য ফ্রিজে রাখা জায়েয। তবে, সব মাংস জমা না করে যথাসাধ্য গরিব-মিসকিনদের দেওয়া উচিত। অন্তত ঈদের দিনগুলোতে তারা সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নিক। [তিরমিযি, আস-সুনান: ১৫১০].

(১২) পশুর চামড়া নিজেরাও ব্যবহার করতে পারবে আবার দানও করতে পারবে। তবে, উত্তম হবে এটি গরিবদের দান করা। কুরবানির চামড়ার টাকা মসজিদে দান করা যাবে না। কারণ, চামড়ার মূল্য গরিবের হক। [আইনি, শারহুল কানয: ২/২০৬; ইবনুল হুমাম, ফাতহুল কাদির: ৮/৪৩৮].

১৩) গরুর বয়স ২ বছর হওয়াই যথেষ্ট, দাঁত ওঠা জরুরি নয়। তবে, ২ বছরের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। আর ছাগল কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে। [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৬৩; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৪৩৪৮]

.(১৪) কুরবানির মাংস মুসলিম- অমুসলিম সবাইকেই দেওয়া জায়েয। তবে, যুদ্ধরত কাফির সম্প্রদায়কে দেওয়া যাবে না। কুরবানির মাংস দিয়ে বিবাহের ওলিমা করা জায়েয। তবে, যদি কুরবানির মূল উদ্দেশ্যকে সামনে না রেখে কেবল ওলিমাকে টার্গেট করেই কুরবানি করা হয়, তবে তার কুরবানি জায়েয হবে না। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ৫/৩০০; আল-বাহরুর রায়িক: ৩/৭১]

সংগৃহীতঃ