কোলনোস্কপি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এ পরীক্ষার মাধ্যমে পায়ুপথ ও অন্ত্রের অনেক রোগ যেমন নির্ণয় করা যায়, তেমনি এ প্রক্রিয়ায় রোগের চিকিৎসাও করা যায়। জানা যাক কোলনোস্কপি সম্পর্কে।
কোলনোস্কপি হলো এমন একটি পরীক্ষার নাম যা কোলনোস্কপ নামক একটি লম্বা নলাকৃতি যন্ত্রের মাধ্যমে পায়ুপথ, রেক্টাম, পুরো বৃহদন্ত্র বা কোলন ও ক্ষুদ্রান্ত্রের শেষাংশ সরাসরি দেখা যায়। এ নলটি একটি ফাইবার অপটিক যন্ত্র, সামনের অংশে একটি অতি সংবেদনশীল ক্যামেরা লাগানো থাকে। এ ক্যামেরার মাধ্যমে অঙ্গগুলো একটি টিভি মনিটরে দেখা যায়, ছবি তোলা যায় এবং পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিও করা যায়, এমনকি রোগী নিজে এ প্রক্রিয়া টিভি মনিটরে দেখতে পারেন। কোলনোস্কপির মাধ্যমে অন্ত্রের প্রায় সব রোগ কোলন ক্যানসার, পলিপ, আলসারেটিভ কোলাইটি এবং সব কোলন প্রদাহ, ক্রোনস ডিজিজ, টিবি, আলসারসহ অনেক রোগ নির্ণয় করা যায়। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য এটি একটি অনন্য মাধ্যম। ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে যখন কোলন ক্যানসার কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না অর্থাৎ এ পর্যায়ে ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায়। শুধু এ কোলনোস্কপির মাধ্যমেই তা ডায়াগনোসিস করা যায়। এ ছাড়া এ যন্ত্রের সাহায্যে অনেক চিকিৎসাও করা যায়। তা আগে পেট কেটে অপারেশনের মাধ্যমে করতে হতো কোলন পলিপ অপসারণ, কোলনে রক্তপাত, ভলভিউলামের চিকিৎসা ইত্যাদি।
প্রশ্ন আসতে পারে, কোলনোস্কপি কাদের করতে হয়?
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম হলো ৫০ বছরের পর (বাংলাদেশে ৪০ বছরের পর) সব ব্যক্তির, যাকে বলা হয় স্ক্রিনিং কোলনোস্কপি, যাতে কোলন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা যায়, যাদের আগেই পলিপ অপসারণ করা হয়েছে, ক্যানসারের অপারেশন করা হয়েছে তাদের নিয়মিত সময় ব্যবধানে কোলনোস্কপি করতে হবে। যাদের মলের সঙ্গে রক্ত যায়, কালো রক্ত হয়, মলত্যাগের স্বভাব বদলে গেছে অর্থাৎ একবার শক্ত, একবার নরম মল হয়, মলত্যাগের সময় ব্যথা, তলপেটব্যথা অথবা ক্যানসারের লক্ষণগুলো মিলে যায় এমন ব্যক্তির একবার অবশ্যই কোলোনোস্কপি করতে হবে, বিশেষ করে যদি তার বয়স ৪০ বছরের বেশি হয়ে থাকে। কোলনোস্কপি করাতে অনেকে ভয় পান। আসলে তেমন ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। এটি অতিসাধারণ একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই বলি, এ পরীক্ষা করার প্রয়োজন হলে ভয় না পেয়ে করিয়ে নিন এবং সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন করুন।