গর্ভকালীন লিভারের রোগ কেন হয়? ভিডিও সহ


images

গর্ভবতী মায়েদের লিভারের রোগ সাধারণত তিনভাবে হয়। এ রোগে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে মা ও শিশুর জন্য সেটা মৃত্যুঝুঁকির কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিভার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ।

প্রশ্ন : আমরা জানি, লিভারের রোগ একটি জটিল রোগ। কারণ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যে কয়টা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে লিভার একটি। এই রোগ যে কারো, যেকোনো সময়ে হতে পারে। তবে গর্ভবতী মায়েদের সঙ্গে লিভারের রোগের সম্পর্ক কী?

উত্তর : দেখা গেছে, গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে তিনভাবে এই অসুখটি হতে পারে। একটি হচ্ছে গর্ভাবস্থার কারণে সৃষ্ট কিছু লিভারের রোগ হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে যদি কারো আগে থেকে লিভারের অসুখ ছিল এবং তিনি যদি গর্ভবতী হোন। আর কোনো ভাইরাসের কারণে এ সময় যদি লিভারের অসুখ দেখা দেয়।

প্রশ্ন : একজন গর্ভবতী মায়ের অন্যদের তুলনায় লিভারের রোগ বেশি হলে এর ঝুঁকি কতটুকু বেশি?

উত্তর : কিছু কিছু অসুখের কারণে কোনো গর্ভবতী মায়ের যদি লিভারের রোগ বেশি হয় তাহলে অন্যদের তুলনায় তাঁর জীবনের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
কিছু অসুখ যেটা গর্ভাবস্থার কারণে হয়, যেমন : একিউট ফ্যাটি লিভার অব প্রেগনেন্সি বা লিভারের কোষ কলার মধ্যে চর্বি জমা। আরেকটি আছে যেখানে লিভারের কোষ কলার মধ্যে পিত্ত রস জমে যায়। এ ছাড়া হেল্প সিনড্রম বা প্রিএকলামসিয়া হওয়ার ফলে লিভার আক্রান্ত হয়। এর কারণে তাঁদের জীবনের ঝুঁকি এবং অনাগত সন্তানের জীবনের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়

প্রশ্ন : যার লিভারের রোগ আগে থেকে আছে, এমন কোনো মা যদি সন্তান ধারণ করতে চান, তাহলে ধারণ করতে পারেন কি না? এবং তাঁর কোনো সতর্কতা প্রয়োজন আছে কি না?

উত্তর : আগে থেকে যাঁদের লিভারের অসুখ থাকে তাঁদের সাধারণ হেপাটাইটিস বি, সি ভাইরাস শরীরে থাকে। আর কোনো কোনো উন্নত দেশে অ্যালকোহলজনিত সমস্যা থাকে। আরো কিছু জন্মগত রোগ আছে, যেমন, ওইলসনস ডিজিজ, অটোইমিউন হেপাটিক ডিজিজ – এ ধরনের অসুখগুলোতে যাঁরা ক্রনিক প্রদাহ বা সংক্রমণে আক্রান্ত হন, তাঁরা গর্ভবতী হতে চাইলে হতে পারবেন। কিন্তু তাঁদের অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

দুটি বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে যান। এই অসুখগুলো দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ তৈরি করতে পারে। এদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যে চিকিৎসা চলছে সেটা চালিয়ে যেতে হবে। আবার কখনো কখনো কিছু ওষুধের হয়তো মাত্রা পরিবর্তন করতে হবে। কারণ কিছু কিছু ওষুধ গর্ভকালীন দেওয়া যায় না। যেই চিকিৎসকের আওতায় উনি রয়েছেন তিনি এই ওষুধগুলো পরিবর্তন করে দেবেন। একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং একজন লিভার বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।images (1)

তবে আমি বলতে চাই, যাঁদের এরই মধ্যে লিভার সিরোসিস হয়েছে তাঁদের নিজেদের ঝুঁকিও যেমন বেশি, তাঁদের অনাগত সন্তানের ঝুঁকিও অনেক বেশি।

প্রশ্ন : বিভিন্ন ধরনের ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁর চিকিৎসা কিংবা এর প্রতিরোধ করার জন্য যে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা আছে কিছু কিছু ভাইরাসের বেলায়। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর : ভ্যাকসিন দেওয়া হয় মূলত হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে। এবং গর্ভবতী হওয়ার পর প্রথম তিন মাসের মধ্যে যদি আগে থেকে কারো প্রতিষেধক নেওয়া থাকেও তিনিসহ সবারই এইচবিএসএজি পরীক্ষাটা করতে হয়। যদি এইচবিএসএজি পজিটিভ হয়, তাহলে তো চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর যদি নেগেটিভ থাকে, তাহলে গর্ভধারণ অবস্থায় ভ্যাকসিনেশন করতে হবে।

প্রশ্ন: একজন মা গর্ভবতী হওয়ার সময় তার লিভারের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কি বেশি?

উত্তর : কিছু ভাইরাস দিয়ে যেই ইনফেকশনগুলো হয় সেটা সবার ক্ষেত্রে যে রকম তাঁর ক্ষেত্রেও একই রকম। এখানে আক্রান্ত হওয়ার যে ঝুঁকি, সেটা সবার জন্যই সমান। গর্ভাবস্থায় যদি কোনো মা হেপাটাইটিস-ই-তে আক্রান্ত হয় সেই মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাদের গর্ভের সন্তানের শরীরে এটা সংক্রমিত হতে পারে।

প্রশ্ন : একজন মা যদি লিভারের রোগে আক্রান্ত হন, তাঁর গর্ভজাত সন্তানের বেলায় এর সংক্রমণের ঝুঁকি কতখানি? যদি সে কোনো ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয় তবে সন্তান যদি সুস্থভাবে জন্মও নেয় সেটি বহন করবে কি না?

উত্তর : ভাইরাসটি মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে গর্ভাবস্থায় যাওয়ারও ঝুঁকি আছে। জন্মের সময়ও প্রসূতি মায়ের থেকে ভাইরাসটি সন্তানের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।

ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তাদের গর্ভপাত হতে পারে। কম ওজনের বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সে ভূমিষ্ঠ হতে পারে। এ ছাড়া শিশুটিরও মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

প্রশ্ন : লিভারের অসুখ হলে অনেকের মধ্যে এই ভীতি কাজ করে, আমি ওষুধ খেতে পারব কি না বা কোন ওষুধ খাব বা খাব না। গর্ভাবস্থায় যেই ওষুধগুলো নিয়মিত দেওয়া হয় ভিটামিন, আয়রন, ফলিক এসিড – এগুলোতে কোনো বাধা আছে কি না?

উত্তর : লিভারের রোগ থাকলে এসব ওষুধ গ্রহণে কোনো বাধা নেই। তিনি নিশ্চিন্তেই ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।

প্রশ্ন : যদি কোনো মা লিভারের রোগের নিয়মিত চিকিৎসা না করান তাহলে কী ক্ষতি হতে পারে?

উত্তর : বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। কোনো মা যদি হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে এবং পরেও চিকিৎসা করতে হবে।

হেপাটাইটিস সি-এর ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া অন্যান্য যে অসুখগুলো আছে, যে রোগের কথা আগে বললাম, সে অসুখগুলোতে কখনো কখনো যদি কারো বেশি জটিলতা দেখা যায়, এর মধ্যে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত মায়েদের রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, খাদ্যনালির শিরা ছিঁড়ে গিয়ে। কিংবা কখনো কখনো তাঁর পেটে পানি চলে আসতে পারে। কখনো লিভার ফেইলিউর হয়ে জন্ডিসের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এই জাতীয় সমস্যা হলে তাঁকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। অথবা চিকিৎসাগুলো একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে বাসায় বসে করতে পারবেন।

আর যদি জটিলতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে শেষের তিন মাসের সময় তখন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা জরুরি হয়ে পড়ে।

প্রশ্ন: যদি কোনো মায়ের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকে, তাঁর কি গর্ভাবস্থায় পরীক্ষার প্রয়োজন আছে বা ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন আছে? আর যাঁর ভ্যাকসিন একেবারেই নেওয়া না থাকে, তাঁর জন্য এটা নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর : যাঁর ভ্যাকসিন নেওয়া নাই, তাঁকে তো অবশ্যই পরীক্ষা করে ভ্যাকসিন নিতে হবে। এতে প্রসবের সময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার যে আশঙ্কা থাকে সেটি কমে যাবে।

আর যিনি আগে এই প্রতিষেধক নিয়েছিলেন আমরা জানি না যে তাঁর ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটা কতটুকু কার্যকর আছে। তার ক্ষেত্রেও আগে প্রতিশেষক কার্যকর রয়েছে কি না, সেটা দেখতে হবে। যদি কার্যকর না হয়ে থাকে তাহলে তাঁকেও আবার পুনরায় ভ্যাকসিন দিতে হবে।

প্রশ্ন : একজন লিভার রোগে আক্রান্ত মায়ের প্রস্রবের সময় আলাদা কোনো সতর্কতার প্রয়োজন আছে কি না?

উত্তর : রক্তের যে জমাট বাঁধার ক্ষমতা, এর মধ্যে যে প্রোটিনগুলো থাকে, সেই প্রোটিনগুলো লিভার তৈরি করে। এটা লিভারের কাজ। লিভারের সমস্যা যাঁদের থাকে, এই মায়েদের প্রসবের সময় রক্তক্ষরণ বেশি হবে। যার ফলে ওই মায়ের জন্য রক্ত দেবে এমন ডোনার তৈরি করে রাখতে হবে। যাতে প্রয়োজন হলে মাকে রক্ত দেওয়া যায়।

প্রশ্ন : বাচ্চার ক্ষেত্রেও এমন সমস্যা হতে পারে কি না?

উত্তর : বাচ্চার ক্ষেত্রে রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে বাচ্চার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। এটি পরবর্তীকালে বাচ্চার অসুবিধা তৈরি করতে পারে।

প্রশ্ন : মায়ের ভ্যাকসিনের কথা আমরা শুনলাম, তবে বাচ্চার ভ্যাকসিন কখন দেবে এবং এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর প্রথম ১২ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে হেপাটাইটিস ভ্যাকসিন এবং ইমুইনোগ্লোবিউলিন্স এই দুটো প্রতিষেধক তাকে দিতে হবে। তারপর সরকারিভাবে যেভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় সেভাবে নেবে।

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন

( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *