গর্ভকালীন সময়ে হোমিও ঔষধ সেবন নিরাপদ ও ইজি ডেলিবারী হবে

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ

মহিলারা গভর্ধারণ করলে আর রক্ষা নাই। গাইনী ডাক্তাররা তাদেরকে পায়খানা, প্রস্রাব, রক্ত, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম ইত্যাদি ইত্যাদি এক বস্তা টেস্ট করতে দিবেন।
কিন্তু কেন ? গভর্ধারণ করা কি কোন 17অপরাধ ? ববরর্তার একটা সীমা থাকা দরকার ! তারপর দিবে এক বস্তা ঔষধ / ইনজেকশান / ভ্যাকসিন, মাসের পর মাস খেতে থাক ! কেন ? এখন আমরা তো সবাই স্বচক্ষেই দেখি, জিওগ্রাফী / ডিসকভারী টিভি চেনেলগুলোতে, গরু-ছাগল-হরিণ-বাঘ-সিংহ-হাতি সবাই গর্ভধারণ করছে এবং সুস্থ-সুন্দর বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে। কই, তাদের তো গাইনী ডাক্তারদের কাছেও যেতে হয় না, এক বস্তা টেস্টও করতে হয় না, মাসকে মাস ঔষধও খেতে হয় না কিংবা সিজারিয়ান অপারেশানও লাগে না। হাস্যকর কিছু বললাম ? না, আসলে আত্মিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে আমরা ভিন্ন হলেও জৈবিক দিক দিয়ে কিন্তু পশু-পাখিদের সাথে আমাদের কোন পার্থক্য নাই।

এবার আসা যাক গর্ভকালীন সময়ে ঔষধ খাওয়া প্রসংগে। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে গর্ভবতীদেরকে ভিটামিন, ক্যালশিয়াম, আয়রণ, ফলিক এসিড ইত্যাদি খাওয়ানো হয় বস্তায় বস্তায়। তাদের সমস্ত ঔষধই এতবেশী সাইড-ইফেক্টযুক্ত যে, তারা সেগুলো গর্ভবতীদের খাওয়াতে সাহস পায় না। ফলে তারা এসব ভিটামিন, ক্যালশিয়াম, আয়রণ, ফলিক এসিড ইত্যাদি খাওয়াতে থাকে জম্মের মতো। যেহেতু তারা এগুলোকে গর্ভবতীদের জন্য নিরাপদ মনে করে থাকেন। তবে এসব ঔষধের কারণে গর্ভবতী ও গর্ভস্থ শিশুর কি কি ক্ষতি হয়, তা জানার কোন উপায় নেই। কারণ প্রথমত বড় বড় ঔষধ কোম্পানীগুলো সাধারণত তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে ঔষধের ক্ষতিকর দিকটি প্রকাশ করে না। দ্বিতীয়ত তাদের এসব ঔষধ যেহেতু ইদুঁর-গিনিপিগের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবিষ্কার করা হয় ; কাজেই কোন ঔষধ ইদুঁর-গিনিপেগের ক্ষতি করে না বলে মানুষেরও ক্ষতি করবে না- এমনটা বলা যাবে না। তাছাড়া বস্তা বস্তা ক্যালশিয়াম খাওয়া যে কিডনীতে পাথর (Renal calculus) হওয়ার একটি মূল কারণ, এটা আমরা অনেকেই জানি। এসব ভিটামিন, ক্যালশিয়াম, আয়রণ ইত্যাদি যেহেতু আমাদের দৈনন্দিন খাবারেই যথেষ্ট পরিমাণে থাকে, কাজেই ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ইত্যাদি ঔষধ আকারে বস্তা বস্তা খেলে তাতে শরীরে এসব উপাদানের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্ঠি হওয়াই স্বাভাবিক। এসব ভারসাম্যহীনতার কারণেই সম্ভবত গভবতী মায়েদের পেটের পানির (placenta fluid) পরিমাণ কমে যায়, ঠিকমতো প্রসব ব্যথা উঠতে চায় না। ফলে সিজারিয়ান অপারেশনের (Cesarean operation) সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। এসব ভিটামিন, ক্যালশিয়াম, আয়রণ, ফলিক এসিড ইত্যাদি বস্তায় বস্তায় খাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশী নগদ যে ক্ষতিটি প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়, তাহলো এতে অধিকাংশ মহিলাই ভীষণ রকমে মোটা (obese) হয়ে যান। আর এখনকার সকল চিকিৎসা বিজ্ঞানীই একমত যে, মোটা মানুষরা (এযুগের প্রধান প্রধান ঘাতক রোগ) ক্যানসার, হৃদরোগ (heart disease), হাঁপানী, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট এটাক, জয়েন্টে ব্যথা (Arthritis) ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয় বেশী হারে।

সে যাক, হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গর্ভকালীন সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে কোন (ভিটামিন, আয়রণ, ক্যালশিয়াম জাতীয়) ঔষধ খাওয়ানোর পক্ষপাতী নন। বিশেষত যাদের হজমশক্তি ভালো আছে এবং মাছ-গোশত-শাক-সবজি-ফল-মূল ইত্যাদি কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ আছে, তাদের কোন (ভিটামিন জাতীয়) ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নাই। তবে যে-সব গর্ভবতী মায়েরা শরীরিক-মানসিক দুর্বলতা, রক্তশূণ্যতা ইত্যাদিতে ভোগছেন, অথবা যারা অভাব-অনটনের কারণে প্রয়োজনীয় পুষ্ঠিকর খাবার-দাবার কিনে খেতে পারেন না কিংবা যারা পুষ্ঠিকর খাবার কিনে খেতে পারলেও শারীরিক ত্রুটির কারণে সেগুলো যথাযথভাবে শরীরে শোষিত (absorption) হয় না, তাদেরকে ক্যালকেরিয়া ফস (Calcarea phos), ফেরাম ফস (Ferrum phos), ক্যালি ফস (Kali phos) ইত্যাদি হোমিও ভিটামিন / টনিক জাতীয় ঔষধগুলো নিম্নশক্তিতে (6X) অল্প মাত্রায় খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এই ঔষধগুলি মানব শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ক্যালশিয়াম, আয়রণ, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস সরবরাহ করে থাকে। পাশাপাশি এই ঔষধগুলো আমাদের শরীরকে এমনভাবে গড়ে তোলে যাতে আমাদের শরীর নিজেই তার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্ঠিকর উপাদানগুলো আমাদের দৈনন্দিন খাবার খেতে শোষণ করার / গ্রহন করার যোগ্যতা লাভ করে।

গর্ভকালীন সময়ে খেলে এই ঔষধগুলো আপনার গভর্স্থ সন্তানের হাড় (bone), দাঁত (teeth), নাক (nose), চোখ (eye), মস্তিষ্ক (brain) ইত্যাদির গঠন খুব ভালো এবং নিখুঁত করতে সাহায্য করবে এবং আপনার সন্তান ঠোক কাটা (harelip), তালু কাটা (cleft palate), হাড় বাঁকা (rickets), খোঁজা (epicene), বামন (dwarfish), পিঠ বাঁকা (Spina bifida), বুদ্ধি প্রতিবন্ধি, হৃদরোগ, চর্মরোগ, কিডনীরোগ প্রভৃতি দোষ নিয়ে জন্মনোর হাত থেকে রক্ষা পাবে। এই জন্য যাদের বংশে শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্দ্বি শিশু জন্মের ইতিহাস আছে, তাদের গর্ভকালীন সময় এই ঔষধগুলো অবশ্যই খাওয়া উচিত। ভিটামিন জাতীয় এই হোমিও ঔষধগুলো গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যের এত চমৎকার যত্ন নেয় যে, এগুলো বেশ কয়েক মাস খেলে তাদের উচ্চ রক্তচাপ (hypertension), হাঁপানী (asthma), ডায়াবেটিস(diabetes), মাথাব্যথা, বমিবমিভাব, ছোটখাট জ্বর-কাশি, খিচুঁনি (eclampsia) ইত্যাদি রোগ এমনিতেই সেরে যায়। অন্যদিকে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানী, ডায়াবেটিস, খিচুঁনি, ধনুষ্টংকার ইত্যাদি রোগ নাই, তারাও এই ঔষধ তিনটি খাওয়ার মাধ্যমে সে-সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।

ঔষধ তিনটি একসাথে খাওয়া উচিত নয় ; বরং একটি একটি করে খাওয়া উচিত। যেমন- ক্যালকেরিয়া ফস পনের দিন, তারপর ফেরাম ফস পনের দিন, তারপর ক্যালি ফস পনের দিন- এইভাবে চক্রাকারে একটির পর একটি করে খান। সাধারণত 1X, 3X, 6X, 12X ইত্যাদি নিম্নশক্তিতে খাওয়া উচিত ; যেটি মার্কেটে পাওয়া যায়। ১০ টি বড়ি করে সকাল-বিকাল রোজ দুইবার করে খান। প্রয়োজন মনে করলে পুরো গর্ভকালীন পুরো দশ মাসই খেতে পারেন এবং সন্তানকে স্তন্যদানকালীন দুই বছরও খেতে পারেন। তবে মাঝে মধ্যে সাতদিন বা পনের দিন মধ্যবর্তী বিরতি দিয়ে খাওয়াও একটি ভালো রীতি। এটি গর্ভ রক্ষার অর্থাৎ গর্ভস্থ শিশুকে রক্ষার একটি শ্রেষ্ট ঔষধ। এটি গর্ভস্থ শিশুর চারদিকে পানির (placenta fluid) পরিমাণ বজায় রাখে এবং পানির পরিমাণ কমতে দেয় না, ফলে অধিকাংশ শিশু সিজারিয়ান অপারেশন ছাড়াই স্বাভাবিক পথে জন্ম নিয়ে ‍থাকে। কলোফাইলাম গর্ভপাতেরও (abortion) একটি উত্তম ঔষধ, যাতে ভুয়া প্রসব ব্যথা দেখা দিলে এটি প্রয়োগ করতে হয়। যাদের প্রতিবারই (তৃতীয় ‍মাস, পঞ্চম মাস ইত্যাদি) একটি নির্দিষ্ট সময়ে গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়, তারা সেই নির্দিষ্ট সময়ের একমাস পূর্ব থেকেই অগ্রিম এই ঔষধটি খাওয়া শুরু করতে পারেন ।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435 // 01670908547
ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ইমেইল-dr.zaman.polash@gmail.com

ওয়েব সাইটwww.zamanhomeo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *