ডা. গোবিন্দচন্দ্র দাস
গর্ভধারণকালে মেয়েরা ওষুধ খেতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। যদি কোনো অ্যাজমা রোগী গর্ভধারণ করেন তাহলে শুধু তার নিজের প্রয়োজনেই সুচিকিৎসা জরুরি নয় বরং তার অনাগত সন্তানের জন্যও সুচিকিৎসা প্রয়োজন। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যেমন গর্ভধারণে প্রচন্ড কষ্ট হয় তেমনই গর্ভস্থ সন্তানের বেড়ে ওঠা এমনকি জীবিত থাকারও অসুবিধা হয়
গর্ভধারণকালে মেয়েরা ওষুধ খেতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। যদি কোনো অ্যাজমা রোগি গর্ভধারণ করেন তাহলে তার সুচিকিৎসা জরুরি শুধু তার নিজের প্রয়োজনেই নয় বরং তার অনাগত সন্তানের প্রয়োজনেও। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যেমন গর্ভধারণে প্রচন্ড কষ্ট হয় তেমনই গর্ভস্থ সন্তানের বেড়ে ওঠা এমনকি জীবিত থাকারও অসুবিধা হয়। অন্য সবার মতো গর্ভবতীদেরও অ্যাজমা চিকিৎসার মূল লক্ষ্য একই।
যেসব জিনিস অ্যাজমার প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়, যেমন ধুলা, ধোঁয়া, পতঙ্গ, ছত্রাক, ধূমপান_ এসব থেকে গর্ভবতীকে দূরে থাকতে হবে। আপনি গর্ভধারণ করার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে পরার্মশ করুন, যাতে এ সময় আপনার অ্যাজমা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
নিচে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর দেয়া হলো-অ্যাজমা রোগীরা যারা গর্ভধারণে ইচ্ছুক, তারা এ প্রশ্নোত্তর থেকে লাভবান হতে পারবেন।
* অ্যাজমা আক্রান্ত নারী কি নিরাপদ মাতৃত্ব লাভ করতে পারবেন?
** বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঠিকভাবে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে গর্ভবতী মা বা গর্ভস্থ সন্তানের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবান শিশুর জন্ম দেয়া সম্ভব। তবে যদি গর্ভাবস্থায় অ্যাজমা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে জন্মের সময় শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়ে থাকে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় আপনাকে অবশ্যই অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
* অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ না করলে সন্তানের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় কেন?
** অ্যাজমা মায়ের রক্তে অঙ্েিজনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। যেহেতু গর্ভস্থ শিশু অঙ্েিজন পায় মায়ের রক্তের অঙ্েিজন থেকেই। কাজেই শিশুর রক্তেও অঙ্েিজনের পরিমাণ কমে যায়। অথচ শিশুর বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অঙ্েিজন থাকতেই হবে। ফলে অঙ্েিজন স্বল্পতা গর্ভস্থ শিশুর বেড়ে ওঠা, এমনকি বেঁচে থাকারও নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে না।
* অ্যাজমার ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর ওপর কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে
** শত শত সমীক্ষা ও গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় অ্যাজমার ওষুধ হিসেবে ইনহেলার ব্যবহারই যথোপযুক্ত। চেষ্টা করতে হবে মুখে খাওয়ার ওষুধ না দেয়ার।
* অ্যাজমাক্রান্ত অবস্থায় গর্ভধারণ কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে?
** গর্ভধারণের ফলে অ্যাজমা রোগীদের উপসর্গ বেড়ে যেতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, গর্ভধারণের পরে শতকরা ৩৫ জন মহিলার অ্যাজমা বেড়ে গেছে, শতকরা ২৮ জনের উন্নতি হয়েছে এবং শতকরা ৩৩ জনের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। দেখা গেছে, যারা গর্ভাবস্থায় সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন এবং অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন, তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
* গর্ভাবস্থার কোন পর্যায়ে অ্যাজমার উপসর্গ বৃদ্ধি পায়
** দ্বিতীয় পর্যায়ের শেষের দিকে এবং তৃতীয় পর্যায়ের শুরুর দিকে অ্যাজমার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার একটি প্রবণতা দেখা যায়। সন্তান প্রসবকালে অ্যাজমার উপসর্গ বৃদ্ধির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
* গর্ভধারণের ফলে কোনো কোনো নারীর অ্যাজমার উন্নতি হয় কেন?
** সঠিক কারণটি জানা যায়নি। তবে গর্ভাবস্থায় মেয়েদের রক্তের কর্টিসোন নামক হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ কর্টিসোন অ্যাজমার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।
* গর্ভধারণের ফলে কোনো কোনো মহিলার অ্যাজমা বেড়ে যায় কেন?
** এক্ষেত্রেও সঠিক কারণটি অজানা। যেহেতু গর্ভবতীদের পাকস্থলী এলাকাতে চাপ পরে সে কারণে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাঙ্ বেড়ে যায়। ফলে শুরু হয় বুক জ্বলা এবং আরও কিছু উপসর্গ। এ রিফ্লাঙ্রে কারণে অ্যাজমার তীব্রতা বেড়ে যায়। এছাড়া আরও কিছু কারণ যেমন সাইনাস ইনফেকশন, ভাইরাসজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং অতিরিক্ত চাপের জন্যও অ্যাজমার তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
* অ্যাজমা রোগাক্রান্ত মা কি শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে পারবেন?
** মায়ের বুকের দুধ শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কাজেই বুকের দুধ খাওয়ানোকে উৎসাহিত করতে হবে। তবে যদি কোনো ওষুধ বুকের দুধের মাধ্যমে পরিত্যক্ত হয়, তা নিখুঁতভাবে জানা সম্ভব হয়নি। এজন্য কোনো ওষুধকেই শিশুর জন্য বুকের দুধের মাধ্যমে ক্ষতিকর বলে ঘোষণা করা হয়নি। অবশ্য লিওফাইলিন দে বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে যে কিছুটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তা জানা গেছে। তবে স্তন্যদানকালে কোনো অ্যালার্জি থাকলে অবশ্যই তার উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে।
( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall