গোসলে গরম বনাম ঠাণ্ডা পানি, ক্ষতি আর উপকার

image_25808.heat-pump-system-hot-water-heating
অনলাইন ডেস্ক—–
শীতকাল জেঁকে বসছে ধীরে ধীরে। প্রতিদিনের গোসলে এখন আমাদের গরম পানি বনাম ঠাণ্ডা পানির চিন্তা-দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে। শীতের দিনে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিও ঠাণ্ডা থাকে। দুপাটি দাঁতের বাড়ি খেতে খেতে এ পানি দিয়ে গোসল করা রীতিমতো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আবার গরম পানিতেও নানা সমস্যার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ নিয়ে নানা জনের বিভিন্ন মতামত রয়েছে।

বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনাদের সঠিক তথ্যটি দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। অবশ্য তারা নিশ্চিত করে বলছেন যে, গরম পানির গোসল হচ্ছে জলচিকিৎসা, যা সব সময়ই ভালো। তবে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে যদি এর ব্যবহারে গড়বড় করে ফেলেন।

অতিরিক্ত গরম হবে না: অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে আরামদায়ক উষ্ণতার পানিতে গোসল সারতে হবে। তাপমাত্রা সঠিক থাকলে এ গোসল আপনাকে প্রশান্তি এনে দিবে। সব জ্বরা আর ক্লান্তি ধুয়ে নিয়ে যাবে উষ্ণ পানি।

কিন্তু সাবধান! তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত হলে অবসাদ একলাফে মাথায় চড়ে বসতে পারে। অতি গরম পানিতে গোসলের পর ঘুম হারাম হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ইনসমনিয়ায় যারা ভোগেন, তাদের জন্য অধিক উষ্ণতায় গোসল আত্মহত্যার সামিল। আর গর্ভবতী নারীদের ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ওপরে ওঠা উচিত নয়।

অধিক উষ্ণতায় ঘাম বের হয়: মানুষের শারীরবৃত্তীয় অনেক কাজ আছে যা করতে গেলে দেহে বেশ ভালো পরিমাণ তাপমাত্রার উদয় হয়। মেদ কমাতে ক্যালরি খরচের জন্য ব্যায়াম করলে ঘাম ঝরে। আবার অনেকে অধিক গরম পানিতে ঘাম ঝরানোর কথা বলেন। কিন্তু পরিশ্রমের পর বেশি গরম পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। আবার স্বাভাবিক পানি এবং অধিক উষ্ণ পানির ব্যবহার আরো বিপজ্জনক। হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সহনীয় গরম পানি যদি আপনার স্বাভাবিক পরিমাণ ঘাম ঝরাতে পারে, তবে তা ভালো ফল দেবে।

মাথা ঠাণ্ডা রাখুন: গরম পানিতে অনেকেরই হালকা মাথাব্যাথা বোধ হতে পারে। সতেজ ভাব নষ্ট হয়ে যায় অনেকের। এ সমস্যা যাদের হয়, তারা মাথা বা হাত বা পা অথবা তিনটিই গরম পানি থেকে দুরে রাখবেন। কারণ দেহের সব স্থানে ভিন্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। অধিক তাপ সাধারণত দেহের ওই তিন অংশ দিয়ে বের হয়ে যায়। অন্যথা কৃত্রিম জ্বর হতে পারে।

তাই গরম পানির গায়ে ঢালুন। আর ঠাণ্ডা পানি হাতে, পায়ে আর মাথায় নিন। তবে এর পরও দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারে। তবুও সেক্ষেত্রে মানসিক বিষাদের ঘনঘটা কিছুটা হালকা মনে হবে।

উষ্ণ পানির সাথে হালকা ম্যাসাজ: ঈষদুষ্ণ পানির সাথে হালকা ম্যাসাজ করে মাসলকে স্বস্তি দিতে পারলে আরাম পাবেন। এই ম্যাসাজ পদ্ধতির সবচেয়ে উত্তমটি হচ্ছে ‘বল বাথ ট্রিক’। সাধারণ ব্যাপার, একটি বল দিয়ে শরীরের নানা স্থানে আলতোভাবে ডলতে থাকুন। বাথটাব থাকলে তা পানি ভর্তি করে দুটি বল নিচে রেখে শুয়ে পড়ুন এবং দেহটাকে আগ-পিছ করুন।

তবে অনেকে টেনিস বল ব্যবহার করেন। এতে করে বলের আকার বড় হওয়ার ফলে পিঠে বেশি পরিমাণ চাপ পড়ে। ফলে হালকা ব্যাথা হয়ে যেতে পারে। কাজেই একটু ছোট আকারের নরম বল ব্যবহার করলে তা বেশি কার্যকর হবে।

উষ্ণ পানির গোসলে আড়মোড়া ভাঙা: মূলত আড়মোড়া ভাঙা বা স্ট্রেচ করা যতটা উপকারী বলে মনে হয়, আসলে ততটা নয়। আবার উপকারহীনও বলা যায় না। এতে পেশির নানা ব্যাথা দূর হতে পারে।

গরম পানির গোসলে স্ট্রেচ বাড়তি কিছু আরাম যোগ করতে পারে। যেমন, আনুভূমিক অবস্থায় বসলে বা শুয়ে থাকলে পেশী কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে। ব্যাক পেইন অর্থাৎ পিঠের ব্যাথায় উপকার আসতে পারে। দেহের পেশীগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের টিস্যুগুলো উষ্ণতায় কিছুটা নরম হতে পারে যাকে ‘থিক্সোট্রপিক ইফেক্ট’ বলে; ঠিক যেভাবে তাপমাত্রায় প্লাস্টিক নরম হয়ে আসে। দেহের স্নায়ুতন্ত্রের কিছু অবাধ্য আচরণকে কিছুটা সংযত করে দিতে পারে।

দেখা গেছে, স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন পেশী বা অঙ্গের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এটা আসলে নড়াচড়ার সময় পেশীর বাধাপ্রদানকে কমিয়ে দেয়। এতে টিস্যুর কোনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু এর সাথে পানির তাপমাত্রা ভালো কিছু দিতে পারে।

গরম পানিতে ঈপসম লবণ ব্যবহার কি ভালো?: অনেকে মনে করেন, গরম পানিতে ঈপসম লবণ দেহের হালকা ক্ষত, চুলকানি এবং মৃদু ব্যাথা সারিয়ে দেয়। সম্ভবত এ তথ্যটি সঠিক নয়। তবে গোসলের সময় এ লবণকে শুষে নেয় ত্বক। তখন ভিন্ন অনুভূতি জাগতে পারে। কিন্তু এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় যে, এ লবণ ত্বকে প্রবেশ করে ব্যাথা-বেদনা উপশম করে। এমনকি এটিও জানা যায়নি যে, লবণ দেহে প্রবেশ করে কোনো ক্ষতি করে কিনা।

ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসের আবির্ভাব: গরম পানিতে গোসলের সময় অনেকের ঘন এবং ভারী নিঃশ্বাস নিতে হয়। এটি ক্ষতিকর কোনো বিষয় নয়। গরম পানির বাষ্প এবং তাপমাত্রার সাথে রক্তের ক্রিয়াকলাপে শ্বাস ভারি হয়ে আসতে পারে। এর মাধ্যমে টেনে নেওয়া গরম বাষ্প আবার বের হয়ে আসে।

খেয়াল করলে বুঝবেন, এই ভারী শ্বাস-প্রশ্বাসের আসা যাওয়া এক ধরনের আরামদায়ক অনুভূতি দেয় আপনাকে। তবে তা স্বাভাবিকভাবে এবং হালকা মেজাজে করাই ভালো।
সূত্র: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *