চিকিৎসক-রোগী সম্পর্ক কেমন হবে

photo-1427954395রোগের জন্য যেমন ওষুধ, তেমনি রোগীর জন্য চিকিৎসক। একজন মিষ্টভাষী ও নরম মনের চিকিৎসক কেবল রোগীর মন জয় করেন না, অতি সহজে রোগের চিকিৎসাও করে ফেলেন। আর হাসি দিয়ে যদি বিশ্বজয় করা যায়, তবে অসুস্থ, অসহায় মানুষকে কেন নয়! প্রবাদ আছে, স্রষ্টার পর একজন চিকিৎসকই রোগীর সবচেয়ে বড় ভরসাস্থল। তাই কেবল চিকিৎসাই নয়, তাঁর আচরণ, সহমর্মিতা, সুন্দর ব্যবহারও রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কথা তো ভুলে গেলে চলবে না যে চিকিৎসা ব্যবসা নয়, বরং এটি একটি সেবামূলক পেশা।

চিকিৎসকরা যখন ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার পর এক বছর ইন্টার্ন করেন তখন থেকে তাঁদের শেখানো হয় রোগীকে সম্মান করা, সর্বদা হাসি মুখে থাকা, পরীক্ষা করার আগে অনুমতি প্রার্থনা করা, রোগীর প্রাইভেসি ( গোপনীয়তা) বজায় রাখা ইত্যাদি। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে অনেকেই যেন সব ভুলে যান। সময়ের অভাব বা আন্তরিকতার অভাব তখন প্রকট হয়ে ওঠে।

চিকিৎসকদের জন্য রোগী যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জরুরি তার রোগের সঠিক ইতিহাস জানা, পরীক্ষা করা, সম্পূর্ণ কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা। আবার রোগীদেরও কিছু কর্তব্য আছে, যেমন : সব অসুবিধার কথা পরিষ্কার করে খুলে বলা, আগে কোন কোন ওষুধ গ্রহণ করেছেন তা জানানো, আগে কোনো বড় রোগ ছিল কি না তা জানানো।

আমাদের দেশে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে আসেন কিন্তু আগের কোনো কাগজ বা পরীক্ষার রিপোর্ট আনেন না। তাঁরা চিকিৎসককে প্রশ্ন করেন এবং তার জ্ঞান যাচাই করতে চান। এটি কিন্তু খুবই ভুল অনুশীলন। কারণ একজন চিকিৎসক রোগীর আগের কাগজ বা পরীক্ষার ফলাফল দেখলেই কেবল বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে পারবেন। এগুলো রোগীর ভবিষ্যৎ চিকিৎসা-পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।

তাই চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক হতে হবে আস্থা এবং বিশ্বাসের। রোগীকে বিশ্বাস রাখতে হবে চিকিৎসকের প্রতি, আবার চিকিৎসককেও রোগীর প্রতি আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

প্রায়ই দেখা যায় রোগীকে ফলোআপের জন্য আসতে বলা হলেও তারা সময়মতো আসেন না, সামান্য আরোগ্য বোধ করলেই পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। অথচ পরে অনেক সময় খারাপ কিছু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তাই চিকিৎসক প্রথমবার দেখার পর পরবর্তী যেদিন ফলোআপে আসতে বলেন, তখন আসা দরকার। তাহলে পরবর্তী অনেক জটিলতা রোধ করা যায়।

অন্যদিকে চিকিৎসকের কর্তব্য হলো যেকোনো পরীক্ষা বা অস্ত্রপচারের আগে রোগী বা তার পরিবারকে সঠিকভাবে সম্পূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা; এর সব সুবিধা-অসুবিধা, পরবর্তী জটিলতা, সব ধরনের ঝুঁকি সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলা এবং পূর্ণ সম্মতি নেওয়া।

জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল ( জেসিআই) রোগীর নিরাপত্তা নিয়ে সারা বিশ্বে কাজ করে। এ কমিশনে রোগীর অধিকার ও পরামর্শের (কাউন্সিলের) বিষয়টিও প্রাধান্য পায়। জেসিআই মনোনীত হাসপাতালগুলোকে তাদের কথা মেনে চলতে হয়। এতে চিকিৎসক-রোগীর সুসম্পর্ক হয়। তাই রোগের সঠিক চিকিৎসার জন্য ওষুধ ও পরীক্ষার পাশাপাশি পারস্পরিক সুসম্পর্ক, আস্থা, বিশ্বাস ও খোলামেলা সম্পর্ক অতি জরুরি। তাহলেই আমাদের সঠিক লক্ষ্য অর্জিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *