চিকেন পক্স চারি দিকে=কুসংস্কারে কান দেবেন না

images11প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ

আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় সর্দি-কাশি, জ্বরসহ নানারকম রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। এই সময়ে চিকেন পক্স বা জলবসন্ত রোগের প্রকোপ কিছুটা বাড়ে। এই চিকেন পক্স নিয়ে নানা রকমের কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। কবিরাজী চিকিৎসা, ঝাঁঁড়-ফুঁক, পানি-পড়া ইত্যাদি নানা অপচিকিৎসা এবং রোগটি সম্পর্কে বিভিন্ন ভুল ধারণা কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবন সংকট হয়ে যায় রোগির। তাই কুসংস্কারে কান দেওয়ার আগে জেনে নিন চিকেন পক্স সম্পর্ক বিস্তারিত।

প্রশ্ন: বসন্ত রোগ কী?

উত্তর: বসন্ত রোগ বলতে আমরা সেই রোগটিকেই বুঝি, ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় চিকেন পক্স। একে অনেকে জলবসন্তও বলেন। আর এক ধরনের পক্স আগে হতো। সেটা হল স্মল পক্স বা গুটিবসন্ত। এটা এখন আর হয় না।

প্রশ্ন: বসন্তকালে কি এই রোগের প্রকোপ বাড়ে?

উত্তর: শুধু বসন্তকালে নয়, বছরের যেকোনো সময়েই এই রোগ হতে পারে। তবে বছরের প্রথম ৬ মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

প্রশ্ন: চিকেন পক্স কেন হয়?

উত্তর: ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই এটিও একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। ভ্যারিসেলা জস্টার (ভি-জেড ভাইরাস) নামে এক ধরনের ভাইরাসের জন্য এই রোগ হয়। অনুকূল আবহাওয়া পেলেই এই ভাইরাস সক্রিয় হয় ওঠে।

প্রশ্ন: চিকেন পক্সে আক্রান্ত হলে কী হয়?

উত্তর: প্রাথমিক ভাবে জ্বর হবে। পরের ২-৩ দিনের মধ্যে জ্বরের মাত্রা বাড়বে। তার সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা হবে। ২-৩ দিন পর থেকে শরীরে র‌্যাশ বের হবে। র‌্যাশ যখন বের হয়, তখন চুলকানির অনুভব হবে। প্রথমে শরীরের মধ্য অংশের সামনের দিকে (বুক বা পেটে), পরে মুখমণ্ডলে র‌্যাশ বের হয়। পরে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পরে। মুখগহ্বর এবং গলার মিউকাস আবরণীতেও র‌্যাশ বের হয়। ৫-৭ দিন পর্যন্ত র‌্যাশ বের হয়। সেটা ধীরে ধীরে জলভরা ফোস্কার মতো আকার নেয়। পরে ফোস্কার ভিতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়। ৭-১০ দিন পর থেকে তা শুকোতে থাকে। শুকিয়ে যাওয়ার পরে র‌্যাশ থেকে খোসা উঠতে শুরু করে। চিকেন পক্সে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পরে।

প্রশ্ন: এই রোগটি কীভাবে ছড়ায়?

উত্তর: এটি খুব ছোঁয়াচে রোগ। এই কারণে খুব সহজে এবং দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ মানুষের দেহে তা ছড়িয়ে পরে। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা থুতুর সঙ্গে ভাইরাস ছড়ায়। এমনকি, রোগীর সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে। তা ছাড়া, ফোস্কার মধ্যে যে রস থাকে তার মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। ওই রস সুস্থ ব্যক্তির শরীরে লাগলে রোগ হতে পারে। তবে ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। শরীরে ঢোকার ১৪-২১ দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে।

প্রশ্ন: আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে কত দিন অবধি রোগটি ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে?

উত্তর: যত দিন র‌্যাশ বের হয় তত দিন তো বটেই, র‌্যাশ বের হওয়া বন্ধ হওয়ার পরেও দিন সাতেক পর্যন্ত এক জন আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে রোগটির সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

প্রশ্ন: কোন বয়সের মানুষের মধ্যে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে?

উত্তর: এটা নির্ভর করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরে। সব বয়সের মানুষের মধ্যেই এই ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তবে ১-১৪ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে।

লক্ষন ও উপসর্গ:
১. চুলকানিযুক্ত ছোট ছোট গোটা বা র‌্যাশ যেটা সাধারণত মুখমণ্ডলে কিংবা গলা থেকে পা পর্যন্ত অর্থাৎ ধর-এ জন্মায়।
২. শুরুতে এগুলো ছোট এবং লালচে হয়, তারপর সেগুলো স্বচ্ছ এবং তরল-পূর্ণ ফোস্কার মতো হযে ওঠে। এবং শেষ পর্যায়ে এগুলো ফেটে যায় এবং ত্বকে দাগ থেকে যায়। এই র‌্যাশগুলো সাধারণত সাত থেকে দশ দিন স্হায়ী হয়।
৩. মাঝে মধ্যে মুখে, চোখের চারপাশে কিংবা যোনীতে বেদনাদায়ক ফোস্কাগুলো দেখা যায়।
৪. হালকা জ্বর হয়।

কি করা উচিতঃ-
১. ব্যথা নিরাময়ের জন্যে এসিটামিনোফেন দিন। (তবে ১২ বছর বয়সের নিচে কোন শিশুর যদি চিকেন পক্স, ইনফুয়েঞ্জা, কিংবা অন্যান্য কোন রোগ রয়েছে, এবং সেটা ভাইরাস বাহিত বলে আপনি মনে করেন সেেেত্র তাকে কোনভাবেই এ্যাসপিরিন দেবেন না।)
২. যদি আপনার শিশু ডাইপার পরিধান করে, সেেেত্র যতোণ সম্ভব তার ডাইপার খুলে রাখুন, অন্তত পে যতদিন না ফোস্কাগুলো শুকিয়ে না যাচ্ছে ততদিন।
৩. আপনার শিশু যেন যথেষ্ট বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে এবং প্রচুর পরিমাণ পানীয় পান করতে পারে সেদিকে ল্য রাখুন।
৪. চুলকানির তাগিদ রোধে ক্যালামাইন লোশন তার গায়ে লাগাতে পারেন, এবং নিমপাতার জল দিয়ে গোসল করাতে পারেন, কিংবা যব, বেকিং সোডা এবং চুলকানি-নাশক কোন স্নানের পাউডার পানিতে মিশিয়ে আপনার শিশুকে গেসল করালেও উপকার পেতে পারেন।
৫. ত্বকে সংক্রমণ রোধের জন্যে: আপনার শিশুর ত্বক, কাপড় চোপড় এবং বিছানার চাদর পরিস্কার রাখুন।
৬. আপনার শিশু যেন ফুস্কুরিগুলোতে আচর কাটতে না পারে সে জন্যে তার নখ কেটে দিন কিংবা তাকে হাত মোজা পড়িয়ে দিন।index222

কখন ডাক্তার দেখাবেনঃ-
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা-চিকেন পক্্র এর খুব ভালো চিকিৎসা আছে।

♣১. যদি চিকেন পক্স্রের সাথে আপনার শিশুর মধ্যে তন্দ্রালু হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখেন, কিংবা সে যদি একসাথে একই বস্তুর দুটো প্রতিচ্ছবি দেখতে শুরু করে, যদি আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, তার চোখে যদি ব্যথা থাকে, যদি ঠিক মতো শুনতে না পারে, কথা বলা রহিত হয়, তার ঘাঢ় কিংবা পিঠ শক্ত হয়ে ওঠে, কিংবা যদি তীব্র কাশি থাকে, সেেেত্র এগুলো মস্কিষ্কের প্রদাহ বা তীব্র এনসেফালিটিস-এর লণ হতে পারে।

♣২. যদি তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, সেেেত্র এটা হয়তো তার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার লণ, এটা একটা জটিল সমস্যা (মাঝে মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, শিশুদের মধ্যে এই রোগের তেমন প্রাদুর্ভাব নেই, থাকলেও দুর্লভ)।

♣৩. যদি আপনার শিশুর শরীরের এই র‌্যাশগুলো ক্রমে আরও লাল হয়ে ওঠে, ফুলে ওঠে এবং নরম হয়ে ওঠে, যদি এগুলো থেকে হলদেটে পদার্থ নিসৃত হয়।

♣৪. যদি চিকেন পক্সের সাথে সাথে আপনার শিশুর গায়ে ১০২ ডিগ্রীর বেশি জ্বর তিন চারদিনের জন্যে থাকে, সেেেত্র এটা স্ট্রেপ ইনফেকশন রোগের লণ হতে পারে।
কিভাবে প্রতিরোধ করবেনঃ-হোমিওপ্যাথিতে এ রোগের প্রতিষোধক ওষুধ আছে.এখনই আপনার সন্তানকে প্রতিষোধক ওষুধ খাওয়ালে এ রোগ হবে না।

১. ১৩ মাসের বেশি বয়সের সব শিশুর জন্যেই চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন রয়েছে, এবং এর সাথে রোগ প্রতিরোধ মতা বর্ধনের ল্েয অন্যান্য টিকাও নেয়া যেতে পারে। ১৩ মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্যে একটা ইঞ্জেকশান দিলেই চিকেন পক্স থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে ১৩ মাসের বড় যে কারোর জন্যেই চার থেকে আট সপ্তাহর ব্যবধানে দুই বার এই ইঞ্জেকশান নেয়া প্রয়োজন।

প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর

01711-943435 ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ইমেইল-dr.zaman.polash@gmail.com

ওয়েব সাইটwww.zamanhomeo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *