জরায়ু টিউমার এবং প্রেসক্রিপশান

625441_570364346315944_1401795330_n

 প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ

অনেক সময় জরায়ু গাত্রে বা জরায়ু গহ্বরে নানা প্রকার টিউমার সৃষ্টি হতে পারে। এর আকার মটরকলাই হতে আধ মণ পর্যন্ত এবং সংখ্যায় এক থেকে ৫০টি পর্যন্ত হতে পারে। কোনো কোনো টিউমার থেকে পুঁজ-রক্ত বের হতে পারে। আবার কোনোটি থেকে এই জাতীয় স্রাব নাও হতে পারে। এই জাতীয় অর্বুদকে Fibroma or Myoma বলে।

কারণ : সঠিক কারণ জানা যায় নেই। তবে নিচের কারণগুলো অনেক ক্ষেত্রেই এটি সৃষ্টির জন্য দায়ী। যেমন : যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে ৩০-৪৫ বছরের মধ্যে বেশি হয়।

বন্ধ্যা, এক সন্তানবিশিষ্টদের বেশি হয়। জরায়ু পেশির উপর অনবরত চাপ পড়া, জোর পড়া।1460185_470827096360135_1363171320_n

বংশগত কারণ। হাইপার অসট্রিনিজম। সাধারণত ফ্রাইব্রাস টিস্যু এবং অনেকটা মাসকিউলার টিস্যুর মিলনে এটি সৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে পেশির টিস্যুই প্রধান।

লক্ষণ : বহুদিন স্থায়ী ঋতু, পেট কেটে ফেলার মতো বেদনা, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, কটা বর্ণের প্রদর স্রাব। দুর্বলতা, উৎকণ্ঠা, শীর্ণতা, তৎসহ যথেষ্ট ক্ষুধা ও পিপাসা। জরায়ুতে জ্বারাকর বেদনা, পেট ফাঁপা, মূত্র রোধ। প্রচুর পরিমাণে বহুদিন স্থায়ী ঋতুস্রাব। ফুসকুফির মতো টিউমার, সঙ্গমকালে বেদনা। অত্যধিক শিরা স্ফীতি। ঋতুর আগে ও পরে প্রচুর কালো দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব।

চিকিৎসা- অপারেশান ছাড়া হোমিওপ্যাথি মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব হয়।

 হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

Aloe Socotrina যোনিদ্বার দিয়ে কিছু ঠেলে বেড়িয়ে আসার ন্যায় অনুভুতি, দাঁড়িয়ে থাকলে ও মাসিক ঋতুস্রাব চলাকালিন অবস্থায় বৃদ্ধি। জরায়ুতে ভারবোধ এবং এই কারনে বেশী হাঁটতে পারে না। কোমরে প্রসব বেদনার ন্যায় বেদনা, বেদনা নীচের দিকে পা পর্যন্ত প্রসারিত হয়।

Argentum Metallicum – ডিম্বাশয় বড়ো হয়েছে বলে মনে হয়। নীচের দিকে ঠেলা মারার মত বেদনা। জরায়ুর স্থানচ্যুতি। ক্ষয়প্রাপ্ত এবং স্পঞ্জের মত সারভিক্স। জরায়ুর রোগ তৎসহ সন্ধিস্থানে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বেদনা।

Aurum Metallicum – নিজেকে তিরস্কার করার প্রবণতা ও নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করে। তীব্র নৈরাশ্য, জীবনে বিতৃষ্ণা এবং অত্মহত্যার ইচ্ছা সহ যোনি নালী অত্যধিক অনুভুতি প্রবণ। জরায়ুর বিবৃদ্ধি ও স্থানচ্যুতি। বন্ধ্যাত। যোনিনালীর আক্ষেপ।

Aurum Mur Nat – জরায়ু গ্রীবার কঠিনতা। যুবতী মেয়েদের হৃদকম্প। পেটের ভিতর শীতল অনুভুতি। জরায়ুর পুরাতন প্রদাহ ও স্থানচ্যুতি। মনে হয় জরায়ু সমগ্র বস্থিকোঠর জুড়ে রয়েছে। জরায়ুর অল্প বিবৃদ্ধি। ডিম্বাশয়ের কঠিনতা।

Calcarea Carbonica – ক্যাল্কেরিয়া কার্বের প্রধান কাজ হল, শারীরিক যন্ত্রসমূহের কার্যপদ্ধতির উপর। পিটুইট্যারি ও থাইরয়েড গ্রন্থির ক্রিয়া বৈকল্য। ক্যাল্কেরিয়ার রোগী মেদযুক্ত, ফর্সা, থল থলে চেহারা যুক্ত এবং ঘামযুক্ত ও ঠাণ্ডা আদ্র, এবং অম্লগন্ধযুক্ত। ক্যাল্কেরিয়ার রোগিণীর জরায়ু খুব সহজেই স্থানচ্যুত হয়ে থাকে।

Calcarea Silicata – যে সকল উপসর্গ ধীরে প্রকাশ পায় এবং দীর্ঘ সময় পরে যাদের পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে, সেই সকল উপসর্গের ক্ষেত্রে একটি গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী কার্যকরী ঔষধ। জলীয় আবহাওয়ায় ও জলা জায়গায় থাকার ফলে যারা রোগ গ্রস্থ হয় এই ধাতুগ্রস্থ রোগিণীর জরায়ুতে ভারী বোধ, জরায়ুর স্থানচ্যুতি, প্রদর স্রাব, যন্ত্রণাদায়ক ও অনিয়মিত মাসিক ঋতুস্রাব। দুই ঋতুর মধ্যবর্তী সময়ে ঋতুস্রাব।

Erigeron Laptilon Canadense – জরায়ু থেকে রক্তস্রাব, তৎসহ সরলান্ত্র ও প্রস্রাবথলির তীব্র উপদাহ এবং জরায়ুর স্থানচ্যুতি।

Fraxinas Americana – জরায়ুর বিবৃদ্ধি (Hyper trophy), জরায়ুর স্থানচ্যুতি (Displacement), প্রসবের পর জরায়ুর আকার ঠিক স্বাভাবিক অবস্থায় পরিণত না হওয়া (Subinvolution), জরায়ু সম্মুখদিকে বাঁকিয়া আসা (Anteversion), জরায়ু পশ্চাৎদিকে বাঁকিয়া বা ঘুরিয়া যাওয়া (Retroversion), জরায়ুর বহিনির্গমন (Prolapsus), জরায়ুর টিউমার, বাধক, মেট্রাইটিস প্রভৃতি স্ত্রীলোকের কতকগুলি জরায়ু সম্বন্ধীয় পীড়ায় এবং পায়ের তলায় খিলধরায় ইহা উপকারী।

Ferrum Iod – সামান্য পরিমাণ আহারেও পেট পূর্ণ হইয়া উঠে, যেন কত অধিক আহার করা হইয়াছে , আহারীয় বস্তু উপরদিকে গলায় ঠেলিয়া উঠে, তাহাতে বোধ হয় যেন কিছুই পাকস্থলীর মধ্যে প্রবেশ করে নাই তৎসহ জরায়ুর পশ্চাৎ-বক্রতা (Retroversion), সিদ্ধ মণ্ডের মত একপ্রকার শ্বেত-প্রদর স্রাব, মলত্যাগের সময় দড়ি কিম্বা তারের মত এক প্রকার লম্বা সাদা স্রাব যোনি দিয়ে নির্গমন। সর্বদাই বোধ হয় যেন তলপেট হইতে কোন পদার্থ যোনিদ্বার দিয়া বাহির হইয়া আসিতেছে।

Ferrum Bromatum – জরায়ু বাহির হইয়া পড়ে, প্রসবের পর প্রলাপ্সস, চটচটে শ্বেতপ্রদর স্রাব, স্রাবে হাজিয়া যায়। প্রস্রাব ত্যাগ কালে জ্বালা, কোঁথানিসহ আমরক্ত, স্পারম্মাটরিয়া।

Helonias Chamaelirium – ত্রিকাস্থি ও বস্থিকোটর স্থানে দুর্বলতা, টেনে ধরার মত অনুভুতি ও ভারিবোধ, তৎসহ প্রচণ্ড অবসন্নতা ও ক্লান্তিভাব। যারা অলসভাবে ও বিলাসিতার মধ্যে জীবন কাটিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে অথবা যে সকল স্ত্রীলোক কঠোর পরিশ্রম করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত পেশীসমূহের জ্বলন এবং কনকনানি ও অনিদ্রা। তাদের জরায়ুর স্থানচ্যুতি, বিশেষ করে গর্ভস্রাবের পর। যোনিকপাটে চুলকানি। গর্ভস্রাবের পর পিঠের বেদনা। জরায়ুতে ভারী বোধ ও টাটানি ব্যথা।

Hydrophobinum – মুলতঃ স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে, অস্থিসমূহের ভিতর কনকনানি। অস্বাভাবিক কামোত্তেজনা থেকে উদ্ভুত উপসর্গসমূহ। জরায়ুর স্পর্শকাতরতা, জরায়ুর স্থায়িত্ব সম্পর্কিত অনুভুতি। স্থানচ্যুতির ন্যায় অনুভুতি। যোনিপথ অনুভুতি প্রবণ, সঙ্গম বেদনাদায়ক। জরায়ুর স্থানচ্যুতি।

Lappa Arctium – চর্মরোগ চিকিৎসায় এটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ বিশেষ। জরায়ুর মধ্যে তীব্র ক্ষতবৎ থেৎলিয়ে জাবার মত অনুভুতি। জরায়ুর স্থানচ্যুতি। তৎসহ যোনিদেশের তন্তুসমূহের শিথিলতা, বস্থিকোটরের সকল যন্ত্রসমূহের স্থিতিপকতার অভাব। এই সকল লক্ষণ সমূহ দাঁড়িয়ে থাকলে, হাঁটা-চলা করার সময়ে, চলার সময় সঠিকভাবে পা না ফেললে অথবা আকস্মিক ঝাঁকুনিতে বৃধি হয়।

Lilium Tigrinum – বস্থিকোটরের যন্ত্রাদির উপর এই ঔষধের শক্তিশালী কাজের পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের আগে, অপ্ল, কালচে জমাট বাঁধা, দুর্গন্ধযুক্ত। কেবলমাত্র ঘুরে বেড়াবার সময় স্রাব হয়। নীচের দিকে কিছু ঠেলে বেরিয়ে আসার মত অনুভুতি তৎসহ দ্রুত মলত্যাগের বেগ, মনে হয় যেন সমস্ত যন্ত্রগুলি বেরিয়ে আসবে। বিস্রামকালে সবকিছু শান্ত থাকে। জরায়ু রক্তাধিক্য, স্থানচ্যুতি এবং জরায়ু ঘুরে যাওয়া। অবিরাম জননেন্দ্রিয়ের বাইরের অংশ চেপে ধরে থাকার স্পৃহা।

Mel Cum Sale – জরায়ুর স্থানচ্যুতি ও জরায়ুর পুরাতন প্রদাহ বিশেষতঃ যে সকল ক্ষেত্রে একই সঙ্গে জরায়ুর সামান্য বিবৃদ্ধি ও জরায়ুর গ্রীবার প্রদাহ সংশ্লিষ্ট থাকে। এই ঔষধটি নির্বাচনের বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ লক্ষণটি হল, তলপেটের নিম্নাংশ থেকে আড়াআড়ি ভাবে, একদিকের ইলিয়াম থেকে অপর ইলিয়াম পর্যন্ত টাটানি ব্যথা। জরায়ুর স্থানচ্যুতি এবং জরায়ু প্রদাহের প্রারম্ভে। প্রস্রাব থলি অধিক পূর্ণ, এই জাতীয় অনুভুতি। ত্রিকাস্থি স্থান হইতে বস্থিদেশ পর্যন্ত বেদনা। মুত্র ভানালি বা ইউরেটারের ভিতরে বেদনা।

Palladium – প্যালেডিয়াম ডিম্বাশয়ের একটি ঔষধ বিশেষ , ঔষধটি পুরাতন ডিম্বাশয়ের লক্ষণ সমষ্টি সৃষ্টি করে। জরায়ুর স্থানচ্যুতি ও জরায়ু পিচনের দিকে ঘুরে যায়। বস্থিকোটরীয় অন্ত্রাবর ঝিল্লির নাতি প্রবল প্রদাহ, তৎসহ ডানদিকের বেদনা ও পিঠের বেদনা; অতিরজঃ। জরায়ুতে কেটে ফেলার মত বেদনা, মল ত্যাগের পরে উপশম। ডানদিকের ডিম্বাশয়ের স্থানে স্ফীতি ও বেদনা।

Podophyllum – পিত্তাধিক্যযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ঔষধটি বিশেষভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। জরায়ু ও ডানদিকের ডিম্বাশয়ে বেদনা তৎসহ অন্ত্রের উরধগামি অংশের ভিতর দিয়ে প্রসারিত শব্দ সমূহ। অবরুদ্ধ ঋতুস্রাব, তৎসহ বস্থিকোটরের কোঁথ। জরায়ুর স্থানচ্যুতি, বিশেষ করে প্রসবের পর । গর্ভাবস্থায় অর্শ ও মলদ্বারের স্থানচ্যুতি।

Rhus Toxicodendron – অতিরিক্ত বেগ বা কোঁথানির নিমিত্ত, কিম্বা কোনও ভারী দ্রব উত্তোলন করিয়া জরায়ুর বহিনির্গমন। ডাঃ মিলটন বলেন ঠাণ্ডা লাগিয়া কিম্বা জলে ভিজিয়া অর্থাৎ শৈত্যে , স্ত্রীলোকদের জরায়ু সম্বন্ধীয় যে কোন পীড়া হউক না কেন রাসটক্স উপকারী।

Stannum – ঔষধটি স্নায়ুমণ্ডল ও শ্বাসযন্ত্রের উপর বিশেষ কাজ করে। নীচের দিকে ঠেলামারা বেদনা। জরায়ু নির্গমন তৎসহ পাকস্থলীতে দুর্বলতা, নিমগ্রতাবোধ। ঋতুস্রাব অগ্রবর্তী ও প্রচুর। যোনিপথে বেদনা, উপরের দিকে এবং পিঠ হতে মেরুদণ্ড পর্যন্ত। প্রদ্রস্রাব তৎসহ অত্যন্ত দুর্বলতা।

Trillium Endulum – এই ঔষধটি সাধারণত রক্ত স্রাবের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। জরায়ু হইতে রক্তস্রাব তৎসহ কটিদেশ ও পিঠ যেন ভেঙ্গে চূর্ণ হচ্ছে এমন অনুভুতি, শক্ত করে বেধে রাখলে উপশম। সামান্য নড়াচড়ায় উজ্জল রক্ত সবেগে নির্গত হয়। সৌত্রিক অর্বুদ হতে রক্তস্রাব। প্রসব বেদনার ন্যায় বেদনাসহ জরায়ু বের হয়ে পড়ে।

সতর্কতাঃ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাবেন না।

                                      প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435 //01670908547
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ–https://zamanhomeo.com/blog

Face Book page : ( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *