ডলারের আসন্ন পতন এবং আমেরিকা পুরোপুরি দেউলিয়া হইয়া যাইবে

ইদানীং আমেরিকার বিবেকবান এবং গণহিতাকাঙখী অর্থনীতিবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা তাদের জনগণকে প্রতিনিয়ত সতর্ক করিতেছেন যে, হয়ত দু’চার মাসের মধ্যেই আমেরিকা পুরোপুরি দেউলিয়া হইয়া যাইবে । ডলারের কোন মূল্যই থাকিবে না, অন্যান্য ফালতু কাগজের মতোই একেবারে মূল্যহীন হইয়া পড়িবে । তখন ব্যাংকসমূহ, শেয়ার বাজারসমূহ এবং কলকারখানাসমূহ একেবারে জনমের মতো বন্ধ হইয়া যাইবে । আর কখন খুলিবে না । ঘরে এবং ব্যাংকে জমানো ডলার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদি সব মূল্যহীন হইয়া পড়িবে । মানুষ দেখিতে পাইবে তাহাদের সারাজীবনের সঞ্চয় এক নিমিষে উধাও হইয়া গিয়াছে । তারপর দেখা দিবে বেকারত্ব-অভাব-অনটন-অনাহার-দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি । তখন উত্তেজিত জনতা রাস্তায় নামিয়া ভাংচুর-জ্বালাও-পোড়াও শুরু করিবে । তারপর মার্শাল ল জারি করা হইবে, দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ । তারপর শুরু হইবে গৃহযুদ্ধ অথবা রক্তাক্ত বিপ্লব । তারপর সম্ভবত আমেরিকা টুকরা টুকরা হইয়া যাইবে যেমন হইয়াছিল সৌভিয়েত ইউনিয়ন । এই সকল বিশেষজ্ঞদের মতে, আসন্ন এই ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন বিভীষিকাময় ভবিষ্যতের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে শহর ত্যাগ করিয়া এই মুহূর্তেই গ্রামে চলিয়া যাওয়া উচিত । কেননা শহরের লোকেরা তাদের খাদ্য-বস্ত্র-পানীয়-জ্বালানি-যাতায়াত ইত্যাদি সকল ব্যাপারে সরকারের উপর নির্ভরশীল হইয়া থাকে । আর কোন দেউলিয়া সরকারের পক্ষেই কোটি কোটি শহরবাসীকে খাবার-পানি-জ্বালানি সরবরাহ করা সম্ভব নয় । কাজেই এই পরিস্থিতিতে শহরে বসবাস করিলে হয় না খাইয়া অথবা গুলি খাইয়া মরিতে হইবে । কেননা কাপড় না থাকিলে উলঙ্গ হইয়াও জীবন বাঁচানো যায়, জ্বালানি না থাকিলে রান্নাবিহীন খাবার খাইয়াও জীবন বাঁচানো যায়, আলো না থাকিলে অন্ধকারে থাকিয়াও জীবন বাঁচানো যায়, গাড়ি-ঘোড়া না থাকিলে পায়ে হাঁটিয়াও জীবন বাঁচানো যায় ; কিন্তু খাবার-পানি না থাকিলে জীবন বাঁচানো যায় না । কাজেই এই মুহূর্ত থেকেই গ্রামে বসবাস এবং নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদনের চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করা উচিত । ডলারের পতনের পর আমেরিকার যেই অবস্থা হইবে একই অবস্থা হইবে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের । কারণ প্রতিটি দেশেই রহিয়াছে একই ধরনের অর্থব্যবস্থা বা মুদ্রা ব্যবস্থা অর্থাৎ কাগজের মুদ্রা ।
তাছাড়া প্রতিটি দেশই কোন না কোন ভাবে অন্যান্য দেশের উপর নির্ভরশীল । অর্থনৈতিক পতনের সাথে সাথে সরকারেরও পতন হইবে অথবা সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমিয়া যাইবে । ফলে বিদ্রোহ-বিপ্লব-অরাজকতা-হানাহানি-গণহত্যা-দুভিক্ষ ইত্যাদি শুরু হইবে । লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের সরকারী বেসরকারী চাকরি হারাইবে । পূর্বে যাহারা কোটি টাকা মূল্যের মার্সিডিজ চড়িতেন, তখন তাহারা পরের বেলার খাবার কোথা হইতে আসিবে তাহা নিয়া দুঃশ্চিন্তায় থাকিবেন । বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভয়ঙ্কর সময়ে পৃথিবীর পাঁচটি স্থানে বসবাস করা সবচেয়ে বিপজ্জনক হইবে – ইসরাঈল, ইংল্যাণ্ড, নিউ ইয়র্ক, লস এনজেলস এবং ওয়াশিংটন । আসন্ন এই বিভীষিকাময় দুর্যোগ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগণ যাহা বলেন, তাহা শুনিলে রক্ত হিম হইয়া আসে । আর তাহারা এমন সব অর্থনীতিবিদ যাহারা গত দশ বছর পূর্বে আমেরিকার এবং বিশ্বের অর্থনীতি সম্পর্কে যত ভবিষ্যৎবাণী করিয়াছেন, তাহার সবই সত্য প্রমাণিত হইয়াছে । আরেকটি কথা হলো, যুদ্ধ-গৃহযুদ্ধ-বিশ্বযুদ্ধ-রক্তাক্ত বিপ্লব ইত্যাদি সকল অপকর্মের মূল টাগের্ট থাকে শহরগুলি । সাধারণত শক্রপক্ষকে বিনাশ করিবার জন্য প্রতিপক্ষের লোকেরা শহরের খাবার পানি বিদ্যুৎ জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ বন্ধ করিয়া দিয়া থাকে । আর শহরে যেহেতু চাষাবাদ বা ফসল ফলানোর কোন ব্যবস্থা থাকে না, কাজেই এইসব অবরোধের সময় তাহাদেরকে অনাহারে ধুকিয়া ধুকিয়া মরা ছাড়া গত্যন্তর থাকিবে না । একটি কথা আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখিতে হইবে যে, ইহুদী-খ্রীষ্টানদের তৈরী করা বতর্মান সভ্যতার সুযোগ-সুবিধা যেহেতু শহরবাসীরাই বেশী ভোগ করিয়াছে, কাজেই এই অভিশপ্ত সভ্যতার শাস্তিও শহরবাসীদেরকেই বেশী ভোগ করিতে হইবে । এই সকল আমেরিকান বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন এলাকায় গিয়া বসবাস করা উচিত যেখানে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় এবং টর্নেডো-ঘুর্নিঝড় কম হয় । কেননা ভবিষ্যতে জমিতে মেশিন দিয়া সেচ দেওয়ার মতো অবস্থা না থাকিবার সম্ভাবনাই বেশী । সর্বোপরি বন্যা-খরা-তুষারপাত-জলোচ্ছাস-ভুমিকম্প-ফসলে পোকার আক্রমণ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে থাকিবে । কোন কোন অর্থনীতিবিদ মনে করেন, একক মুদ্রা হিসাবে ডলারের পতনের পরে জাতিসংঘ এবং বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে নতুন আরেকটি আর্ন্তজাতিক মুদ্রা চালু হইবে । কিন্তু এতে কোন সুফল আসিবে বলিয়া তাহারা নিজেরাও বিশ্বাস করেন না । নিশ্চিতভাবেই দেশে দেশে পুণরায় স্বর্ণমুদ্রা চালু হইবে । কেননা ইদানীং চীন-ভারত-জাপান-জার্মান ইত্যাদি নেতৃস্থানীয় সকল দেশই ডলারের পরিবর্তে তাহাদের সোনার মুজত বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিয়াছে ।
সম্প্রতি চীনা সরকার সেদেশের জনগণকে বেশী বেশী স্বর্ণ ক্রয় করিবার আহবান জানাইয়াছে । ইহুদী-খ্রীষ্ঠানরা স্বর্ণমুদ্রার ব্যবহার বন্ধ করিয়া কাগজের মুদ্রা চালু করিয়া মানবজাতির সাথে যেই ধোঁকাবাজি করিয়াছে, তাহা অনন্তকাল ধরিয়া চলিতে পারে না । আর এই প্রতারণামূলক কাগজের মুদ্রা ব্যবস্থার ভয়ংকর কুফল পাশ্চাত্যের সাথে সাথে প্রাচ্যর লোকদেরকেও ভোগ করিতে হইবে । ইদানীং আমেরিকান এবং ইউরোপীয়ান ইহুদী ধনকুবেরগণ হাজার হাজার টন সোনা কিনে গোডাউন ভর্তি করিতেছে আর অন্যদেরকে বলিতেছে যে, স্বর্ণের দাম কমিয়া যাইবে, সোনা কিনিয়া কোন লাভ নাই । কিন্তু ইহুদীদের প্রতারণা সম্পর্কে অভিজ্ঞ লোকদের পরামর্শ হইল, ইহুদীরা কি করে তাহা লক্ষ্য করুন, কি বলে তাহা বিশ্বাস করিবেন না । অর্থনীতিবিদগণের মতে, ডলারের পতন মানবজাতির ইতিহাসে এমন একটি ভয়াবহ ঘটনা হইবে, যাহা পৃথিবীর সকল দেশের সকল মানুষকে কম-বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করিবে । পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে অর্থনৈতিক পতন-বেকারত্ব-দুর্ভিক্ষ-অরাজকতা-যুদ্ধ-গৃহযুদ্ধ-বিদ্রোহ ছড়াইয়া পড়িবে । কেননা পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি আমেরিকা তখন নিজের গৃহযুদ্ধ সামাল দিতে ব্যস্ত থাকিবে । সারা দুনিয়ার নিরাপত্তা-শৃঙখলা নিয়ে চিন্তা করা সময় বা শক্তি আমেরিকার থাকিবে না । দেশে দেশে এই বিশৃঙখলা অরাজকতার সুযোগে পারমাণবিক অস্ত্র সহ অন্যান্য মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিদ্রোহীদের হাতে চলিয়া যাওয়াও বিচিত্র কিছু নয় । আর সন্ত্রাসীদের গুপ্ত হামলায় ভুল বুঝাবুঝির কারণে একদেশ অন্যদেশকে আক্রমণ করিয়া বসিবে । তাছাড়া প্রখ্যাত রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়া-ইরান ইস্যুতে অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর দখল বজায় রাখার ইস্যুতে পরাশক্তিসমূহ ইতিমধ্যেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জোরেসোরে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করিয়াছে । তাহাতে একদিকে আছে ইউরোপ-আমেরিকা আর অন্যদিকে আছে চীন-রাশিয়া । অধিকন্তু ভারত-পাকিস্তান, চীন-ভারত, চীন-জাপান, আমেরিকা-উত্তর কোরিয়া, ইরান-ইসরাইলের মধ্যে যে-কোন সময় পারমানবিক যুদ্ধ লাগিয়া যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র । একটি বিশ্বখ্যাত গবেষণা সংস্থার মতে, একমাত্র ভারত-পাকিস্তানের পারমানবিক যুদ্ধেই অন্তত দুইশ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে । সে যাক, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে-সব অস্ত্রসস্ত্র ব্যবহৃত হইবে, তাতে মানবসভ্যতার কোন চিহ্ন আর অবশিষ্ট থাকিবে না । অন্যদিকে ইহুদী এবং খ্রীষ্টান ধর্মের পন্ডিতদের মতে, ২০১০ সাল হইতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই সাত বছর হইবে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে অকল্পনীয় মারাত্মক ধংসাত্মক বিভীষিকাপূর্ণ ।

আবার কোরআন-হাদীসেও আখেরী জামানার ভয়াবহ গণহত্যা-ধ্বংসাত্মক চক্রান্ত-ইয়াজুজ মাজুজ দাজ্জালের মহাযুদ্ধের ভীতিকর বর্ণনা বিদ্যমান । এই সাত বছরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরী হইবে এবং তারপর শুরু হইবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ । তখন ইমাম মাহদী (আঃ) আত্মপ্রকাশ করিবেন এবং ঈসা (আঃ) আসমান থেকে নামিয়া আসিবেন । তাহাদের দুইজনের নেতৃত্বে মুসলিম অমুসলিমদের মধ্যে হইবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তথা শেষ মহাযুদ্ধ । তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে আক্ষরিক অর্থেই মানবজাতি ধ্বংস হইয়া যাইবে । তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও যেই অল্প সংখ্যক মানুষ বাঁচিয়া থাকিবে, তাহাদের পক্ষে কৃষিকাজ এবং মৎস শিকার করা ছাড়া আর অন্য কোন পেশা অবশিষ্ট থাকিবে না । কাজেই আমেরিকার স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞগণ তাদের দেশ ও জনগণের কল্যাণে যে-সব পরামর্শ – সদুপদেশ দিতেছেন, তাহা আমাদেরও মানিয়া চলা বুদ্ধিমানের কাজ হইবে । আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন । আমিন !!