ডাউন সিনড্রোম, একটি অভিশাপের নাম

ডাউন সিনড্রোম এই শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। কিন্তু এটা কোন অসুখ বা রোগ নয়। এটি একধরনের জিনগত সমস্যা। আমাদের শরীর লক্ষ লক্ষ কোষের সমন্বয়ে তৈরি। প্রতিটি কোষে ৪৬ টি ক্রোমোজোম থাকে। আমাদের শরীরের বা বুদ্ধির বিকাশ এই ক্রোমোজোমে থাকা ডি. এন. এ এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। যখন মানব কোষে অতিরিক্ত আর একটি ক্রোমোজোমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তখন সেই অবস্থাকেই ডাউন সিনড্রোম বলা হয়। অর্থাৎডাউন সিনড্রোমের ফলে মানব শরীরের প্রতিটি কোষে ৪৬ টির পরিবর্তে ৪৭ টি ক্রোমোজোম থাকে। ডাক্তার জন লঙডন ডাউন প্রথম এই ধরনের জিনগত সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। এজন্য তার নাম অনুসারে এই জিনেটিক ডিস অর্ডার ডাউন সিনড্রোম নামে পরিচিত হয়। ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের ২১তম ক্রোমোজোমটির একটি অতিরিক্ত কপি থাকে, এজন্য ডাউন সিনড্রোমকে কখনও কখনও ট্রাইসোমি ২১ বলা হয়। যদিও আমরা এখন জানি ঠিক কিভাবে মানুষ ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়। কিন্তু কেন ঘটে এই জিনগত সমস্যা তা আজও বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা। তবে সব বয়সের বা সব জাতির পিতামাতা থেকে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর জন্ম হতে পারে। এতে তাদের কোন দোষ নেই। এই জিনগত সমস্যার না আছে কোন প্রতিকার বা প্রতিষেধক। তবে জন্মের আগেই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা সম্ভব যে গর্ভস্থ শিশুটি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত কিনা।

সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৭০০-৯০০ শিশুর মধ্যে অন্তত একজন এই সমস্যা নিয়ে জন্মায়। যদিও অস্ট্রেলিয়াতে এর হার যথেষ্ট কম। এটি যে নতুন কোন সমস্যা নয় ইতিহাস ঘাঁটলে তা বোঝা যায়।

ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের লক্ষণ হল

১. আক্রান্ত শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
২. এদের বুদ্ধি সাধারণ শিশুদের তুলনায় অনেক কম থাকে এবং আই কিউ লেভেল অনেক কম থাকে।
৩. অনেক ক্ষেত্রে উল্টোটাও ঘটে অর্থাৎ এরা অনেক জিনিয়াস ও হতে পারে।
৪. ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ২ জন শিশুর পরস্পরের মধ্যে আচার-আচরনের বা বুদ্ধিমত্তার মিল নাও থাকতে পারে।

ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত মানুষগুলো সমাজের অন্যান্যদের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা হয়। এরা অনেক অনুভূতিশীল হয়। একটু সাহায্য, ভালবাসা বা সহানুভূতি পেলে সমাজের আর পাঁচটা মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারে, করতে পারে মেধা দিয়ে বিশ্ব জয়। তাই এদেরকে অবজ্ঞা অবহেলা করবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *