ডায়াবেটিস রোগীর রোজা

cWcWOcWcW-300x157
ডাঃ এস.জামান পলাশ

রমজান সমাগত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, সিয়াম সাধনার এ মাসটির জন্য। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা এ সময় অনেকটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েন। কেননা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের নির্দিষ্ট সময়ান্তে রক্তের সুগার পরিমাপ করতে হয়। কিন্তু তাদের অনেকের হয়তো জানা নেই, নিয়মমতো ওষুধ সেবন আর আলেমদের অভিমত অনুযায়ী ইনসুলিন নিয়েও রোজার মাসে ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখতে পারেন
একজন রোগী যখন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের কাছে রোজায় তার চিকিৎসার জন্য যান। তখন তার মধ্যে অনেক প্রশ্ন থাকে। প্রথম জিজ্ঞাসা থাকে, আমি তো ডায়াবেটিস রোগী। আমি কি রোজা রাখতে পারব? রোজা রেখে আমি কি ইনসুলিন নিতে পারব? বা রোজা রেখে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে পারব? এ রকম অনেক প্রশ্ন। প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ একজন ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার আগে বিভিন্ন দিক চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। যেমন_ কোন ধরনের ডায়াবেটিস_ টাইপ-১, টাইপ-২?

উচ্চতা অনুযায়ী রোগীর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম না বেশি? রোগী বর্তমানে ডায়াবেটিস কীভাবে কন্ট্রোল করছেন? শুধু খাদ্য বা ব্যায়ামের সাহায্যে, না খাদ্য ব্যায়াম ও ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে? তার ডায়াবেটিস কি অনিয়ন্ত্রিত? কখনও অজ্ঞান বা হাইপোগ্গ্নাইসেমিয়া হয়েছে কি? তাছাড়া ডায়াবেটিসের সঙ্গে কি কোনো জটিল রোগ আছে? (অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, প্যারালাইসিস ইত্যাদি)। মহিলা হলে গর্ভবতী কি-না। অন্য কোনো রোগের জন্য ওষুধ সেবন করেন কি-না? কোনো ধরনের ইনফেকশনে ভুগছেন কি-না? রোগী খুব অল্প বয়সী? না খুব বেশি বয়সী? এসব বিভিন্ন দিক বিচার-বিবেচনা করেই বলা যাবে তার রোজা রাখা যাবে কি যাবে কি-না? তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুব্যবস্থা প্রণয়ন করে রোজা রাখা সম্ভব হয়। ওজন বেশি এমন ডায়াবেটিস রোগীর রোজা একটি সুবর্ণ সুযোগ বলা যেতে পারে। কারণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে শরীরের ওজন কমানো সম্ভব হয়।

কিন্তু যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস অর্থাৎ যাদের বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন অত্যাবশ্যক এবং যারা কিশোর ডায়াবেটিস, যাদের শরীরে গ্গ্নুকোজের মাত্রা ঘন ঘন ওঠানামা করে তাদের রোজা রাখা ঠিক নয়। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হলে, সব সময় একজন গর্ভবতী মায়েরও রোজা রাখা ঠিক নয়। অন্যদিকে একজন টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী বাইরে থেকে যারা ইনসুলিন দেওয়া ছাড়া বেঁচে থাকতে পারেন এমন বা ইনসুলিনের প্রয়োজনও হতে পারে এমন গ্রুপের ডায়াবেটিস রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো সুন্দরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ রোজা রাখতে পারেন। রোজা থেকে দিনের বেলায় অধিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করা উচিত। এতে হাইপোগ্গ্নাইসেমিয়া হতে পারে।images (4)

ইফতার বা খাবার দেড়-দুই ঘণ্টা পর হাল্কা ব্যায়াম করা যেতে পারে। রোজাতে ওষুধের পরিমাণও কিছু কম লাগতে পারে। যে ওষুধ রোগী দিনে একবার সকালে খেত, তা রোজায় সন্ধ্যায় ইফতারির সঙ্গে খেয়ে নিতে পারেন। তবে ওষুধের পরিমাণ আগের চেয়ে কম লাগতে পারে। যারা ওষুধ দু’বার খান ইফতারি ছাড়া সেহরির সময় একবার খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা ঠিক করা উচিত। রোজা রেখে প্রয়োজনে রক্তে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যেতে পারে, এতে রোজা নষ্ট হয় না। বিজ্ঞ আলেমদের অভিমত ও মিসরীয় ফতোয়া বিভাগ থেকে জানা যায়, ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখা অবস্থায় চামড়ার নিচে ইনসুলিন নিলে রোজা নষ্ট হয় না। একজন ডায়াবেটিস রোজাদারকে ওষুধ সেবন ও খাওয়ার পরিমাণের দিকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়। সবচেয়ে সতর্ক থাকতে হয় যিনি ওষুধ সেবন বা ইনসুলিন নিয়ে চিকিৎসা নেন এবং তার কোনো ধরনের অসুস্থতার লক্ষণ বা হাইপোগ্গ্নাইসেমিয়া হয় কি-না? এ অবস্থা হলে রোগীর বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন_ শরীর কাঁপা, শরীর ঝিমঝিম করা, অস্থির লাগা, মাথা ধরা, মাথাব্যথা হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, গা ঘেমে যাওয়া, কোনো কিছু মনে না পড়া ইত্যাদি। এসব হলে বুঝতে হবে হাইপোগ্গ্নাইসেমিয়া হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে গ্গ্নুকোজের পানি বা হাতের কাছে থাকা খাবার যা পাওয়া যায় তা খেয়ে নেওয়া এবং কাছের হাসপাতালে যাওয়া বা সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। রোজাদার ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ইফতারিতে গল্গুকোজ বা চিনি ও গুড়ের শরবতের পরিবর্তে ডাবের পানি, লেবুর শরবত খাওয়া উচিত। এ ছাড়া শসা, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা ও কামরাঙ্গা ইত্যাদি টক ফল পরিমাণ মতো খেতে পারেন। একজন রোজাদার ডায়াবেটিস রোগীর মোট খাদ্য ক্যালরি ১৩০০ থেকে ১৮০০-এর মধ্যে থাকলে ভালো হয়। এ খাদ্য ক্যালরি তিন ভাগে বিভক্ত। যথা_ ইফতারি, সন্ধ্যারাত এবং সেহরির সময় সঠিক বণ্টন করে খেতে পারলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক হয়। ইফতারির জন্য ভুনাবুট, পেঁয়াজু, বেগুনি, মুড়ি, ফল ইত্যাদি পরিমাণ মতো খাওয়া যায়। উলি্লখিত টক ফল, ডাবের পানি, চিনি ছাড়া লেবুর শরবত ইচ্ছামতো খেতে পারেন। সন্ধ্যারাতে ও সেহরির খাবার পরিমাণ মতো হতে হবে, তাতে মাছ, মাংস, ডাল, ভাজি, শাকসবজি, আটার রুটি বা ভাত সবই পরিমাণ মতো থাকতে পারে। কিন্তু চাই সঠিক পরিমাণ ও নিয়ন্ত্রিত খাবার, তবেই আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সফলতা আনতে পারেন। এ নিয়ন্ত্রণ আপাতদৃষ্টিতে কষ্টকর হলেও এর পেছনে আছে সুখ ও শান্তি।images (5)
রমজানে ডায়াবেটিক খাবার
খাবার যেন স্বাস্থ্যসম্মত হয় ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
ইফতার
* পানিশূন্যতা রোগ এবং শরীরে বিপাকক্রিয়ার জন্য শরবত একটি অপরিহার্য পানীয়। বিকল্প চিনি দিয়ে ইসবগুল, তোকমা, লেবু, কাঁচা আম বা তেঁতুল শরবত করে খাওয়া যেতে পারে।
* ডাব ছাড়া অন্যান্য মিষ্টি ফলের রস না খাওয়াই শ্রেয়।
* টক ও মিষ্টি উভয় ধরনের ফল দিয়ে সালাদ করে খেলে যেমন উপাদেয় হবে, তেমনি এতে খনিজ লবণ ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।
* কাঁচা ছোলার সঙ্গে আদা কুচি, টমেটো কুচি, পুদিনাপাতা ও লবণ মিশিয়ে খেলে বেশ সুস্বাদু হয়। কাঁচা ছোলা রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
* পানিশূন্যতার দিকে লক্ষ্য রেখে প্রচুর পানি খাবেন।
সন্ধ্যারাত
* ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সন্ধ্যারাতের খাবার একেবারেই বাদ দেওয়া উচিত নয়।
* অন্যান্য সময়ের রাতের খাবারের সমপরিমাণ হবে সন্ধ্যারাতের খাবার।
* সন্ধ্যারাতে ভাত খাওয়া যাবে। তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ বরাদ্দ খাবারের পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
* সন্ধ্যারাতে হালকা মসলায় রান্না করা যে কোনো ছোট-বড় মাছ এবং সবজি থাকলে ভালো হয়।
সেহরি
* সেহরিতে রুটি বা ভাত রুচি অনুযায়ী গ্রহণ করা যাবে।
* সেহরিতে খেতে হবে অন্যান্য দিনের দুপুরের খাবারের সমপরিমাণ।
* মাংসের পরিবর্তে ডিমও খাওয়া যেতে পারে।
* সেহরিতে দুধ খেলে ডাল খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
============================================

★ পোস্ট ভাল লাগলে লাইক ★ শেয়ার করে পেইজে একটিভ থাকুন

( প্রতি মুহুর্তের চিকিৎসা বিষয়ক খবর গুলো নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিন ) https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *