নাক বন্ধ হলে কি করবেন……..?

pic-25_44131
আমরা ফুসফুসে দুভাবে বাতাস নিতে পারি- নাক দিয়ে ও মুখ দিয়ে। তবে নাক নিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়াটাই স্বাভাবিক। কখনো অতিরিক্ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে বা নাক দিয়ে যথাযথ পরিমাণ বাতাস প্রবেশ করতে না পারলে নিঃশ্বাসের জন্য মুখও ব্যবহৃত হয়। নাক দিয়ে যখন বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করে তা নাকের ভেতরে থাকা ঝিল্লির মাধ্যমে কিছুটা পরিশোধিত হয়ে প্রবেশ করে। নাকের ভেতরে থাকে মিউকাস মেমব্রেন, যা তরল দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ভেজা থাকে। এই মেমব্রেনে খুব ক্ষুদ্রাকৃতির সিলিয়া থাকে, যা নাক দিয়ে প্রবেশ করা ময়লা ও ধুলাবালি ফুসফুসের দিকে যেতে বাধা দেয়। এরা ব্যাকটেরিয়া প্রবেশেও বাধা দেয়। প্রতিদিন একজন মানুষের নিঃশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ১০ হাজার লিটার বাতাস ছাঁকে নাক। এভাবে নাক ফুসফুস তথা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এ কারণেই নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া স্বাস্থ্যকর এবং নাক বন্ধ থাকা কিছু বিপদের কারণ।

কী কী কারণে নাক বন্ধ হতে পারে?379744_463677720390941_606490931_n

সাধারণত ঠাণ্ডা বা রাইনাইটিস হলে নাক বন্ধ হয়। যখন সর্দি লাগে, অনবরত পানি ঝরে, তখন নাকের ভেতরের মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ দেখা দেয়। ফলে মেমব্রেন ফুলে ওঠে এবং নাকের ভেতর দিয়ে বাতাস যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন প্রদাহ হয় তখন মিউকাস মেমব্রেন থেকে যে তরল নিঃসৃত হয় তা ঘন হয়ে বের হয়। এ কারণেও সর্দি-ঠাণ্ডায় নাক বন্ধ হয়।

যদি কোনো কারণে নাক এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ বা বন্ধ বন্ধ ভাব থাকে, তবে চিকিৎসক দেখিয়ে অবশ্যই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নাক বন্ধ থাকা কিছু জটিল রোগের লক্ষণও।

সর্দি-ঠাণ্ডার বাইরে আরো যেসব কারণে নাক বন্ধ হতে পারে তার মধ্যে আছে অ্যালার্জি, হে ফিভার, নাকের পলিপ, টিউমার। এ ছাড়া নাকের হাড় বাঁকা থাকলে, সাইনোসাইটিস হলে, শিশুদের নাকের পেছনে এডিনয়েড গ্রন্থি বড় হলেও নাক বন্ধ হতে পারে।

কিভাবে বুঝবেন নাক বন্ধ?581690_516900815022805_1202087701_n

স্বাভাবিকভাবে নাকের দুটি ছিদ্রের মধ্যে একটি সব সময় চালু থাকে। অন্যটি এ সময় আংশিক সচল থাকে। এভাবে একটি পুরোপুরি সচল ও অন্যটি আংশিক সচল অবস্থার পালাবদল ঘটে। কোনো কারণে এ প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটলে নাক দিয়ে স্বাভাবিক বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। কখনো নাকের দুটো ছিদ্রই বন্ধ থাকতে পারে, কখনো একটা (যেমন- নাকের হাঁড় বাঁকা হলে একপাশ বন্ধ হয়)। সর্দি-ঠাণ্ডায় যত সহজে নাক বন্ধ ভাব একজন মানুষ বুঝতে পারে অন্য রোগগুলোতে তত সহজে তা নাও বুঝতে পারে। যেমন- যাঁরা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন তাঁদের বেশির ভাগই জানেন না যে তাঁদের নাক ডাকার পেছনে একটা বড় কারণ হতে পারে নাক বন্ধ থাকা।

নাক বন্ধ হলেই কি চিকিৎসার প্রয়োজন?

নাক বন্ধ হলে অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন। বিশেষ করে কোনো কারণে এক সপ্তাহের বেশি সময় নাক বন্ধ থাকলে অবহেলা করা যাবে না। আবার সর্দি-ঠাণ্ডা না লেগে যদি নাক বন্ধ হয়, তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। প্রথমে কারণ বের করতে হবে কী কারণে নাক বন্ধ হয়েছে এবং অবশ্যই রোগের ইতিহাস জানতে হবে, ভালো হোমিওপ্যাখ ডাক্তারের চিকিৎসা নিন,

নাক বন্ধ দূর করার চিকিৎসা পদ্ধতিও খুব জটিল নয়।

কী ধরনের চিকিৎসা

স্বল্পমেয়াদি ঠাণ্ডা বা সিজনাল কোল্ডে যদি কারো নাক বন্ধ হয় আর তা যদি সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তবে কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। নাকের ঠাণ্ডা বেশি আকারে থাকলে অথবা ঠাণ্ডার সঙ্গে মাথাব্যথা থাকলে কিছু ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। এক মাত্র হোমিওপ্যাথ চিকিৎসা

উত্তমpic-25_44131

স্বল্পমেয়াদি ঠাণ্ডার কারণে যে নাক বন্ধ ভাব হয় তাতে অনেকে গরম পানির বাষ্পও টেনে উপকার পেয়ে থাকেন।

অনেকে মেনথলের বাষ্পও নেন। এ সময় কাগজি লেবুসহ ‘সি’ ভিটামিনসমৃদ্ধ ফল ও অন্যান্য টাটকা ফলমূল শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

নাকের হাড় বাঁকা থাকলে অপারেশন করে সারিয়ে তোলা সম্ভব। এ অপারেশনের নাম সেপ্টোপ্লাস্টি। খুব জটিল কোনো অপারেশন নয়। এ জন্য হাসপাতালে থাকারও সাধারণত প্রয়োজন হয় না।

কারো যদি সাইনোসাইটিসের সমস্যা থাকে, তবে সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ সাইনোসাইটিস একবার হলে বারবার হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ও নাকের স্প্রে দিয়ে এর চিকিৎসা করতে হয় আবার কখনো নাকের সার্জারিও লাগে। একে বলে এন্ট্রালওয়াস আউট।

ইদানীং সাইনোসাইটিসের নতুন একটি শল্য চিকিৎসা আমাদের দেশেও করা হচ্ছে। এটি এন্ডোসকপিক সাইনাস সার্জারি। এ অপারেশনে সানোসাইটিসের স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়।

অ্যালার্জি হলে রোগীর বারবার হাঁচি হয় ও নাক দিয়ে পাতলা পানি পড়ে। এ জন্য সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হলো যেসবে অ্যালার্জি হয় সেগুলো খুঁজে বের করা এবং এসব থেকে দূরে থাকা। সাধারণত ধুলাবালি, পোকামাকড়, ঠাণ্ডা, কিছু খাবার-দাবার যেমন- চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস, ডিম, বেগুন, পাকা কলা ইত্যাদির কারণে অ্যালার্জি হয়। এ ছাড়া ফুলের রেণু থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে। রোগীকে এসব অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকতে হবে।

অ্যালার্জি নিরাময় করা যায় না, তবে কিছু কষ্ট লাঘব করা যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজ থেকে শক্তিশালী হলে অ্যালার্জির প্রকোপ কমে যায়।sinus

কয়েকটি সাধারণ বিষয় মেনে চললে নাক বন্ধ অবস্থায় উপকার পাওয়া যায়। যেমন-

* দুধ ও দুধজাতীয় খাবার, দই-পনির-বাটার ইত্যাদি নাক বন্ধ অবস্থায় না খাওয়া ভালো। কারণ দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য মিউকাস নিঃসরণ বাড়ায়।

* রাতের বেলা ভারী খাবার কম খেতে হবে।

* খুব ঠাণ্ডা কোমল পানীয় বা পানি এড়িয়ে চলতে হবে।

* ধূমপান ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

জেনে রাখা ভালো

* নাকের ভেতর দিয়ে যখন বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করে তখন ফুসফুস কিছু বাষ্প দিয়ে সেই বাতাসকে হিউমিডিফাই বা আর্দ্র করে। ফলে ফুসফুস ও ব্রঙ্কিয়াল টিউবের গাত্র শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা পায়।

* শীতের সময় বাতাস নাকের ভেতর দিয়ে ফুসফুসে যাওয়ার সময় কিছুটা গরম হয়। এতে ফুসফুস ভালো থাকে।

* নাক বন্ধ থাকলে গন্ধ শনাক্ত করার ক্ষমতা কমে যায়। নাক বন্ধ থাকলে মানুষ মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়, এতে স্বাদগ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, খাবারে অরুচি হতে পারে।

* অ্যালার্জিজনিত নাক বন্ধ অ্যাজমার কারণ হতে পারে।

* উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যাঁরা ডাইইউরেটিক সেবন করেন তাঁদের মুখ ও নাকগহ্বর শুকিয়ে যায়। তাই নাক বন্ধ থাকলে এ ধরনের ওষুধ না খাওয়াই ভালো।

* মানসিক রোগ ও অ্যাংজাইটির কিছু ওষুধেও মুখ ও নাকগহ্বর শুষ্ক হতে পারে। এ ওষুধ সেবনকালে নাক বন্ধ হলে বাড়তি তরল পান করতে হবে।

* জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনে নাক বন্ধভাব বাড়তে পারে।

ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল

চাঁদপুর
01711-943435 //01670908547
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *